‘মসজিদে’ মেম্বারকে পিটিয়ে রক্তাক্ত করল ছাত্রলীগ

সুনামগঞ্জে রঞ্জিত সূত্রধর নামের এক ইউপি সদস্যকে ‘মসজিদের ভেতর’ পিটুনি দিয়ে গুরুতর আহত করেছে ছাত্রলীগ কর্মীরা।

মঙ্গলবার বিকালে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ উপজেলার পাগলাবাজারের কান্দিগাঁও জামে মসজিদে এঘটনা ঘটে।

জেলার পাগলাবাজারে জেলা আওয়ামী লীগ নেতা কর্তৃক সরকারি অর্থে নির্মিত একটি কালভার্টের গুণগত মান নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়ায় এ হামলার ঘটনা ঘটে।

পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের ৬নম্বর ওয়ার্ডের ওই সদস্যকে স্থানীয় জনতা মসজিদের ভেতর থেকে গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে।

জানা গেছে, সোমবার বেলা আড়াইটায় ইউপি সদস্য রঞ্জিত জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল আলম নিক্কু কর্তৃক সদ্য নির্মিত একটি কালভার্টের গুণগত মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে তার ফেসবুক একাউন্টে লেখেন, ‘ধলার হাওরে অ্যাডভোকেট রাধাকান্ত সূত্রধর দাদার বাড়ির দক্ষিণে নির্মিত এই কালভার্টটি নির্মাণের এক মাসের মাথায় কংক্রিট, বালু, পাথর, রড উঠে যাচ্ছে। এই কাজের ঠিকাদার হচ্ছেন আমাদের পশ্চিম পাগলা ইউনিয়নের দুইবারের সাবেক জননন্দিত চেয়ারম্যান জনাব রেজাউল আলম নিক্কু। আমি বিষয়টির প্রতি ইউএনও স্যার, পিআইও স্যারসহ সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

স্থানীয় সূত্র জানায়, মঙ্গলবার সকালে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান রেজাউল আলম নিক্কুর নিকট আত্মীয় ও সুনামগঞ্জ দক্ষিণ উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশের আহ্বায়ক মনসুর আলম সুজন ইউপি সদস্য রঞ্জিতকে ফেসবুক স্ট্যাটাট তুলে নেয়ার জন্য হুমকি দেন।

কিন্তু তার কথামতো স্ট্যাটাস মুছে না ফেলায় বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে পাগলাবাজারে রঞ্জিতকে একা পেয়ে ৭-৮ জন ছাত্রলীগ কর্মীকে সঙ্গে নিয়ে ইউপি সদস্য রঞ্জিতের ওপর হামলা চালান মনসুর।

আত্মরক্ষার্থে রঞ্জিত বাজারের কান্দিগাঁও জামে মসজিদে দৌড়ে প্রবেশ করেন। কিন্তু এসময় হামলাকারীরা মসজিদে ঢুকে লোহার রড, কাঁচি ইত্যাদি দেশীয় অস্ত্র দিয়ে তাকে বেধড়ক পিটিয়ে আহত করেন। পরে স্থানীয়রা ইউপি সদস্য রঞ্জিতকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়।

উপজেলা ছাত্রলীগের একাংশের আহ্বায়ক মনসুর আলম সুজন বলেন, ‘ফেসবুক স্ট্যাটাস মুছে ফেলার জন্য সকালে আমি ইউপি সদস্য রঞ্জিতকে অনুরোধ করেছিলাম। কিন্তু তিনি তা শুনেনি। বলেছিলাম- বিকালে বিষয়টি শেষ করতে আবার আসব। বিকালে আমরা বাজারে তার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। তার আগেই বাচ্চারা তাকে মেরেছে।’

মসজিদে ঢুকিয়ে মারা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইউপি সদস্য ভয়ে মসজিদে ঢুকেছেন। মসজিদের ভেতর তাকে মারা হয়নি।’

জেলা আওয়ামী লীগ নেতা ও ঠিকাদার রেজাউল আলম নিক্কু বলেন, ‘ইউপি সদস্য রঞ্জিতের ফেসবুকের পোস্ট নিয়ে এলাকায় প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। এটি ভাইরাল হয়ে যায়। আমার আত্মীয়দের অনেকেই এ বিষয়টি নিয়ে উত্তেজিত হয়ে পড়ে।’

তিনি বলেন, ‘মঙ্গলবার দুপুরের দিকে দুজন ছাত্রলীগ কর্মী ও আমার ভাগ্নে পোস্টটি ডিলিট করার জন্যে অনুরোধ জানালেও রঞ্জিত তা ডিলিট করেনি। বিকালের দিকে আমি ঘুমিয়েছিলাম; শুনলাম- আমার গোষ্ঠীর লোকেরা তাকে বাড়ি যাওয়ার রাস্তায় পেয়ে পথে মারধর করেছে। ঘটনাটি শুনে আমি সঙ্গে সঙ্গে তা মিটমাটের চেষ্টা চালিয়েছি।’

মসজিদে মারধরে ব্যাপারের তিনি বলেন, ‘সে প্রাণভয়ে মসজিদ ঢুকে পড়লে সেখানেও মারধরের অভিযোগ করা হচ্ছে। ঘটনাটি সত্যি হলে এটা খুবই দুঃখজনক। এটা অবশ্যই চরম অন্যায় কাজ। তবে মসজিদে তাকে মারধর করা হয়নি বলে জেনেছি।’

এ বিষয়ে স্থানীয় ইউপি (পশ্চিম পাগলা) চেয়ারম্যান নূরুল হক বলেন, এলাকার একটি ব্রিজের কাজ নিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেয়াকে কেন্দ্র করে এ ঘটনাটি ঘটেছে। ব্রিজের কাজের ঠিকাদার ছিলেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা ও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান রেজাউল আলম নিক্কু।

তিনি বলেন, এনিয়ে নিক্কুর আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হলে তারা সন্ধ্যায় রঞ্জিতের ওপর হামলা চালায়। হামলার একপর্যায়ে রঞ্জিত পার্শ্ববর্তী মসজিদে ঢুকে পড়লে হামলাকারীরা তাকে সেখান থেকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে বেধড়ক পেটায়।

নুরুল হক আরও বলেন, এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ এলাকার শান্তি যাতে বিঘ্নিত না হয় সেদিকে সচেষ্ট আছেন। আমরা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্যরা তাদেরকে সহযোগিতা দিয়ে যাচ্ছি।

এ ঘটনায় পশ্চিম পাগলা ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে নিন্দাও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে দক্ষিণ সুনামগঞ্জ থানার ওসি আল আমীন বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। হমলায় ইউপি সদস্য আহত হয়ে সিলেট ওসমানী হাসপাতালে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে জেনেছি। এখন পর্যন্ত (রাত ৯টা) কোনো অভিযোগ পাওয়া যায়নি। অভিযোগ পেলে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।