যমুনার গাইড বাঁধে ধস : হুমকিতে বঙ্গবন্ধু সেতুসহ কয়েকটি গ্রাম

টাঙ্গাইলে বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব পাড়ের ২ কিলোমিটার দক্ষিণের গাইড বাঁধে যমুনা নদীতে তীব্র ভাঙ্গণ শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেল থেকে রাত ৯টা পর্যন্ত কালিহাতী উপজেলার গরিলা বাড়ি নামক স্থানে বাঁধের প্রায় ১ মিটার এলাকা ধসে গেছে। ভাঙ্গণের সাথে ধস অব্যাহত থাকায়। হুমকির মুখে রয়েছে সেতু এলাকার প্রায় ৮ থেকে ৯টি গ্রাম। এছাড়াও বঙ্গবন্ধু সেতু হুমকিতে রয়েছে।

এদিকে গত শনিবার থেকে অব্যাহতভাবে সেতুর বাঁধে ধস ও ভাঙনরোধে কার্যকর কোন পদক্ষেপ গ্রহন করেনি বিবিএ কর্তৃপক্ষ। সেতুটির সাইট অফিসের প্রকৌশলীরা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের বিষয়টি অবহিত করেছেন বলে জানান।

বঙ্গবন্ধু সেতুতে কর্মরত একাধিক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) সেতুর সাইট অফিসের প্রকৌশলীরা নদী শাসনের জন্য নাসির উদ্দিন নামের একজনকে নিয়োগ দিয়েছেন। তিনি রিভার ট্রেনিং এন্ড ওয়াটার (আরটিডাব্লিউএন্ড ব্লিডিং) রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করছেন।

সেতু নির্মাণের সময় তৎকালীন এমএল মনিকো কোম্পানিতে তিনি রুম বয় হিসেবে বাগ বাড়ি ক্যাম্পে কাজ করতো। পরবর্তী জোমাক-এমএল মনিকো জয়েন্ট ভেঞ্চার কোম্পানিতে নদী সার্ভেয়ার ও মারগানেট ওয়ান নামক আরেকটি কোম্পানিতে আর টি ডাব্লিউ ডিপার্টমেন্টে চেইন মেইন হিসেবে চাকরি করেন। এরপর বিবিএ সাইট অফিসের সহকারি প্রকৌশলী আবুল কালাম আজাদের সহযোগিতায় আর টি ডাব্লিউ এন্ড ব্লিডিং সেকশনের রক্ষণাবেক্ষণ প্রকৌশলী হিসেবে চাকরি করছেন। ফলে সেতু যমুনা নদী শাসনের দক্ষ লোকবল না থাকায় গত শনিবার থেকে বাঁধ এলাকায় ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে সেতুটি হুমকির মুখে পড়েছে।

দক্ষিণ বেলটিয়া গ্রামের আব্দুল আলীম ও চাঁন মিয়া শিকদারসহ অনেকেই অভিযোগ করে বলেন, বিবিএ কর্মকর্তাদের ঘুষ দিয়ে বালু খেকোরা অবৈধভাবে বাঁধের অংশ থেকে ড্রেজার বসিয়ে বালু উত্তোলনের কারনে বাঁধে ভাঙন ও ধস শুরু হয়েছে। মঙ্গলবার বিকাল হতে সন্ধ্যা পর্যন্ত ১হাজার মিটার বাঁধ নদী গর্ভে চলে গেছে। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত সেতু এলাকায় তীব্র ভাঙন অব্যাহত রয়েছে।

জানা গেছে, ২০০৪ সালে বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব কালিহাতী উপজেলার গরিলাবাড়ি এলাকায় সেতুর। দক্ষিণের গাইড বাঁধে কয়েকটি গ্রাম রক্ষার্থে যমুনা নদীতে সিসি ব্লক ও কার্পেটিং করে বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ)। বাঁধ তৈরির ১৪ বছর পর বিবিএ কর্তৃপক্ষের গাফিলতির কারণে সেতুর গাইড বাঁধ অংশ ভেঙে যাচ্ছে।

স্থানীয়রা জানান, দীর্ঘদিন যাবৎ সেতুর নিকট থেকে অবৈধভাবে। বালু উত্তোলন করায় এবং যমুনার পানি কমে যাওয়ায় এই বাঁধে ভাঙ্গণ দেখা দিয়েছে। বাঁধটি দ্রুত মেরামত করা না গেলে একদিকে সেতুটি হুমকির মুখে পড়বে অন্যদিকে আশপাশের প্রায় ৭ থেকে ৮টি গ্রাম নদী গর্ভে বিলিন হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। হঠাৎ করে তীব্র ভাঙনের ফলে চরম বিপাকে পরেছে ভাঙন কবলিতরা। ভাঙনের তীব্রতা বেড়েই চলছে। মানুষসঘরবাড়ি সরানোর সময়টুকু পাচ্ছে না। অসহায় হয়ে পড়ছে তারা।

বঙ্গবন্ধু সেতু পূর্ব বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষের (বিবিএ) সাইট অফিসের উপ-সহকারি প্রকৌশলী শাহীন হোসেন বলেন, সেতুর দক্ষিণের গাইড বাঁধের অংশে তীব্র ভাঙন শুরু হয়েছে। এতে বঙ্গবন্ধু সেতু হুমকিতে রয়েছে।

এর আগে গত শনিবার বঙ্গবন্ধু সেতুপূর্ব বাংলাদেশ সেতু কর্তৃপক্ষ (বিবিএ) দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারি প্রকৌশলী ওয়াসিম আলী জানিয়েছিলেন, মূল সেতুর বাইরে ধসের ঘটনা ঘটেছে। রাস্তা ভেঙে যায়নি। ধসের অংশটুকু সেতুর মধ্যে পরে না।