মাগুরা ফায়ার সার্ভিসের ভবনের ছাদে ফাটল : দুর্ঘটনা এড়াতে বাঁশের খুঁটি

মাগুরা প্রতিনিধি : অগ্নিকান্ড, সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন দুর্যোগ মোকাবেলা করে বিপন্ন মানুষকে দুর্যোগমুক্ত করতে ফায়ারম্যানরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করলেও মাগুরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের পুরনো দোতলা ভবনের বিভিন্ন জায়গায় ফাটল দেখা দেয়ায় তাদের জীবনই এখন ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

সরেজমিনে দেখা গেছে, ভবনটির ছাদ, কার্নিশসহ বভিন্ন অংশে ফাটল দেখা দেয়ায় দুর্ঘটনা এড়াতে একাধিক বাঁশের খুঁটি দিয়ে ঠেকিয়ে রাখা হয়েছে। ভবনটির দুরাবস্থার কারণে মাগুরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশনের কর্মকর্তা কর্মচারীরা ভয়াবহ দুর্ঘটনার আশংকায় আতংকগ্রস্ত থাকেন সব সময়। কিন্তু বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় ৪৯ বছর আগে নির্মিত ঝুঁকিপূর্ণ এ ভবনটিই ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। ভবনটির নীচতলায় রয়েছে ষ্টেশন অফিসারের অফিস কক্ষসহ, ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি রাখার জায়গা এবং দ্বিতীয় তলায় রয়েছে এখানকার কর্মকর্তা এবং স্টাফদের ব্যারাক যেখানে নিয়মিতভাবে বসবাস করতে বাধ্য হন ২৬জন মানুষ। ভবনটির ব্যারাকে বসবাসকারীদের মধ্যে রয়েছেন একজন সাব-অফিসার, ১৭জন ফায়ারম্যান, তিনজন টিম লীডার গাড়ির চালকরা। এই কক্ষের পাশের দু’টি কক্ষ ব্যবহৃত হয় যথাক্রমে খাবার ঘর এবং রান্নাঘর হিসেবে।

দ্বিতীয় তলায় উঠতেই দেখা গেল যে, এখানকার প্রত্যেকটি কক্ষের দেয়াল এবং ছাদের পলেস্তোরা খসে পড়ে রড বেরিয়ে গেছে বিভিন্ন জায়গায়। শুধু তাই নয়, দ্বিতীয় তলার ছাদসহ এবং কার্নিশে বড় বড় ফাটল দেখা দিয়েছে। বৃষ্টি হলেই ব্যারাকের রান্নাঘরসহ বিভিন্ন জায়গার ছাদ থেকে পানি চুইয়ে পড়তে শুরু করে। বৃষ্টির পানি থেকে রক্ষা পেতে সেখানে পলিথিন ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা। বর্তমানে অবস্থা এমন যে, যেকোন সময় এখানকার ভবনটি ধ্বসে পড়ে ঘটতে পারে ভয়াবহ দুর্ঘটনা পারে যা ব্যারাকে বসবাসকারী ফায়ারম্যানসহ অফিস ভবনে অবস্থানকারী ফায়ারম্যানসহ কর্মকর্তাদের প্রাণহানির কারণ হতে পারে।

মাগুরা গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, মাগুরা ফায়ার সার্ভিস ষ্টেশনের এই দোতলা ভবনটি নির্মিত হয় ১৯৬৮ সালে। নির্মাণের পর থেকে রং করা ছাড়া ভবনটির যথাযথ সংস্কার হয়নি কখনোই। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে ক্রমেই এর অবকাঠামো দূর্বল হয়ে ভবনটি বর্তমানে ধসে পড়ার মত অবস্থায় পৌঁছেছে।

মাগুরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ষ্টেশন অফিসার মনিরুজ্জামান বললেন, ”ভবনটির ভগ্নদশা বেশ কয়েক বছর যাবৎ। আমরা কয়েকবার লিখিতভাবে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করার পর গত বছর ২০১৬ সালে গণপূর্ত বিভাগের একটি দল পরিদর্শন শেষে ভবনটিকে ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করলেও অদ্যাবধি সংস্কারের কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি। বিকল্প কোন ব্যবস্থা না থাকায় জীবনের ঝূঁকি নিয়েই তারা ভবনটি ব্যবহার করতে বাধ্য হচ্ছি’।

জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুর্গত ও বিপন্ন মানুষকে উদ্ধার করতে কাজ করি আমরা, আজ আমাদের জীবনই এখন ঝুঁকিপূর্ণ। এভাবেই আক্ষেপ করে সাংবাদিকদের কাছে চরম আতংক এবং অসহনীয় দুর্ভোগের কথা জানান মাগুরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স স্টেশন ব্যারাকে বসবাসরত ফায়ারম্যান আব্দুল কাদির। তিনি আরো বলেন,‘আমরাও মানুষ আমাদের স্ত্রী-সন্তান,পরিবার আছে তাদেরও প্রতি মূহুর্ত কাটাচ্ছে দুশ্চিন্তায়। ভাড়া বাসায় বসবাস করার সামর্থ থাকলে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ব্যারাকে থাকতাম না’।

ফযার সার্ভিস স্টেশন নতুন ভবন নির্মাণের বিষয়ে জানতে চাইলে মাগুরা গণপূর্ত বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রদীপ কুমার বসু মাগুরা ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স ভবনটির ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থার কথা স্বীকার করে বললেন, ”আমাদের পাঠানো লিখিত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে গণ পূর্ত অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে নতুন ভবন নির্মাণের লক্ষ্যে ’ডিজাইন ডিভিশন’-এর একটি টিম ভবনটিসহ ভবন এলাকা পরিদর্শন করে গেছে। আর্থিক বরাদ্দ পেলেই নতুন ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করব”।