মামলা নিতে বনানী থানার গাফিলতি পায়নি কমিটি

রাজধানীর বনানীর রেইন ট্রি হোটেলে বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া দুই তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনায় মামলা নেয়ার ক্ষেত্রে গাফিলতির প্রমাণ মেলেনি। তবে কিছু অসঙ্গতি বা ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনার (ডিএমপি) মো. আছাদুজ্জামান মিয়া।

তিনি বলেছেন, মামলা নিতে কেন দেরি হয়েছিল ও দায়িত্বে কোনো অবহেলা ছিল কি না- তদন্ত শেষে সে বিষয়ে গতকালই প্রতিবেদন জমা দিয়েছে কমিটি।

সোমবার দুপুরে ডিএমপি সদর দফতরে নিজ কার্যালয়ে উপস্থিত সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন আছাদুজ্জামান মিয়া।

একইসঙ্গে এ ঘটনায় খুব দ্রুত চার্জশিট দেয়া হবে বলেও জানিয়েছেন ডিএমপি কমিশনার।

ধর্ষণের শিকার দুই তরুণীর একজনের অভিযোগ ছিল, ‘ধর্ষণের মামলা করতে গিয়ে মনে হচ্ছিল আরও কয়েকবার ধর্ষিত হচ্ছি। পুলিশ বারবার একই ঘটনা (ধর্ষণের) শুনতে চাইছিল। অথচ অ্যাটেনটিভলি (মনোযোগ দিয়ে) শুনছিল না। গুরুত্বও দিচ্ছিল না।’

তিনি বলেছিলেন, ‘আমাদের এক কথা বারবার বলতে হচ্ছিল। বারবার ওরা (পুলিশ) ইনফরমেশন মিস করছিল। অনেকবার শোনার পরে একপর্যায়ে বললেন, এসব কথা লিখতে হবে। আমরা স্টেটমেন্ট লিখলাম। এরপরে বললেন, আপনারা আজ চলে যান, আমরা তদন্ত করব, যদি দেখি ওরা অপরাধী তাহলে আমরা মামলা নেব।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে ওই তরুণী বলেছিলেন, ‘পরদিন ডেকে আবার একই ঘটনা আবারও জিজ্ঞেস করেছে পুলিশ। বলেছে, এটা এটা আপনারা বলেন নাই, আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি। তখন আমরা বলছি, আমরা কোনো জিনিস বাদ দেই নাই। আপনারা মিস করেছেন, কারণ, আপনারা ইম্পর্টেন্স (গুরুত্ব) দেননি। আবার ডেকে আনছেন একই ঘটনা বলার জন্য।’

থানার অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘পরদিন রাতে আমাদের ডাকা হলো, মামলার কপি দেয়ার জন্য। যাওয়ার পরে পুলিশ আমাদের আটকে দেন। আমাদের বলা হলো- ছবি তুলতে হবে। আমরা তো ব্যাপারটা ভয় পাই- ছবি তুলব, আবার কী হয় না হয়। তখন আমরা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে ফোন করে বিষয়টি জানাই। আমরা বলেছি ছবি তুলব না। সেখানে কয়েকজন মহিলা পুলিশ ছিলেন, তারা আমোদের সঙ্গে রুঢ় হয়ে বলেন- এখনই ছবি তুলতেই হবে।

আমরা ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারের মিলি আপুকে জানাই। ভিকটিমদের থানায় থাকতে হবে এমন কোনো রুলস নেই বলে জানান তিনি। পরে অবশ্য আমাদের থানায় না রেখে ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।’

ওই তরুণী বলেছিলেন, ‘আমরা প্রথমে যেদিন গিয়েছিলাম, সেদিন শুরুতে বেশ ভাল ব্যবহার করেছিল। আমরা অনেক সাহস পেলাম। কিন্তু আস্তে আস্তে তারা অন্যরকম আচরণ শুরু করে। হয়ত অভিযুক্তরা প্রভাবশালী জানার পর থেকে… শুনেছি তারা টাকাও খেয়েছে অনেক।’

সোমবার ডিএমপি কমিশনার বলেন, দুই তরুণী ধর্ষণের ঘটনায় বনানী থানা পুলিশের গাফিলতি তদন্তে কমিটি গঠন করা হয়েছিল। কমিটি গতকাল তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী বনানী থানা পুলিশের গাফিলতি নয় তবে কিছু ত্রুটি-বিচ্যুতি পাওয়া গেছে।

কমিশনার বলেন, আসামিরা সবাই গ্রেফতার হয়েছেন। জিজ্ঞাসাবাদে তারা ধর্ষণের ঘটনায় জড়িত থাকার বিষয়টি স্বীকার করেছেন। আদালতে জবানবন্দিও দিয়েছেন। এখন সাক্ষীদের জেরার কাজ চলবে। তদন্ত শেষ করে দ্রুতই এ চাঞ্চল্যকর মামলার চার্জশিট দেয়া হবে।

উল্লেখ্য, গত ২৮ মার্চ বনানীর ‘দ্য রেইন ট্রি’ হোটেলে সাফাত আহমেদ নামে এক বন্ধুর জন্মদিনে যোগ দিতে গিয়ে বন্ধুদের যোগসাজশে ধর্ষণের শিকার হন বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া দুই তরুণী। ওই ঘটনায় ৪০ দিন পর ৬ মে (শনিবার) সন্ধ্যায় বনানী থানায় ৫ জনকে আসামি করে মামলা দায়ের করা হয়।

পাঁচ আসামি হলেন- সাফাত আহমেদ, সাদমান সাকিফ, নাঈম আশরাফ, সাফাতের গাড়িচালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ।

আসামিদের মধ্যে সাফাত ও সাদমান সিলেট থেকে ও গাড়িচালক বিল্লাল ও তার দেহরক্ষী আবুল কালাম আজাদ ঢাকা থেকে গ্রেফতার হয়েছেন। এ ছাড়া মুন্সিগঞ্জের লৌহজং থেকে গ্রেফতার হয়েছেন মামলার আরেক আসামি নাঈম ওরফে হালিম।

ওই মামলা দায়েরের ক্ষেত্রে পুলিশের গাফিলতির অভিযোগ ওঠে। গাফিলতি ও দায়িত্বে অবহেলার বিষয়টি খতিয়ে দেখতে গত ১২ মে অ্যাডিশনাল কমিশনার মিজানুর রহমানকে প্রধান করে তিন সদস্যের একটি কমিটি গঠিত হয়। কমিটির অন্য দুই সদস্য হলেন- ডিএমপির যুগ্মকমিশনার (ডিবি) আবদুল বাতেন ও যুগ্মকমিশনার (ক্রাইম) কৃষ্ণপদ রায়।