মেঘ গুড় গুড় করলেও বৃষ্টি নেই

দিনভর কাঠফাঁটা রোদ। বিকেলে শুরু হওয়া ভ্যাপসা গরম থাকছে গভীর রাত পর্যন্ত। মাঝে মধ্যে আকাশে কালো মেঘের আভা। সঙ্গে গুড় গুড় ডাক আর বিদ্যুতের চমকানোর আওয়াজ। থেকে থেকে পশ্চিমের ঠাণ্ডা বাতাস। এত কিছুর পরও প্রশান্তির বৃষ্টির দেখা মিলছে না। এমনাবস্থা পুরো উত্তরাঞ্চলজুড়েই। ঝুম বৃষ্টি নেই প্রায় সপ্তাহখানেক থেকে। তাপমাত্রাও ছুটছে লাগামহীন ঘোড়ার মতো। ঘূর্ণিঝড়ের মতো ঘুরপাক খাচ্ছে ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রির মধ্যে। ত্রাহি অবস্থা প্রাণিকূলের। আবহাওয়ার এমন পরিস্থিতিতে মানুষের স্বাভাবিক জীবন-যাপন একেবারেই কঠিন হয়ে পড়েছে। তবে মঙ্গলবার বগুড়া, নওগাঁ, রংপুর, দিনাজপুর, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম জেলার কোনো কোনো এলাকায় সামান্য বৃষ্টি হয়েছে বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

গেল এক সপ্তাহ থেকে রাজশাহীসহ উত্তরাঞ্চলজুড়ে বইছে মৃদু তাপপ্রবাহ। জ্যৈষ্ঠের দাবদাহ আর অব্যাহত খরায় তপ্ত হয়ে উঠেছে এ অঞ্চল। বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে জনজীবন। যেন হাঁস-ফাঁস অবস্থা। সারাদিন খাঁ খাঁ রোদে কর্মজীবনেও নেমে আসছে স্থবিরতা। বিশেষ করে শ্রমজীবী মানুষের অবস্থা হয়ে উঠছে কষ্টের। বাসা, অফিস কিংবা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান সবখানেই যেন গরম আর গরম। এতটুকুও শান্তি মিলছে না কোথাও। গাছের নিচে দাঁড়ালেও গরম বাতাসে শরীর দিয়ে অনবরত ঘাম ঝরেই চলেছে। এমনাবস্থা অনেকটা সকাল থেকেই। বেলা হতে না হতেই রোদের প্রখরতায় চারিদিকে যেন আগুনের হলকা ছুটছে। আর দুপুর গড়াতে না গড়াতেই তা বৃদ্ধি পেয়ে আরো ব্যাপকতা লাভ করছে। এ সময় রাস্তায় মানুষের চলাচলও দায় হয়ে পড়ছে। এক সপ্তাহ থেকে আবহাওয়ার তেমন হেরফের হচ্ছে না। প্রতিদিনই ৩৮ ডিগ্রির কাছাকাছি তাপমাত্রা বিরাজ করছে। এ অবস্থায় প্রশান্তির একমাত্র উপায় বৃষ্টির জন্য হাহাকার পড়ে যাচ্ছে। তাপমাত্রার প্রখরতার কারণে মানুষের দুর্দশা চরমে। গরম থেকে স্বস্তি পেতে মানুষ ছুটছেন বিভিন্ন প্রকার ঠাণ্ডা পানীয়ের দোকানে। ডাবেরও চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। প্রচণ্ড রোদের কারণে মানুষ ঘর থেকে বের হবার সাহস পাচ্ছেন না। দুপুর হতেই রাস্তাঘাট অনেকটায় ফাঁক হয়ে যাচ্ছে। গরম আর সর্দির কারণে মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে নানা রোগ-বালাইয়ে। ইতোমধ্যে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসাপাতালে বেড়েছে ডায়রিয়াসহ নানা রোগ-বালাইয়ে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। বিশেষ করে হাসপাতালের তিনটি শিশু ওয়ার্ডে যেন ধাপ ফেলার জায়গা নেই। বেডে ফ্লোরে সবখানেই গরমজনিত রোগে আক্রান্ত রোগী।

রাজশাহী মহানগরীর রিকশা চালক খায়রুল জানান, একটু ঘুরতেই কাহিল হয়ে পড়ছেন। গরম আর রোদের তাপে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকায় দায় হয়ে পড়ছে। দু’একবার যাত্রীবহন করে আধাঘন্টা কোনো গাছের নিচে গিয়ে বসে থাকতে হচ্ছে।

মহানগরীর সাহেববাজারে কাজকরা পঞ্চাশোর্ধ্ব শ্রমিক হেলাল জানালেন, প্রচণ্ড গরমে কাজ করা অনেটাই দায় হয়ে পড়ছে। একটুতেই ক্লান্ত হয়ে যাচ্ছেন। পরিবার পরিজনের মুখে খাবার তুলে দেবার জন্য কষ্ট করে হলেও কাজ করতে হচ্ছে।

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের প্রধান অধ্যাপক আজগার হোসেন বলেন, ‘ডায়রিয়া, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত গড়ে প্রতিদিন শতাধিক রোগী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য ভর্তি হচ্ছে। আসলে এই গরম থেকে রক্ষা পাবার জন্য শিশুদের শরীরে পাতলা জাতীয় কাপড় জড়িয়ে রাখতে হবে। সেই সাথে পানি বেশি বেশি করে খাওয়াতে হবে। যাতে করে ঘামের মাধ্যমে বেরিয়ে যাওয়া পানির ঘাটতি পূরণ হয়।

রাজশাহী আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র পর্যবেক্ষক শহীদুল ইসলাম বলেন, বৃষ্টি না হবার কারণে গরম বেশি। তাছাড়াও সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার অবস্থান প্রায় কাছাকাছি হবার কারণের পাশাপাশি মৃদু তাপপ্রবাহ বইছে। দুয়েক দিনের মধ্যে বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা আছে। তবে তাপমাত্রা আরো বৃদ্ধি পেতে পারে। মূলত ক’দিন ধরে রাজশাহীতে তাপমাত্রা ৩৭ থেকে ৩৮ ডিগ্রি সেলসিয়াসে উঠানামা করছে। রাজশাহী অঞ্চলে সর্বশেষ বৃষ্টি হয়েছে গত ১৯ মে। এদিন ২ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এরপরে তেমন ভাবে আর বৃষ্টিপাত হয়নি।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় একটু বৃষ্টি হলেও তা সামান্য। এ মৌসুমে সবচেয়ে বেশি বৃষ্টিপাত হয়েছে ১ মে। সেদিন ৪৭ দশমিক ৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। গেল কয়েকদিনে এ অঞ্চলে তাপমাত্রাও বেড়ে চলেছে। সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা শুক্রবার ৩৭ দশমিক ৫, শনিবার ৩৭, রোববার তা বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭ দশমিক ৫, সোমবার তা আরো বেড়ে দাঁড়ায় ৩৭ দশমিক ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। মঙ্গলবার সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা ৩৭ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আর সর্বনিম্ন ২৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস।