মৃত স্বামীর ঔরসে সন্তান!

স্বামীর মৃত্যু হয়েছে প্রায় আড়াই বছর আগে। সেই স্বামীর ঔরসেই এবার সন্তান জন্ম দিলেন এক মা। বাবার মতোই দেখতে ফুটফুটে ওই কন্যাশিশুর নাম রাখা হয়েছে অ্যাঞ্জেলিনা।

সিএনএনের প্রতিবেদনে বলা হয়, পেই জিয়া নামের ওই নারী গত মঙ্গলবার নিউইয়র্কের ওয়েইল করনেল হাসপাতালে কন্যাশিশুর জন্ম দেন। নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্ট (এনওয়াইপিডি) এক ব্লগ পোস্টে মা ও শিশুর ছবি পোস্ট করেছে। ওই ছবিতে শিশুটির মাথায় এনওয়াইপিডির ক্যাপ পরানো ছিল।

প্রতিবেদনে বলা হয়, পেই জিয়ার স্বামী ওয়েনজিয়ান লিউ নিউইয়র্ক সিটি পুলিশ ডিপার্টমেন্টের গোয়েন্দা বিভাগে কর্মকর্তা ছিলেন। বিয়ের কয়েক মাস পর ২০১৪ সালের ২০ ডিসেম্বর বন্দুকধারীদের গুলিতে কর্তব্যরত অবস্থায় নিহত হন ওয়েনজিয়ান। বিয়ের কয়েক মাসের মাথায় ভালোবাসার মানুষটিকে এভাবে হারাবেন ভাবতে পারেননি পেই। স্বামীর স্মৃতি বলতে তাঁর কাছে কিছুই নেই। বিয়ের পর থেকে তাঁরা দুজন একটি ফুটফুটে সন্তানের স্বপ্ন দেখতেন। এ কারণে তিনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে মৃত স্বামীর শুক্রাণু (স্পার্ম) সংরক্ষণের অনুরোধ জানান। সেই আবেদনে সাড়া দিয়ে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ শুক্রাণু সংরক্ষণ করে। মৃত স্বামীর স্মৃতি সংরক্ষণে সেই শুক্রাণু ব্যবহার করেই প্রায় আড়াই বছর পর অ্যাঞ্জেলিনা নামের ওই কন্যাসন্তানের জন্ম দিলেন পেই।

প্রতিবেদনে বলা হয়, ওয়েনজিয়ান লিউয়ের সংরক্ষিত শুক্রাণু ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) পদ্ধতিতে পেই জিয়ার জরায়ুতে প্রতিস্থাপন করা হয়। সন্তান জন্মের সময় ওয়েনজিয়ানের বাবা ওয়েই তাং লিউ ও মা জিউ ইয়ান লিউ উপস্থিত ছিলেন।
ওয়াশিংটনের প্রতিবেদনে বলা হয়, মৃত্যুর সময় লিউয়ের বয়স ছিল ৩২ বছর। ২০১৫ সালের জানুয়ারিতে তাঁর শেষকৃত্য হয়।

এতে পেই বলেছিলেন, ‘লিউ ছিলেন আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় বন্ধু, স্বপ্নের নায়ক। আর তাঁর বাবা-মা ছিলেন তাঁর সবকিছু। তিনি আমাদের ছেড়ে চলে গেলেও আমার বিশ্বাস, তিনি আমাদের সঙ্গেই থাকবেন।’

লিউয়ের মা জিউ ইয়ান লিউ বলেন, ‘গত তিনটি বছর আমাদের অনেক কঠিন সময় পার করতে হয়েছে। এত দিন পর তাঁর সন্তানের সুখবর আমাদের কাছে সবচেয়ে আনন্দের খবর।’

প্রতিবেদনে বলা হয়, অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার আগে এই খবর কিছুতেই শ্বশুর-শাশুড়িকে জানতে দেননি পেই। তিনি স্বপ্ন দেখতেন, তাঁর গর্ভে একটি কন্যাশিশু ধীরে ধীরে বেড়ে উঠছে। পেই বলেন, ‘আমি এক বন্ধুকে এ কথা বলেছিলাম। কিন্তু তিনি বলেছিলেন, সনোগ্রাম করানো ছাড়া এটা নিশ্চিত করে বলা যাবে না। কিন্তু সনোগ্রামের পরেও আমি সঠিক ছিলাম।’

পেইয়ের পারিবারিক বন্ধু সুসান ঝুয়াং বলেন, মৃত স্বামীর সংরক্ষিত শুক্রাণু দিয়ে সন্তান জন্ম দিতে পারবেন কি না, এই সন্দেহে পেই লিউয়ের বাবা-মাকে বিষয়টি জানাননি। যদি না হতো, তাহলে লিউয়ের বাবা-মা আরও কষ্ট পেতেন। এখন তাঁরা বেশ আনন্দিত।

প্রতিবেদনে বলা হয়, মাত্র ১২ বছর বয়সে ১৯৯৪ সালে লিউকে নিয়ে চীন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসেন তাঁর বাবা-মা। একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে তাঁরাও খুব ভেঙে পড়েছিলেন। এখন নাতনির ফুটফুটে মুখ দেখে কিছুটা স্বাভাবিক হচ্ছেন তাঁরাও।লিউয়ের মা বলেন, ‘নাতনি অ্যাঞ্জেলিনা দেখতে আমার বউমার মতো। তবে তার চোখ ও কপাল অবিকল আমার ছেলের মতোই দেখতে। মাথাটাও একদম বাবার মতোই পেয়েছে। তার মাঝে এখন আমি আমার হারানো ছেলেকে খুঁজে পাচ্ছি।’

লিউয়ের বাবা ওয়েই তাং লিউ বলেন, ‘নাতনিকে দেখে আমার হৃদয় ভালোবাসায় পূর্ণ হয়ে আছে।’