মৃতদেহ রাখার জায়গা নেই মর্গে, লাশ পচছে মাটিতে

ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) ও হাসপাতালের মর্গের ফ্রিজগুলোয় জায়গা নেই। তাই মৃতদেহ রাখা হচ্ছে মর্গের মেঝেতে। ফলে যথাযথ সংরক্ষণের অভাবে সেখানেই পচে যাচ্ছে লাশগুলো। পুরো এলাকাই পচা গন্ধে ভরে আছে। মর্গে প্রতিদিন যেসব কর্মীরা মৃতদেহ ময়না তদন্তের সময়ে চিকিৎসকের সহযোগী হয়ে কাটাছেঁড়া করেন,লাশ বিভিন্ন কক্ষে আনা নেওয়া করেন,মৃতদেহের গোসল করান তারাও মৃতদেহগুলোর অবস্থা দেখে বিচলিত। অথচ এ সমস্যার সমাধান করতে কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না কর্তৃপক্ষ।খবর বাংলা ট্রিবিউনের।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, মর্গের লাশ রাখার ফ্রিজ দীর্ঘদিন ধরে নষ্ট থাকায় তাদের কিছুই করার নেই। প্রতিদিন একাধিক মরদেহ ময়না তদন্তের জন্য আসে। তাই বাধ্য হয়েই তারা এভাবে লাশ রাখছেন। সরেজমিনে ঢামেক মর্গে গিয়ে দেখা যায়,মেঝেতে একাধিক মৃতদেহ রাখা হয়েছে।

মর্গের একাধিক সূত্র জানায়, মৃতদেহ রাখতে ঢামেক মর্গে ফ্রিজ (মরচুয়ারি কুলার)রয়েছে পাঁচটি। প্রতিটি ফ্রিজে চারটি করে ড্রয়ার রয়েছে। একটি ফ্রিজে সব মিলিয়ে ২০টি মৃতদেহ রাখা যায়। তিনটি ফ্রিজ নষ্ট প্রায় চার মাস ধরে। পাঁচটি ফ্রিজই যদি ঠিক থাকতো তাহলে মৃতদেহগুলো মেঝেতে ফেলে রাখতে হতো না। এগুলো পচে আলামত নষ্ট হওয়ার আশঙ্কাও থাকতো না।

ফ্রিজ ছাড়াও মর্গের চারটি এসি নষ্ট হয়ে আছে প্রায় এক বছর ধরে। এর মধ্যে তিনটি ময়না তদন্ত করা হয় যে ঘরে সেই ঘরের। আরেকটি ময়না তদন্তকারী চিকিৎসকদের বসার কক্ষের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক চিকিৎসক বলেন, ‘বিষয়টি খুবই জরুরি’ উল্লেখ করে এ বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে চিঠি দিয়ে জানানো হলেও কোনও সুরাহা হয়নি। ফলে, নতুন মরদেহ এলে সেগুলো নির্ধারিত ফ্রিজে রাখা যাচ্ছে না। বাইরে রাখতে হচ্ছে।

তারা বলছেন, ‘মরদেহ ঠিকমতো ফ্রিজিং করতে না পারলে তার আলামত নষ্ট হয়ে যায়। ফলে ময়না তদন্তে মৃত্যুর কারণ নির্ণয় করা খুব কঠিন হয়ে পড়ে। বাইরে রাখায় ‘কজ অব ডেথ’ নির্ণয় করাও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে যাচ্ছে।’

জানা গেছে, দুটি ফ্রিজে চার জঙ্গি ও চারজন বিদেশি নাগরিকের মরদেহ রাখা আছে। আদালতের নির্দেশে আরেকটি মরদেহ সংরক্ষণ আছে প্রায় তিন বছর ধরে। কিন্তু মর্গে প্রায় প্রতিদিন আত্মহত্যা, সড়ক দুর্ঘটনাসহ নানা ঘটনায় নিহত পাঁচ-ছয়টি লাশ আসে। ফ্রিজের অপ্রতুলতার কারণে সেগুলো ঠিকমতো সংরক্ষণ করা সম্ভব হয় না।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢামেকের ফরেনসিক বিভাগের প্রধান ডা. সোহেল মাহমুদ বলেন, ‘বিষয়টি নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতির মধ্যে আমরা রয়েছি। পাঁচটি ফ্রিজের মধ্যে তিনটিই নষ্ট, চারটি এসি নষ্ট।’

তিনি বলেন, ‘যে কক্ষে আমরা ময়না তদন্ত করি সেখানের তিনটি এসিই নষ্ট। ফলে প্রচণ্ড গরমে ময়না তদন্তের কাজ ঠিকমতো করা সম্ভব হয় না। সাফোকেশন হয়, লাশের গন্ধে থাকা যায় না। মাঝে মাঝে মৃতদেহ যখন এই মূল কক্ষে এনে রাখা হয়, তখন সেগুলো ফুলে ফেঁপে যায়। ফলে ময়না তদন্ত করলেও তার ঠিক ফলাফল পাওয়া নিয়ে আমরা শঙ্কায় থাকি।’

ডা. সোহেল মাহমুদ আরও বলেন, ‘দুটো ফ্রিজই জঙ্গি ও বিদেশি নাগরিকদের লাশ দিয়ে অকুপাইড। স্বাভাবিকভাবে বিকালে বা রাতের দিকে কোনও মৃতদেহ আসলে তার ময়না তদন্ত হয় পরদিন সকালে। কিন্তু ফ্রিজ নষ্ট থাকায় লাশগুলো রাখতে হয় ফ্লোরে। এতে করে লাশের স্বাভাবিকতা হারায়। সব কিছু ঠিক না থাকায় আমরা স্বাভাবিক কাজগুলো করতে পারছি না। একই সঙ্গে বিব্রত হচ্ছি।’

ফ্রিজগুলো যত দ্রুত সম্ভব ঠিক করে দরকার বলে মনে করেন এই চিকিৎসক। তিনি বলেন, ‘সরকারি প্রকৌশলীরা কয়েকবার এগুলো দেখে গেছেন। এগুলো আর ঠিক করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন। ফলে যত দ্রুত সম্ভব এগুলোকে অকেজো ঘোষণা করে নতুন ফ্রিজ দেওয়ার আবেদন জানাচ্ছি।’