মাশরাফিই বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক : আশরাফুল

২০১৪ সালে যখন একের পর এক হারে কোণঠাসা বাংলাদেশ ক্রিকেট দল, তখন দলের নেতৃত্ব তুলে দেওয়া হয় মাশরাফি বিন মুর্তজার হাতে। আর তখন হঠাৎই বদলে যায় টাইগাররা। হারের বৃত্তে থাকা সেই বাংলাদেশই একের পর এক বাঘা বাঘা দলকে হারিয়ে রীতিমত জায়ান্ট দলে পরিণত হয়। বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনাল থেকে শুরু করে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে সেমিফাইনাল। দলের এমন সাফল্য কোন জাদুমন্ত্রে আসেনি, এসেছে মাশরাফির দুর্দান্ত নেতৃত্বে।

সাবেক অধিনায়ক মোহাম্মদ আশরাফুলও বলছেন একই কথা। মাশরাফিকেই বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক বললেন টেস্ট ক্রিকেটের সর্বকনিষ্ঠ সেঞ্চুরিয়ান।

বৃহস্পতিবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুশীলন করতে আসেন আশরাফুল। অনুশীলন শেষে মাশরাফি সম্পর্কে সাবেক এ অধিনায়ক বলেন, ‘বাংলাদেশে এখন পর্যন্ত যত অধিনায়ক এসেছে সবাই সবার জায়গা থেকে তাদের সেরাটা দেয়ার চেষ্টা করেছে। আমাদের সময় আমরা যেমন ছিলাম, তারপর আগে যারা ছিল সবাই সেরাটা দিয়েছে। তার মধ্যে অবশ্যই আমি বলবো যে, বাংলাদেশের সেরা অধিনায়ক মাশরাফিই।’

‘সবকিছু যদি আমরা চিন্তা করি। কারণ ওর সাতটা অস্ত্রোপচার হয়েছে পায়ে। এভাবে খেলা চালিয়ে যাওয়াটা, এর জন্য বিরাট বড় মানসিকতা লাগে। এ ধরনের মানসিক শক্তি সবার মধ্যে নেই। একমাত্র মাশরাফির মধ্যে আছে বলেই সে এখনো চালিয়ে যাচ্ছে। এবং দলটাকে আমি বলবো যে খুব সুন্দরমতো নেতৃত্ব দিচ্ছে।’- বলে যান আশরাফুল।

মাশরাফির অধীনে এখন পর্যন্ত ৪৭টি ওয়ানডে ম্যাচ খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে ২৭টি ম্যাচে জয়ী হয়েছে টাইগাররা। জয়ের হার সর্বোচ্চ ৬০ শতাংশ। এর পরেই আছেন সাকিব আল হাসান। ৫০টি ওয়ানডেতে অধিনায়কত্ব করে ৪৬.৯৩ শতাংশ জয় পেয়েছেন। তবে এর অধিকাংশই এসেছে দুর্বল দলের বিপক্ষে। টি-টুয়েন্টিতেও শীর্ষে মাশরাফি। তার অধীনে খেলা ২৮ ম্যাচের ১০টি ম্যাচে জয় পেয়েছেন তিনি। জয়ের হার ৩৭.০৩ শতাংশ।

শুধু দলীয় পারফরম্যান্সই নয়, ব্যক্তিগত নৈপুণ্যেও সবার উপরে মাশরাফি। ২০১৪ সালের নভেম্বরে অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৮ উইকেট নিয়েছেন মাশরাফি। রান দেওয়ার ক্ষেত্রেও কৃপণ ছিলেন তিনি। ওভার প্রতি রান দিয়েছেন মাত্র ৪.৯৪।

তবে শুধু পরিসংখ্যানের বিচারে মাশরাফিকে মাপা যাবেনা। কারণ দলকে উজ্জবিত করতে তিনি অতুলনীয়। আশরাফুলের ভাষায়, ‘সবকিছু মিলে আমি বলবো মাশরাফি অসাধারন নেতা। আমি মনে করি যে, সে জানে যে তার কখন কি করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় যে, সে নিয়মিত পারফর্ম করছে। অধিনায়কত্ব তখনই সহজ হয় যখন খেলোয়াড় নিজে পারফর্ম করে।’

অধিনায়কত্বের পরিসংখ্যান এমনকি নিজের ব্যক্তিগত পারফরম্যান্স উভয় ক্ষেত্রেই এগিয়ে মাশরাফি। ৩৩ বছর বয়স্ক মাশরাফির ক্ষেত্রে আলোচনায় আসতে পারে তার ফিটনেস। গত দুই বছরে ফিটনেসটাও দারুণ ভাবে ধরে রেখেছেন মাশরাফি। ইনজুরি কিংবা ফিটনেসের কারণে একটি ম্যাচেও বসে থাকতে হয়নি তাকে। তাই ফিট মাশরাফিকে ২০১৯ বিশ্বকাপ পর্যন্ত খেলার কথাই বললেন আশরাফুল, ‘ফিটনেস যদি ঠিক থাকে তাহলে অবশ্যই মাশরাফির ২০১৯ বিশ্বকাপ খেলা উচিত। আর ফিটনেসটা যে তার খুব ভালো তা গত দুই তিন বছরে তার মাঠের পারফরম্যান্স দেখলেই জানা যায়।’

উল্লেখ্য, বাংলাদেশকে প্রথমবার বিশ্বকাপে পৌঁছে দিতে দারুণ অবদান ছিল তৎকালীন অধিনায়ক আকরাম খানের। এরপর বিশ্বকাপে আমিনুল ইসলামের বুলবুলের নেতৃত্বে পাকিস্তানের বিপক্ষে অবিস্মরণীয় সে জয়ে টেস্ট স্ট্যাটাসের ভিত্তি পেয়েছিল বাংলাদেশ। এরপর নাইমুর রহমান দুর্জয়, খালেদ মাসুদ পাইলট, খালেদ মাহমুদ সুজন, হাবিবুল বাশার, মোহাম্মদ আশরাফুল হয়ে অধিনায়কত্ব আসে মাশরাফির হাতে। যদিও ইনজুরির কারণে তা ধরে রাখতে পারেননি। এরপর সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহীমের হাত ঘুরে আবার মাশরাফি। সবাই চেষ্টা করেছেন। তবে মাশরাফির বাংলাদেশই রচনা করতে পেরেছে অনন্য ইতিহাস। মাশরাফির বাংলাদেশকে আজ সমীহ করে পৃথিবীর প্রত্যেকটি দল।