মৃত্যুভয় কার বেশি, নাস্তিকের না ধার্মিকের

মৃত্যুই সম্ভবত এ মরজগতে একমাত্র অনিবার্য সত্য। একে অতিক্রম করার ক্ষমতা কোনও জীবেরই নেই। অথচ এই সত্যের সম্মুখীন হতে ভয় পান না, এমন মানুষ খুব কমই আছেন। কাদের মৃত্যুভয় সব থেকে বেশি— এই মর্মে সম্প্রতি একটি সমীক্ষা চালিয়েছিলেন অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল গবেষক। আর তাতেই উঠে এল এক আশ্চর্য তথ্য।

১৯৬১ থেকে ২০১৪ সালের মধ্যে প্রকাশিত প্রায় ১০০টি প্রাসঙ্গিক নিবন্ধ থেকে গবেষকরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রায় ২৬,০০০ মানুষ সম্পর্কে তথ্যে সংগ্রহ করেন। এই তথ্যগুলিকে একত্র করতেই জানা যায় এক আশ্চর্য সত্য।

গবেষকরা জানাচ্ছেন, মাত্র দু’ধরনের মানুষই মৃত্যুকে ভয় পান না। এক নাস্তিক আর দুই, ধার্মিক। আসলে গবেষকরা সন্ধান করছিলেন ‘ডেথ অ্যাংজাইটি’-তে ভোগা মানুষের। তারা জানিয়েছেন, অতিমাত্রায় ধার্মিক ব্যক্তি আর সম্পূর্ণ নাস্তিক ব্যক্তিরা এই একটি বিন্দুতেই সহমত পোষণ করেন। এই দুই বর্গের মানুষ সাধারণত ডেথ অ্যাংজাইটিতে ভোগেন না।

ঈশ্বর, পরলোক, ইত্যাদিতে গভীর ভাবে বিশ্বাসী মানুষ তাদের বিশ্বাসের কারণেই মৃত্যুভয়কে অতিক্রম করতে পারেন। আর নাস্তিকদের ক্ষেত্রে বিষয়টা আরও সহজ। তারা মৃত্যুভয়কে জয় করেন অবিশ্বাস দিয়ে। এক্ষেত্রে বিশ্বাস ও অবিশ্বাস একই পাতে বসে। নাস্তিকের ভাই হয়ে দেখা দেন ধার্মিকরা।

এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা যেতেই পারে ভারতীয় দার্শনিক অরিন্দম চক্রবর্তীর মৃত্যু-সংক্রান্ত নিবন্ধ ‘কেন রে এই দুয়ারটুকু’-র কথা। সেখানে অরিন্দম দেখিয়েছিলেন, মৃত্যুর চাইতে মৃত্যু যন্ত্রণাকেই বেশি ভয় পায় মানুষ। তার সঙ্গে থাকে প্রিয়জনকে ছেড়ে যাওয়ার দুঃখ, পার্থিবের প্রতি আসক্তি ইত্যাদি। অতিমাত্রায় ধর্মচর্চা, যেমন সন্ন্যাস এবং অতিমাত্রায় নাস্তিকতার চর্চা এই ভাবনাগুলির জাল থেকে মানুষকে মুক্ত করে।
‘ধার্মিকেরা নাস্তিকদের চাইতে কম মৃত্যুভয় পোষণ করেন— এই প্রাচীন ধারণার বিরোধিতা করছে এই গবেষণা। মৃ্ত্যুভয়কে জয় করতে ধার্মিক হওয়ার প্রয়োজন নেই!’— এমন মন্তব্য করেছেন ব্রিটেনের কভেন্ট্রি বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞ জোনাথন জং।

এই গবেষণা নিবন্ধটি প্রকাশিত হয়েছে ‘রিলিজিয়ন, ব্রেন অ্যান্ড বিহেভিয়র’ নামক জার্নালে।

সূত্র : এবেলা