মৃত স্ত্রীর সঙ্গে ৬ দিন এক বিছানায় স্বামী, ভালোবাসার গভীরতায় শিহরিত বিশ্ব

ভালবাসার বহিঃপ্রকাশ যে কত বিচিত্র উপায়ে হতে পারে! কখনও কখনও গভীর ভালবাসার আশ্চর্য প্রকাশ দেখে মানুষ বিস্মিত, শিহরিত হয়ে ওঠে। সম্প্রতি তেমনটাই হয়েছে লন্ডনে ঘটে যাওয়া একটি ঘটনার সূত্রে। এক স্বামী তার স্ত্রীয়ের প্রতি গভীর প্রেমে ছ’দিন ধরে আঁকড়ে থেকেছেন নিজের জীবনসঙ্গিনীর মৃতদেহ।

ভালবাসায় পরিপূর্ণ ছিল রাসেল ডেভিসন এবং ওয়েন্ডি ডেভিসনের দাম্পত্যজীবন। কিন্তু বছর ছ’য়েক আগে ওয়েন্ডির শরীরে বাসা বাঁধে মারণ ক্যানসার। সারভাইকাল ক্যানসারে আক্রান্ত হন ওয়েন্ডি। রাসেল বুঝে গিয়েছিলেন, নিজের প্রিয়তমাকে আর বেশি দিন নিজের কাছে ধরে রাখতে পারবেন না তিনি।

মাস খানেক আগে ওয়েন্ডির শরীর বেশ খারাপ হয়। ওয়েন্ডি নিজেও বুঝে যান, তার সময় হয়ে এসেছে। স্বামীকে ডেকে অনুরোধ করেন, ‘আমাকে দয়া করে হাসপাতালে পাঠিও না। আমি আমাদের শোওয়ার ঘরে শুয়েই শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাই।’

সেই ইচ্ছা পূরণ করেছিলেন রাসেল। ২১ এপ্রিল ভোর বেলা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন ওয়েন্ডি। নিজের বিছানায় শুয়ে ইহলোকের মায়া ত্যাগ করেন তিনি। এই মৃত্যু অপ্রত্যাশিত ছিল না রাসেলের কাছে। কিন্তু পত্নী যখন সত্যিই চলে গেলেন ইহজগত ছেড়ে, তখন রাসেলের উপলব্ধি হল, এত সহজ নয় ভালবাসার পাত্রীকে চিরতরে ছেড়ে দেওয়া।

শুরু হল রাসেলের অন্য এক লড়াই। আত্মীয়-বন্ধুদের ইচ্ছে, বিশ্বাস, পরামর্শ— সব কিছু উপেক্ষা করে তিনি আঁকড়ে ধরে রইলেন স্ত্রীয়ের মৃতদেহ। সৎকার হল না শবদেহের। বরং এক জন জীবিত মানুষের পরিচর্যা যে ভাবে করেন তার অত্যন্ত আপনজন, সে ভাবেই মৃত স্ত্রীয়ের রক্ষণাবেক্ষণ শুরু করলেন রাসেল।

মৃত ওয়েন্ডিকে রোজ সময়মতো স্নান করিয়ে, নতুন পোশাক পরিয়ে তিনি শুইয়ে দিতেন বিছানায়। রাত্রে মৃত স্ত্রীয়ের পাশে গিয়েই শুয়ে পড়তেন, ঠিক যেমনটা করতেন তার জীবদ্দশায়। এই ঘটনাকে যেন কলকাতার রবিনসন স্ট্রিটের কঙ্কাল কাণ্ডের পুনরাবৃত্তি বলে কেউ না ভাবেন।

কোনও রকম গুপ্ত সাধনার কোনও স্থান ছিল না রাসেলের ঘটনায়। কোনও মানসিক অসুস্থতার লক্ষণও ছিল না রাসেলের মধ্যে। একেবারে সুস্থ মস্তিস্কে তিনি চেয়েছিলেন স্ত্রীয়ের দৈহিক মৃত্যুকে উপেক্ষা করে আরও কয়েকটা দিন তাকে নিজের কাছে আটকে রাখতে। ওয়েন্ডির মৃতদেহটি ছিল সেই তার সেই প্রেম-আরাধনার সাধনক্ষেত্র মাত্র।

৬ দিন এই ভাবে ওয়েন্ডির মৃতদেহ নিজের ঘরে আগলে রেখে দিয়েছিলেন রাসেল। তার পর যথাবিহিত আচার মেনে সৎকার করেছেন ওয়েন্ডির। রাসেল অবশ্য নিজের কৃতকর্মের জেরে এখন সংবাদপত্রের শিরোনাম হয়ে গিয়েছেন। বহু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে তাকে নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে।

যারা রাসেলের ভালবাসার কথা জেনেছেন, তাদের অনেকেরই মনে হয়েছে, লোকটা পাগল। কিন্তু সাধারণ মানুষের মধ্যে একটা বড় অংশ বলছেন, ভালবাসা মানেই তো একরাশ পাগলামি আর অনেকটা আবেগ। সেই জায়গা থেকে দেখলে, সত্যিই কি কোনও অন্যায় করেছেন রাসেল? মনে হয় না। এবেলা।