মুমিনুলকে নিয়ে নির্বাচকদের সঙ্গে সাংবাদিকদের যুদ্ধ

‘আপনারা আমাকে এভাবে বলতে পারেন না’। ক্ষেপে উঠলেন বাংলাদেশ দলের প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদিন নান্নু। দল ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনেই। রাগবেনই না কেন? রীতিমতো তার মানবতা নিয়ে যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ১৯৯৯ সালে তাকে বিশ্বকাপের দলে রাখা হয় নি। তাকে বাদ দেওয়ার পর মিডিয়ার প্রবল বিরোধে শেষ পর্যন্ত নান্নুকে দলে অন্তর্ভুক্ত করতে বাধ্য হয় তখনকার নির্বাচক কমিটি। ১৮ বছর পর সেই নান্নুই নিজেই প্রধান নির্বাচক। আর এবার অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দল থেকেই বাদ দিলেন বাংলাদেশের সেরা টেস্ট ব্যাটসম্যান মুমিনুল হককে। আর মুমিনুলকে বাদ দিতে নিজে কতটা ‘অমানবিক’ হয়েছেন জানতে চাইলেই ক্ষেপে যান নান্নু।

শনিবার মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অস্ট্রেলিয়া সিরিজের প্রথম টেস্টের দল ঘোষণা করেন নান্নু। ১৪ জনের স্কোয়াড ঘোষণার পরই সাংবাদিকদের মুহুর্মুহু প্রশ্নবাণে বিদ্ধ হন তিনি। প্রায় ২৮ মিনিটের এই সংবাদ সম্মেলনের প্রায় পুরোটা জুড়েই ছিল মুমিনুলকে নিয়ে প্রশ্ন। কেন দুটি টেস্ট খারাপ করাতেই বাংলাদেশের ব্র্যাডম্যান নামে পরিচিত ব্যাটসম্যানকে এভাবে বাদ দেওয়া হলো? কেন সৌম্য সরকারের মতো তাকেও সুযোগ দেওয়া হলো না?

মুমিনুলকে বাদ দেওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করতে গিয়ে এক পর্যায়ে ক্ষেপে যান নান্নু, ‘এটা আমাকে এভাবে জিজ্ঞেস করতে পারেন না। আপনারা ওর পরিসংখ্যানের দিকে যাচ্ছেন না। গত এক বছরে ওর গড় ২৮ এ নেমে এসেছে। ও যেভাবে ওর ক্যারিয়ার শুরু করেছিল সেভাবে কিন্তু খেলতে পারছে না। ’ নান্নুর আরো ব্যাখ্যা, ‘মুমিনুলের সামগ্রিক যে ফর্ম, আমাদের কাছে যে স্ট্যাট আছে…জানুয়ারি থেকে শ্রীলঙ্কা সিরিজ পযর্ন্ত। ছয় ইনিংসে ওর একটি মাত্র ফিফটি। এ পারফরম্যান্সের জন্য মুমিনুল নেই।’

মুমিনুলের সঙ্গে এ সিরিজে বাদ দেওয়া হয়েছে মাহমুদুউল্লাহকেও। শ্রীলঙ্কায় প্রথম টেস্টে ছিলেন তিনি। দ্বিতীয় টেস্টে তাকে হঠাৎ করে বাদ দেওয়া হয়। তাই নতুন করে তাকে নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি নান্নু। মুমিনুল-মাহমুদউল্লাহ না থাকলেও দলে আছেন সৌম্য ও ইমরুল কায়েস।

‘ও (মুমিনুল) যেই জায়গায় ব্যাট করছে সেই জায়গায় সৌম্য সরকার ও ইমরুল কায়েস ভালো করছে। সৌম্যর আট টেস্টের চারটিতে ফিফটি রয়েছে। ওর গড় ৪৫.৭৫। এ কারণে মুমিনুল বিবেচনার নিচে চলে গেছে। এছাড়া ঘরের মাঠে ইমরুলের পারফরম্যান্সও যথেষ্ট ভালো।’

শুধু নান্নুকেই এসব প্রশ্ন করা হয়নি, হয়েছে প্রধান কোচ হাথুরুসিংহেকে। তবে বিষয়টি কৌশলে এড়িয়ে যান হাথুরু, ‘নির্বাচন প্রক্রিয়া ধারাবাহিকভাবে হয়েছে। কিছু খেলোয়াড় আগের টেস্টেই বাদ পড়েছে। আমি কারো নাম উল্লেখ করতে চাই না কারণ আমার কাছে দল বেশি গুরুত্বপূর্ণ। এ নির্বাচনে তাদের প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে যারা পারফরম্যান্স করেছে। প্রত্যেক খেলোয়াড়ই জানে তারা কোথায় দাঁড়িয়ে আছে, কেন তারা দল থেকে বাদ পড়লো।’

ক্যারিয়ারে ২২টি টেস্ট খেলেছেন মুমিনুল। ৪৬.৮৮ গড়ে করেছেন ১৬৮৮ রান। ঘরের মাঠে গড় আরও উন্নত। ১৪ টেস্টে ৫৮.০৯ গড়ে করেছেন ১২২০ রান। তবে শেষ দুটি টেস্টে ভালো করতে পারেননি তিনি। করেছেন মাত্র ৫১ রান। আর এ দুই টেস্টে বাজে খেলার কারণেই বাদ পড়তে হলো বাংলার ব্র্যাডম্যান খ্যাত এ ব্যাটসম্যানকে। যার কিনা ঘরের মাঠে সাফল্য প্রশ্নের ঊর্ধে। সাংবাদিকরা মুমিনুলের বাদ পড়া মানতে পারেননি। দেশের সাধারণ ক্রিকেটপ্রেমীরাও কি তা মানতে পারবেন?