মুসলমান ও দলিতদের ওপর নির্যাতনের বিরুদ্ধে ভারতজুড়ে বিক্ষোভ

গো রক্ষার নামে মুসলমান ও দলিত সম্প্রদায়ের উপর ক্রমবর্ধমান হামলা ও নির্যাতনের বিরুদ্ধে বুধবার ভারতের বিভিন্ন অঞ্চলে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেছে সচেতন নাগরিক সমাজ। দেশটির প্রধান প্রধান শহরে বিক্ষুব্ধ জনগণ এ উপলক্ষে নানা কর্মসূচী পালন করে।

সাবা দেওয়ান নামক এক সংগঠক জানান, দিল্লিতে প্রায় ২,০০০ লোক বিক্ষোভ উপলক্ষ্যে জমায়েত হয়। এ ছাড়া আরো ১৫টি শহরে বিক্ষোভ সভা অনুষ্ঠিত হয়। লন্ডনেও প্রতিবাদ প্রদর্শন হয়।

গত সপ্তাহে ট্রেনে একজন মুসলিম কিশোরকে হত্যা করার পর #NotInMyName নামে ফেসবুকে এ প্রচারণা শুরু হয়। মঙ্গলবার বিকালে ঝাড়খন্ড রাজ্যে এক মুসলমান দুগ্ধ খামারের ঘরের সামনে মৃত গরু পাওয়া গেলে তার উপর নির্যাতন এবং তার ঘরে আগুন ধরিয়ে দেয়ার খবরে পরদিনের এ বিক্ষোভ আরো প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে।

সাম্প্রতিক সময়ে বেশ কয়েকটি ভারতীয় রাজ্যে গরু জবাই নিষিদ্ধ করা হয় এবং এ আইন লঙ্ঘনের জন্য ১০ বছর পর্যন্ত কারাদন্ডের আইন করা হয়। এ অপরাধের জন্য মৃত্যুদন্ডাশের একটি বিল সংসদে বিবেচনাধীন আছে। ভারতে গরুকে দেবতাতুল্য মনে করা হয়।
মূলত ২০১৪ সালে হিন্দু জাতীয়তাবাদী ভারতীয় জনতা পার্টি ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গো রক্ষা গোষ্ঠীগুলো সহিংস হয়ে উঠে। যার ফলে মুসলমান ও দলিত সম্প্রদায় অসংখ্য আক্রমণের সম্মুখীন হয়েছে, যাদের জন্য গরুর মাংস একটি প্রধানতম খাদ্য। গত দু’বছর ধরে এই হামলায় প্রায় এক ডজন মানুষ নিহত হয়েছে। গুজব সৃষ্টি করে, এমনকি দুধের জন্য গরু পরিবহনের জন্যও মুসলমানদের উপর আক্রমণ করা হয়েছে।

দিল্লীর ঐতিহাসিক স্মৃতিস্তম্ভ জন্তর মন্তরে বিক্ষোভ প্রদর্শনের জন্য জমায়েত হয় প্রতিবাদকারীরা। মঞ্চে বক্তৃতা, কবিতা আবৃত্তি ও গান পরিবেশনের মাধ্যমে প্রতিবাদ করে তারা। সংগঠকরা অভিযোগ করেছেন যে, গত সপ্তাহে ট্রেনে হিন্দুদের হামলায় নিহত ১৬ বছর বয়সী মুসলিম কিশোর জুনায়েদ খানের পরিবার সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলের ভীতিপ্রদর্শনের কারণে এ বিক্ষোভে উপস্থিত হতে পারেননি।

ডকুমেন্টারি চলচ্চিত্র নির্মাতা সাবা দেওয়ান বলেন, “জুনায়েদ হত্যাকান্ড আমাকে চরমভাবে আঘাত করেছে, অনেক মানুষকেই করেছে। এ সংবাদ শুনে আমি কেঁদে দিই।” তিনি আরো বলেন, “আমরা সবসময় বলছি আমাদের প্রতিবাদ করা উচিত, কিন্তু আমাদের কোন নেতৃত্ব নেই। তাই আমরা এই প্রচারণার মাধ্যমে কাজ করার সিদ্ধান্ত নিই।”

এদিন দিল্লি ছাড়াও মুম্বাই, ব্যাঙ্গালোর, চেন্নাই, হায়দ্রাবাদ, লখনৌ ও এলাহাবাদসহ ভারতের ১৬ টি শহরে বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হয়। ভারতের বাইরে লন্ডনেও প্রতিবাদ সভা হয়। সেইসাথে আগামী সপ্তাহে টরেন্টো, বোস্টন এবং করাচিতে প্রতিবাদ সমাবেশের পরিকল্পনা করা হয়। সূত্র: বিবিসি