মমতার চীন সফর আটকে দিলেন মোদি

ভারতের ক্ষমতাসীন বিজেপি সরকারের সঙ্গে মমতার দ্বন্দ্ব এখন রাজনীতিতে সীমাবদ্ধ নেই। কেন্দ্র সরকার মমতাকে নিয়ন্ত্রণে আনতে এবার রাষ্ট্রশক্তি ব্যবহার করেছে। আগামী জুন মাসে চীন যাওয়ার মমতার সরকারি সফর শেষ মুহূর্তে আটকে দিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফলে কেন্দ্রের সঙ্গে মমতার তিক্ততা আরো বাড়তে পারে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।

ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর বলছে, চীনের পক্ষ থেকে সরকারি সফরে দেশটিতে যাওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। কেন্দ্র সরকারের অনুমতি নিয়ে চীন যাওয়ার প্রস্তুতিও সেরে ফেলেছিলেন মমতা। কিন্তু হঠাৎ করেই ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মমতার সফরে অনাপত্তি প্রত্যাহার করে নেয়া হয়। মমতাকে জানিয়ে দেয়া হয়, চীন সফরে কেন্দ্রীয় সরকার তাকে ছাড়পত্র দিচ্ছে না।

ভারতের পশ্চিমবঙ্গের রাজধানী কলকাতা এবং চীনের ইউনান প্রদেশের কুনমিংকে ‘সিস্টার সিটি’ বলা হয়। একই ভৌগলিক রেখায় অবস্থিত শহরটি দুই দেশে দুই নামে পরিচিত। এজন্য স্বাভাবিকভাবেই মমতা আগ্রহী ছিলেন এই সফরে। তাছাড়া গত এক বছরে পশ্চিমবঙ্গে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ দেখিয়ে আসছে চীন। এ বছরের শুরুতে কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গ সরকার আয়োজিত বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিটে চীনের বড় ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধি দল যোগ দিয়েছিলেন। সে সময়ে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সম্পর্ককে আরো উন্নত করার লক্ষ্যে মমতাকে সরকারিভাবে চীন সফরেআমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল দেশটির পক্ষ থেকে।

এ বিষয়ে মমতা নিজেই সাংবাদিকদের জানিয়েছিলেন, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি আমাদের পার্টিকে চীন সফরে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। এর আগেও আমাকে কয়েকবার আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। বাংলায় বিনিয়োগ করতে বিশেষ আগ্রহী চীন। আর তাই চলতি বছরের জুনে চীন সফরে আমরা যেতে পারি।

চীনের কলকাতাস্থ কনসাল জেনারেল মা ঝাংয়ু আলাদাভাবে মমতাকে জিয়াংজু ও প্রদেশ সফরেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন। বাংলার সঙ্গে চীনের ঐতিহাসিক সম্পর্ক দীর্ঘদিনের। কলকাতায় চীনের অনেক মানুষ দীর্ঘদিন ধরে বসবাস করছেন। কলকাতার চায়না টাউন বলে পরিচিত অঞ্চলের উন্নয়নে রাজ্য সরকার অনেক কাজও করেছে। বাম ফ্রন্টের ৩৪ বছরের শাসনামলে চীনের কমিউনিস্ট পার্টির প্রতিনিধিরা ঘন ঘন পশ্চিমবঙ্গ সফর করেছেন। তেমনি ভারতের কমিউনিস্ট পার্টি মার্কসবাদীর নেতারাও নিয়মিত চীন সফর করে আসছেন।

এবার মমতার চীন সফরে বাংলায় বিনিয়োগের আশা করেছিল পশ্চিমবঙ্গ সরকার। কিন্তু চীনের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্কেরতিক্ততার পরিপ্রেক্ষিতে মমতার চীন সফর নিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শঙ্কায় রয়েছে বলে সূত্র জানিয়েছে। শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পরামর্শে মমতার সফর ঠেকিয়ে দিয়েছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সূত্র উল্লেখ করে কয়েকটি গণমাধ্যম এ সংবাদ প্রকাশ করেছে।

ভারত সরকারের কেন্দ্রীয় আইন অনুযায়ী, দেশটির কোনো মন্ত্রী, সংসদ সদস্য বা আমলাদের সরকারিভাবে বিদেশ সফরে যেতে হলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে অনাপত্তি পত্র (এনওসি) নিতে হয়। জওহর লাল নেহেরুর সময়ে এই আইন ছিল না। পরবর্তীতে ইন্দিরা গান্ধী ক্ষমতায় এসে আইনটি করেন।

সাম্প্রতিক সময়ে অরুণাচলে তিব্বতি ধর্মগুরু দালাই লামার সফর, অরুণাচলের বিতর্কিত সীমানা ইস্যুতে চীনের সঙ্গে ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক তলানিতে গিয়েছে ঠেকেছে। এজন্য চীন নিয়ে কঠোর অবস্থান নিয়েছে ভারত সরকার। আগামী মাসে চীনে ‘ওয়ান বেল্ট ওয়ান রোড’ শীর্ষক মেগা-প্রকল্পের সম্মেলনে যাওয়ার আমন্ত্রণও প্রত্যাখ্যান ভারত সরকার করেছে। তিস্তা ও নারদ ইস্যু নিয়ে মমতার সঙ্গে বনিবনা হচ্ছে না বিজেপি সরকারের। এমন সময়ে মমতার চীন সফরকে ভালোভাবে দেখছে না বিজেপি সরকার। তাই নতুন বিতর্ক ঠেকাতে স্পষ্টভাষী মমতার সফরই আটকালো দিল্লি।

তবে, এ ঘটনার রেশ এখানেই শেষ হবে কি-না তা সময়েই বলে দিবে।