ভয়াল ২১ আগস্ট : সেদিনের গ্রেনেড ছিল পাকিস্তানের

২০০৪ সালের ২১শে আগস্টের গ্রেনেড হামলা মামলার তদন্তের ভার পড়েছিল সিআইডির সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) মুন্সি আতিকুর রহমানের উপর। কিন্তু আলোচিত ‘জজ মিয়া নাটকের’ পর এখন এই মামলার অন্যতম আসামি তিনি। বর্তমানে জামিনে থাকা সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা গ্রেনেড হামলার নানা বিষয়ে কথা বলেছেন একটি গণমাধ্যমের সাথে। গ্রেনেড হামলার পরদিন রাজধানীর মতিঝিল থানায় হত্যা ও বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে দুটি মামলা করা হয়।

প্রথমে মতিঝিল থানার এসআই আমীর হোসেন ও পরে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক শামসুল ইসলাম এই মামলার তদন্ত করেন।

পরে তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবরের নির্দেশে মামলাটি সিআইডি পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

তদন্তের দায়িত্ব পেয়েই সিআইডির মুন্সী আতিক আওয়ামী লীগ নেতাসহ ২০ জনকে আটক করেছিলেন।

২০০৫ সালের ৯ জুন নোয়াখালী থেকে জজ মিয়াকে গ্রেফতার করে মালিবাগে সিআইডি অফিসে এনে আর্থিক লোভ ও ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতেও বাধ্য করা হয়।

জজ মিয়াকে গ্রেফতারের পরদিন নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে দুই ভায়রা আবুল হাশেম রানা ও শফিকুল ইসলামকেও ধরে এনে একইভাবে জবানবন্দি দিতে বাধ্য করা হয়।

এসবের ভিত্তিতে ২০০৫ সালের ২ অক্টোবর ১১ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অনুমতি চান মুন্সী আতিক।

এনিয়ে আওয়ামী লীগের আপত্তিতে সিআইডির এএসপি আবদুর রশীদকে তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয়। ঢাকা মেট্রোর তৎকালীন দায়িত্বে থাকা বিশেষ পুলিশ সুপার রুহুল আমিনও তদন্তে ছিলেন।

বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার ফজলুল কবীরকে পূর্ণ তদন্তের দায়িত্ব দিলে ‘জজ মিয়া নাটক’ বেরিয়ে পড়ে, সমালোচিত হন ওই তিন পুলিশ কর্মকর্তা।

তবে এ ঘটনায় নিজের দায় নিতে রাজি নন মুন্সি আতিক।

তিনি বলেন, আমি খুব সাময়িক সময়ে মামলাটির তদন্তের দায়িত্বে ছিলাম, এছাড়া আমার আগে আরও দুইজন মামলাটি তদন্ত করেছেন।

তিনি বলেন, আমি ঘটনার দেড় বছর পর ২৪ ডিসেম্বর (২০০৫) মামলার তদন্তের দায়িত্ব পাই। জজ মিয়াকে এর আগেই ধরা হয়। ধরার পর ২৬ জুন তার জবানবন্দি আদায় করা হয়। সেটি আমি তদন্তে যাওয়ার আগে, আমি তখন তদন্তেই ছিলাম না।

এ মামলার তদন্ত শেষে ২০০৮ সালের ১১ জুন সাবেক উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টু, মুফতি হান্নানসহ ২২ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দেওয়া হয়।

আর ২০০৯ সালের ৩০ মার্চ পল্টন মডেল থানায় ‘মামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে প্রবাহ, জোরপূর্বক জজ মিয়া, আবুল হাশেম রানা ও শফিকুল ইসলামকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে বাধ্য করাসহ মামলার আলামত নষ্টের’ অভিযোগে সিআইডির ওই তিন কর্মকর্তাকে আসামি করে মামলা করেন এ মামলার চার্জশিট দাখিলকারী কর্মকর্তা ফজলুল কবীর।

সিআইডির আরেক জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার রওনকুল হক চৌধুরী মামলাটির তদন্তে থাকলেও পরে মূল মামলায় অভিযুক্তরা আসামি হওয়ায় এ তদন্ত আর এগোয়নি।

এ মামলায় আসামি হওয়ার বিষয়ে মুন্সি আতিক বলেন, ২১ আগস্টের মামলায় কেন আমাকে আসামি করা হলো তা জানি না। কাউকে আমি ধরলামই না, কারো স্টেটমেন্টই নিলাম না; এরপরও আমি হয়ে গেলাম আসামি।

এই মামলার আলোচিত চরিত্র জজ মিয়া এখনো ‘পলাতক আসামির’ মতো কষ্টে দিনযাপন করছেন। আর এ ঘটনায় বিতর্কিত হয়ে জামিনে থাকা সাবেক এই পুলিশ কর্মকর্তা বর্তমানে ঢাকা ও ফরিদপুরে থাকেন, পাশাপাশি ব্যক্তিগত ব্যবসা সামলান।

এদিকে ২১ শে আগস্টের অধিক উচ্চমাত্রার গ্রেনেডের উৎস সম্পর্কে জানতে চাইলে প্রথমে মন্তব্য করতে রাজি হননি মুন্সি আতিক।

পরে তিনি বলেন, আসামিদের তথ্য অনুযায়ী যেটুকু জেনেছি; এগুলো চট্টগ্রাম দিয়ে এসেছে। বাইরে থেকে এসেছে, আমাদের দেশে এগুলো হয় না।

তিনি বলেন, ভারতেও এই ধরণের গ্রেনেড হয় না। পাকিস্তানে হয়, সেখান থেকেই চট্টগ্রাম হয়ে গ্রেনেডগুলো দেশে ঢুকেছে। এটি আসামিদের তথ্যে জানা গেছে।

মুন্সিক আতিক বলেন, আর্জেস গ্রেনেড ৮৫ ও ৮৪ কেবল পাকিস্তান ও অস্ট্রিয়াতে তৈরি হয়। এর মধ্যে আর্জেস ৮৫ পাকিস্তানের তৈরি, আর আর্জেস ৮৪ অস্ট্রিয়াতে তৈরি হয়। এ বিষয়ে আরও ভাল বলতে পারবেন বর্তমানে যিনি তদন্তে আছেন।

নিজেকে একজন সফল কর্মকর্তা দাবি করে মুন্সী আতিক বলেন, কোটালীপাড়ায় শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টার রায় হলো, সেখানে আমি ১৫ জনের নামে চার্জশিট দিয়েছিলাম। এর মধ্যে ১০ জনের ফাঁসি, ২ জনের যাবজ্জীবন, ১ জনের ১৪ বছরের জেল হয়েছে। আর মুফতি হান্নানের অন্য মামলায় ফাঁসি হওয়ায় তাকে বাদ দেওয়া হয়েছে। তিনি আরো বলেন, আমার সব তদন্তই সফল। দুই জজ হত্যা মামলা, মুফতি হান্নানের ফাঁসি; সবক্ষেত্রেই আমি সফল। কিন্তু কেন আমাকে এই মামলায় (২১শে আগস্ট) আসামি করা হলো সেটি জানি না। প্রতিবেদন পরিবর্তন এর সৌজন্যে প্রকাশিত।