ভোটে হেরে সুপ্রিয়ার আত্মহত্যা

জীবনে অনেক সময় কাঙ্ক্ষিত কোনো বস্তু পেতে গিয়েও পাওয়া হয় না। এই ধরুন, ক্রিকেট খেলায় জিততে গিয়েও একরানের ব্যবধানে পছন্দের দলের পরাজয়; লটারিতে আপনার টিকিটের নম্বরের আগে পরের কেউ একজন বিশাল অঙ্কের টাকা পেয়ে গেল। কী খারাপটাই-না লাগে সেসময়।

আর সেটা যদি হয় নির্বাচন। তাহলে তো সেই উত্তেজনা বেড়ে যায় বহুগুণে। পছন্দের কোনো প্রার্থী হেরে গেলে অনেক সময় মেনে নেয়া কষ্টকর হয়ে পড়ে। আর প্রার্থী নিজে যদি মাত্র ৩০ ভোটে হেরে যান, তাহলে তার কেমন লাগে একবারও কি ভেবে দেখেছেন?

কিন্তু ভারতের নদীয়া জেলায় ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে ৩০ ভোটে হেরে স্বতন্ত্র প্রার্থী সুপ্রিয়া দে যে এমন কাণ্ড করে বসবেন, তা হয়তো কেউ কল্পনা করতেই পারেনি।

নিজের হার আঁচ করতে পেরে ভোট গণনা কেন্দ্র থেকে বাড়ি ফিরেই সুপ্রিয়া দে ঘুমের অনেকগুলো ট্যাবলেট খেয়ে ফেলেন। তারপর প্রথমে রানাঘাট মহকুমা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় সুপ্রিয়াকে। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় কল্যাণীর জেএনএম হাসপাতালে। কিন্তু শেষরক্ষা হয়নি, না ফেরার দেশে চলে গেছেন তিনি।

তার মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে বিজয়ী প্রার্থীর সমর্থকদের উল্লাসও থেমে যায়। নির্বাচনে জয় পাওয়া সত্ত্বেও শোকে মুহ্যমান কুপার্সের তৃণমূল কর্মীদের অনেকেই।

রানাঘাট উত্তর-পশ্চিমের বিধায়ক শঙ্কর সিংহ দৃশ্যতই বিপর্যস্ত সুপ্রিয়ার মৃত্যুর খবরে। তিনি বলেন, অত্যন্ত দুঃখের খবর। ভাবতেই পারিনি, এমন কিছু ঘটে যাবে। এখন সবার আগে সুপ্রিয়ার পরিবারের পাশে দাঁড়ানো দরকার। আমরা সব রকম ভাবে তার পরিবারের পাশে থাকব।

টানা ১০ বছর কাউন্সিলর ছিলেন সুপ্রিয়া। ২০০৭ এবং ২০১২ সালের নির্বাচনে পর পর দু’বার কুপার্সের ১ নম্বর ওয়ার্ড থেকে বিপুল ভোটে জিতেছিলেন সুপ্রিয়া দে। তখন তিনি কংগ্রেস করতেন। বরাবরই সুপ্রিয়া ছিলেন শঙ্কর সিংহের ঘনিষ্ঠ, সেই সুবাদে প্রদেশ কংগ্রেসের অভ্যন্তরীণ সমীকরণে দীপা দাশমুন্সির বৃত্তে ছিলেন তিনি।

নিজের এলাকায় জনপ্রিয় নেত্রী সুপ্রিয়ার সাজপোশাকেও দীপা দাশমুন্সির ছাপ ছিল স্পষ্ট। কপালে বড় টিপ, নজরকাড়া শাড়ি, অল্প গহনা পরতেন।

২০১২ সালেও কংগ্রেসের হয়ে লড়েছেন। তবে অল্পদিন পরেই দল বদলে তৃণমূলে চলে যান সুপ্রিয়া। সেই থেকে তৃণমূলে থাকলেও এবারের নির্বাচনে দল থেকে টিকিট পাননি তিনি।

পরে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচনে লড়েন সুপ্রিয়া। একা লড়ে মাত্র ৩০ ভোটে হেরে যাওয়ার ধাক্কা সামলাতে না পেরে আত্মহত্যা করলেন তিনি।