মেয়েরা কেন কোনো কিছু গোপন রাখতে পারে না, জানাচ্ছে ‘মহাভারত’

নারী ও পুরুষের স্বভাব ও চরিত্রগত তুলনা আজকের পৃথিবীতে করতে বসলেই যে কোনও সংবেদনশীল মানুষ হাঁ হাঁ করে উঠবেন। সেটাই স্বাভাবিক। কিন্তু ভারতীয় পরম্পরার দিকে যদি তাকানো যায়, যদি প্রাচীন গ্রিক ও রোমান সভ্যতার দিকে তাকানো যায়, যদি আরব্য রজনীর কাহিনি ছানবিন করা যায়, দেখা যাবে, নারী-পুরুষের তুলনা ও প্রতিতুলনা ছিল সেই সময়কার অতি গুরুত্বপূর্ণ এক বিষয়। ‘বেতাল পঞ্চবিংশতি’ ও ‘বত্রিশ পুত্তলিকা’-র কাহিনিতেও দেখা গিয়েছে বার বার উত্থাপিত হয়েছে এই প্রসঙ্গ। ইতিহাসবিদ্যার বিন্দু থেকে দেখলে একথা বলা বোধ হয় অন্যায় হবে না যে, সেই কালের প্রেক্ষিতে এই প্রসঙ্গ ছিল স্বাভাবিক ও সাবলীল।

ভারতের সর্বকালের শ্রেষ্ঠ সাহিত্য ‘মহাভারত’-এও উত্থাপিত হয়েছে এই প্রসঙ্গ। দ্রৌপদীর উচ্চারণে বার বার উঠে এসেছে পুরুষ সম্পর্কে বিবিধ প্রশ্ন। পাণ্ডব, কৌরব, এমনকী পুরুষোত্তম শ্রীকৃষ্ণও সাধারণীকরণের মাধ্যমেই বুঝতে চেয়েছেন নারীচরিত্র। তবে এ কথাও ঠিক যে, তাঁরা ব্যতিক্রমকেও স্বীকৃতি দিতে দ্বিধা করেননি। স্বয়ং লেখক বেদব্যাস খোলাখুলিই জানিয়েছিলেন, নারীচরিত্রের কিছু গোলমেলে দিক সম্পর্কে।

কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পরে যুধিষ্ঠীর তাঁর আত্মজনের অন্ত্যেষ্টী সংস্কারে উদ্যোগী হন। তিনি কর্ণের অন্তিম সংস্কারও করতে অগ্রসর হন। কারণ, কর্ণের মৃত্যুর পরে তিনি জানতে পারেন, কর্ণ তাঁর সহোদর ছিলেন। মাতা কুন্তী এই তথ্য তাঁদের কাছে গোপন রেখেছিলেন। অনুতপ্ত, বিভ্রান্ত ধর্মপুত্র রাগে-ক্ষোভে নারীজাতিকেই অভিশাপ দেন- তাঁরা কোনও কিছু গোপন রাখতে পারবেন না।

পরবর্তী বিশ্বে এই বিষয়টি নিয়ে কম চর্চা হয়নি। ‘মেয়েরা পেটে কথা রাখতে পারে না’-গোছের ঘোর জেন্ডার বায়াস-ঋদ্ধ কহাবত জন্ম নিয়েছে। মেয়েরাও এই সব ‘বাজে কথা’-র বিরুদ্ধে সরব হয়েছেন। কিন্তু তর্ক এই আধুনিক যুগেও বহমান থেকেছে। সাম্প্রতিক এক সমীক্ষায় ব্রিটেনের এক স্কিন কেয়ার কোম্পানি ‘সিম্পল’ জানিয়েছে, মেয়েরা মাত্র ৩২ মিনিট কোনও কথা গোপন রাখতে সমর্থ হন। কিন্তু এই স্বভাব কি মেয়েদের একার? পুরুষরাও কি এই স্বভাবের শিকার নন?

কিন্তু কেন মানুষ কথা গোপন রাখতে পারে না? ‘সিম্পল’-এর সমীক্ষাই দিচ্ছে এর উত্তর-

নিজের অহং চরিতার্থ করতেই অনেকে গোপন কথা ফাঁস করতে আগ্রহী হন। তাঁরা মনে করেন, এতে তাঁদের সামাজিক মর্যাদা বাড়বে। তিনি ‘এক্সক্লুসিভ’ হিসেবে গণ্য হবেন বলে মনে করেন। এই মনোবৃত্তিই কাজ করে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে।

গোপন কথা ফাঁস করে বা তা করার ভান করে অনেকেই নজর কাড়তে চান অন্যের। বলাই বাহুল্য, এটিও একটি ভুল ধারণা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের টাফ্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সমীক্ষা জানাচ্ছে, মানসিক ভার থেকে মুক্তি পেতে অনেকেই কথা গোপন রাখতে পারেন না।