মালিবাগ-মগবাজার ফ্লাইওভার উদ্বোধন ২৬ অক্টোবর

অবশেষে যান চলাচলের জন্য পুরোপুরি খুলছে মগবাজার-মৌচাক-মালিবাগ সমন্বিত উড়ালসড়ক। আগামী ২৬ অক্টোবর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই উড়ালসড়কের উদ্বোধন করবেন। গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তিনি এটির উদ্বোধন করবেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে। স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী ও উড়াল সড়কটির প্রকল্পের পরিচালক সুশান্ত কুমার পালও এই তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

সরকার প্রধান সময় দেয়ার পর সার্বিক প্রস্তুতি প্রায় শেষ করে এনেছে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এবং স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর। উড়াল সড়কের এখন চলছে ধোয়ামোছা, রঙ, বিদ্যুতের খুঁটি ও বাতি লাগানোর মতো শেষ পর্যায়ের কাজ।

এছাড়া সমন্বিত এ উড়াল সড়কের নিচের সড়কের সংস্কার কাজও কোনো কোনো স্থানে শুরু হয়েছে।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, ‘উড়ালসড়কের নিচের সড়ক ও ফুটপাতের সংস্কারকাজও প্রায় শেষ পর্যায়ে।’

চার লেনের উড়ালসড়কটি ছয়টি মোড় অতিক্রম করেছে। এগুলো হলো সাতরাস্তা, বিএফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর ও মালিবাগ মোড়। এর মধ্যে মগবাজার, মালিবাগ ও কারওয়ান বাজারে রেললাইন অতিক্রম করেছে এই উড়ালসড়ক প্রকল্প।

ওই উড়ালসড়কটি তিন ভাগে করা হয়েছে। একটি অংশ সাতরাস্তা-মগবাজার-হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল। এটা নির্মাণ করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন। গত বছরের মার্চ মাসে এ অংশ যান চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয়।

গত বছরের ১৫ সেপ্টেম্বর নিউ ইস্কাটন থেকে মৌচাক পর্যন্ত উড়ালসড়কের এক দিক খুলে দেয়া হয়। এই অংশ নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন।

তৃতীয় ধাপে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশন (বিএফডিসি) মোড় থেকে কারওয়ান বাজার অংশ যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়া হয় গত ১৭ মে। এই অংশও তৈরি করেছে নাভানা কনস্ট্রাকশন।

এখন খুলে দেয়ার অপেক্ষায় আছে উড়ালসড়কের মৌচাক-মালিবাগ-শান্তিনগর-রাজারবাগ-মগবাজার অংশ। এটা নির্মাণ করেছে তমা কনস্ট্রাকশন।

এলজিইডি সূত্র জানায়, ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারিতে প্রায় ৯ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের এই সমন্বিত উড়ালসড়কটির নির্মাণকাজ শুরু হয়। ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু এর মধ্যে কয়েক দফায় প্রকল্পের সময় বাড়ানো হয়।

প্রথমে এই প্রকল্পটির ব্যয় ধরা হয়েছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরে নকশায় পরিবর্তন আনা হয়। শেষ পর্যন্ত ব্যয় বাড়তে বাড়তে ১ হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকায় গিয়ে ঠেকে। এই প্রকল্প বাস্তবায়নে সরকার অর্থায়ন করেছে ৪৪২ কোটি ৭৩ লাখ টাকা। ৭৭৬ কোটি ১৬ লাখ টাকা দিয়েছে সৌদি ফান্ড ফর ডেভেলপমেন্ট (এসএফডি) এবং ওপেক ফান্ড ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্ট (ওএফআইডি)।

দেশে এখন পর্যন্ত যে কয়টি উড়ালসড়ক নির্মাণ করা হয়েছে, তার মধ্যে মৌচাক-মালিবাগ উড়ালসড়কটি দৈর্ঘ্যে দ্বিতীয়। প্রথম স্থানে আছে ১০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের মেয়র মোহাম্মদ হানিফ উড়ালসড়ক (গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী)।

শুরু থেকেই বারবার বাধা

দীর্ঘ যানজটের ভোগান্তির সমাধানে রাজধানীতে ফ্লাইওভার নিমার্ণের উদ্যেগ নেয়া হয়। এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি ফ্লাইওভারও নির্মাণকাজ শেষ হয়েছে। সবচেয়ে বড় ফ্লাইওভারটি নির্মাণ করা হয় গুলিস্তান-যাত্রাবাড়ী মেয়র হানিফ ফ্লাইওভার। এটির দৈর্ঘ্য ১০ কিলোমিটার। এরপরই মগবাজার-মৌচাক ফ্লাইওভার।

২০১১ সালের ৮ মার্চ একনেক এই প্রকল্প অনুমোদন করে। প্রথমে প্রকল্পের আকার ছিল ৭৭২ কোটি ৭০ লাখ টাকা। পরে ২০১৬ সালের ১৯ জানুয়ারি প্রকল্পের ব্যয় বাড়িয়ে এক হাজার ২১৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা করা হয়। ধাপে ধাপে প্রকল্প বাস্তবায়নের সময় বাড়িয়ে চলতি বছরের জুন পর্যন্ত করা হয়।

২০১৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রায় ৯ কিলোমিটার লম্বা ফ্লাইওভারটির নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন। এই ফ্লাইওভার প্রকল্পটি ঢাকা শহরের স্ট্রাটেজিক ট্রান্সপোর্ট প্ল্যানের (এসটিপি) অন্তর্ভুক্ত।

ফ্লাইওভারটি রিখটার স্কেলে ১০ মাত্রার ভূমিকম্প সহনীয় বলে প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে। প্রতিটি পিলার পাইলের গভীরতা প্রায় ৪০ মিটার গভীর। ফ্লাইওভারটি আটটি মোড় যথাক্রমে- সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, মৌচাক, শান্তিনগর, মালিবাগ, চৌধুরীপাড়া ও রমনা থানা। ফ্লাইওভারটি মগবাজার, মালিবাগ ও সোনারগাঁসহ তিনটি রেলক্রসিং অতিক্রম করেছে।

চার লেনের এ ফ্লাইওভারে ওঠানামার জন্য ১৫টি র‌্যাম্প রয়েছে। তেজগাঁওয়ের সাতরাস্তা, এফডিসি, মগবাজার, হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল, বাংলামটর, মগবাজার, মালিবাগ, রাজারবাগ পুলিশ লাইন এবং শান্তিনগর মোড়ে ওঠানামা করার ব্যবস্থা রয়েছে।