মিয়ানমারের ওপর যুক্তরাষ্ট্র-ভারতের চাপই সবচেয়ে জরুরি

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে বিনা প্ররোচণায় রোহিঙ্গাদের ওপর নিপীড়ন শুরুর পর, পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের নিরাপদ আশ্রয়স্থল হয়ে উঠেছে বাংলাদেশ। কিন্তু রাখাইনে থামছে না রোহিঙ্গাদের ওপর দমন-পীড়ন অভিযান এবং পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতেও তেমন উদ্যোগী নয় মিয়ানমার।

এ অবস্থায় রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ভূমিকাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে এবং তার তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয়।

গত ২১ সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন টাইমসে প্রকাশিত সজীব ওয়াজেদ জয়ের এক নিবন্ধ প্রকাশিত হয়। এতে রোহিঙ্গা ইস্যু ও তার সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

ওই নিবন্ধে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের নাগরিকত্ব অস্বীকার করা নিয়ে শুধু রাখাইনের অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীই নয়, দেশটির সরকারের সঙ্গেও বিরোধে জড়িয়ে পড়ে রোহিঙ্গারা। যা তাদের অনেককে সরকারবিরোধী বিদ্রোহী করে তোলে।

এসব রোহিঙ্গাদের ইতোমধ্যে পৃথিবীর সবচেয়ে নিপীড়িত জনগোষ্ঠী বলে উল্লেখ করেছে জাতিসংঘ। আগে থেকেই বাংলাদেশে ৪ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থী থাকলেও গত মাসে আরও পালিয়ে অন্তত ৪ লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে বলে জানিয়েছে জাতিসংঘ। দেশটিতে চলা জাতিগত নির্মূল অভিযানের কারণে দিন দিন তা বাড়ছে।

নিবন্ধে বলা হয়, রাখাইনে রোহিঙ্গাদের প্রতি বৈষম্যের অবসানে জাতিসংঘের সুপারিশের প্রতি জোর সমর্থন দিয়েছে বাংলাদেশ। এটাই বাংলাদেশের মানুষের স্বাভাবিক মনোভাব। ৪৬ বছর আগে পাকিস্তানের কাছ থেকে ৩০ লাখ প্রাণের বিনিময়ে স্বাধীনতা পেয়েছিল বাংলাদেশ। এজন্য অন্তত ১ কোটি মানুষ ভারতে গিয়েছিলেন শরণার্থী হিসেবে।

কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থী দুটি ক্যাম্প থাকলেও নতুন আসা রোহিঙ্গাদের জন্য আরও ২ হাজা্র একর জমি দিতে পেরে বাংলাদেশ গর্বিত। রাস্তার পাশে কোনরকমে গাদাগাদি করে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থীদের জন্য সরকার আশ্রয়ের ব্যবস্থা করছে এবং স্বাস্থ্যসেবা দিচ্ছে। বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের বিনামূল্যে খদ্য ও ওষুধ দিচ্ছে। এছাড়া রোহিঙ্গা শিশুদের টিকা দিচ্ছে, যেন রোগের বিস্তার না ঘটে। আঙুলের ছাপ দিয়ে রোহিঙ্গাদের শনাক্তকরণ কার্ড দেওয়া হচ্ছে, যার মাধ্যমে তারা সরকারের দেওয়া সুযোগ পাবে।

এতে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে আসা ঠেকাতে মিয়ানমারের ওপর জরুরিভাবে আন্তর্জাতিক চাপ প্রয়োগ করা প্রয়োজন। বিশেষ করে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে। এক্ষেত্রে সবচেয়ে ভালো হয়, জাতিগত নির্মূল অভিযান বন্ধ ও রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরিয়ে নেওয়া হলে।

মিয়ানমারের বৌদ্ধ জাতিগোষ্ঠী ও সেদেশে বসবাসরত অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীর মধ্যকার সম্পর্ক থেকে এ দ্বন্দ্বের শুরু হয়েছে। রোহিঙ্গাদের ওপর সহিংসতা অব্যাহত রাখার অভিযোগ তুলে দেশটির রাষ্ট্রদূতকে ডেকে নিন্দা জানিয়েছে মালয়েশিয়া। এ নিয়ে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যেও উত্তেজনা বাড়ছে। এরইমধ্যে মিয়ানমারের উড়োজাহাজ বাংলাদেশের আকাশসীমা লঙ্ঘন করেছে।

এদিকে, রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাহায্যে নিজেদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করছে বাংলাদেশ। সম্প্রতি ঢাকা সফরে এসে ইন্দোনেশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী রেতনো মারসুদি সহায়তার ঘোষণা দেন। কিন্তু তাদের জন্য আরও সহায়তা প্রয়োজন।

নিবন্ধে উল্লেখ করা হয়, ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে নিবন্ধিত শরণার্থী হিসেবে অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ। কক্সবাজারে নতুন বা আগে থেকে থাকা শরণার্থী ক্যাম্পগুলো আদর্শ বা দীর্ঘমেয়াদী নয়। বিক্ষিপ্ত অবস্থা ও হতাশার কারণে রোহিঙ্গারা নিজেদের ঝুঁকিপূর্ণ করে তুলেছে; স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষে যা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। এরা অপরাধ চক্রগুলোর খপ্পরে পড়ে ও মানবপাচারের শিকার হয়। এছাড়া বাংলাদেশ ইসলামী জঙ্গিদের সম্পর্কে সজাগ রয়েছে, যা এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়তে পারে।

মিয়ানমারকে অবশ্যই বাংলাদেশ রোহিঙ্গা পাঠানো বন্ধ করতে হবে। তারা অনর্থক বৈষম্য ও সহিসংতা বন্ধে বিশ্বের আহ্বান অগ্রাহ্য করছে। এই মানবিক দুযোর্গ বন্ধে দেশটির নেত্রী অং সান সু চি ও সামরিক জান্তাদের ওপর আরও চাপ দিতে হবে।

নিবন্ধে আরও বলা হয়, সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে বাংলাদেশের জিরো টলারেন্স অবস্থানের প্রশংসাকারী ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি জানেন, এ অস্থিতিশীল অবস্থা ও বাস্তুচ্যুত মানুষের কারণে সন্ত্রাসের প্রজননক্ষেত্র তৈরি হতে পারে। বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সহযোগী হিসেবে সম্প্রতি মোদি এ ইস্যুতে মিয়ানমার সরকারকে চাপ দিয়েছেন।

এখন যুক্তরাষ্ট্রের পালা, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের একটা বিবৃতি বা টুইট ব্যাপক কর্তৃত্ব তৈরি করবে। এর আগেও যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে যুদ্ধে বাংলাদেশের সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করেছে। রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে চলমান সহিংসতা বন্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও দেশটির প্রেসিডেন্টকে বাংলাদেশের প্রয়োজন।