ভাস্কর্য সরানোর খবর বিদেশী মিডিয়ায়!

বৃহস্পতিবার রাতের অন্ধকারে ঢাকার সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে জাস্টিসিয়া ভাস্কর্যটি উপড়ে ফেলার পরে প্রতিবাদে ফেটে পড়েছেন বাংলাদেশের শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক জগতের মানুষ। পাশাপাশি, যে মৌলবাদী সংগঠনের দাবি মেনে এই সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছে, সেই হেফাজতে ইসলামি শুক্রবার তাদের জয়ের জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ধন্যবাদ দিয়েছে। একই সঙ্গে তারা ঘোষণা করেছে, রাজধানী ঢাকা-সহ বাংলাদেশের সর্বত্র সব ধরনের মূর্তি ও ভাস্কর্য এ বার ভেঙে ফেলতে হবে। নতুন কোনও ভাস্কর্য বসানোও চলবে না।

বিক্ষোভ এড়াতে কাল মধ্যরাতকে বেছে নেওয়া হয়েছিল মূর্তি সরানোর ক্ষণ হিসেবে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়া ও টেলিভিশন চ্যানেলে খবর ছড়িয়ে পড়া মাত্র ছাত্র ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলির কর্মীরা সুপ্রিম কোর্টের সামনে জড়ো হয়ে বিক্ষোভে ফেটে পড়েন। তাঁরা স্লোগান দেন, মৌলবাদের কাছে মাথা নোয়ানো চলবে না, বাংলাদেশকে পাকিস্তান করার চক্রান্ত বন্ধ হোক। সকালে সে বিক্ষোভ বড় আকার নেওয়ায় লাঠি, কাঁদানে গ্যাস ও রবার বুলেট ছুড়ে পুলিশ তা ভেঙে দেয়। জনা ২৫ বিক্ষোভকারী জখম হয়েছেন। ৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিক্ষোভের মধ্যেই ভারতীয় সময় রাত সাড়ে তিনটে নাগাদ মূর্তিটি ক্রেনে করে একটি ট্রাকে তুলে সরিয়ে নেওয়া হয়। আপাতত সেটি কোর্টের অ্যানেক্স বিল্ডিংয়ের সামনে রাখা হয়েছে। শাসক দল আওয়ামি লিগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের দাবি করেছেন, সরকার নয়, প্রধান বিচারপতির নির্দেশেই ডিসেম্বরে ভাস্কর্যটি বসানো হয়েছিল, সরানোর সিদ্ধান্তও তিনিই নিয়েছেন। হেফাজতে ইসলামি এই ভাস্কর্যটি সরানোর দাবি করার পরে তাদের নেতা আল্লামা শফির উপস্থিতিতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সম্প্রতি জানিয়েছিলেন, তিনিও চান এটি সরিয়ে ফেলা হোক।

অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম জানিয়েছেন, এর পর আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে ভাস্কর্যটি সরিয়ে ফেলার সিদ্ধান্ত নেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্রকুমার সিন্হা। বিএনপি এ জন্য তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন। রাতেই খবর পেয়ে সুপ্রিম কোর্ট চত্বরে যান ভাস্কর মৃণাল হক। সংবাদ মাধ্যমের সামনে কান্নায় ভেঙে পড়ে তিনি বলেন, ওপড়াতে গিয়ে ভাস্কর্যটি যাতে ভেঙে না যায়, তাই নিজেই তদারকিতে এসেছেন। এর আগে তাঁর তৈরি লালন ভাস্কর্য মৌলবাদীরা গুঁড়িয়ে দিয়েছে। মৃণাল বলেন, আমার বুক ফেটে যাচ্ছে। দেশ কোন দিকে যাচ্ছে জানি না!