যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন এবং সহিংসতা, সতর্কতা

যুক্তরাষ্ট্রে মধ্যবর্তী নির্বাচন সমাগত। এক সপ্তাহের সামান্য বেশি সময় বাকি। এই নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদের ৪৩৫টি আসনের সবটাতে এবং সিনেটের ১০০ আসনের মধ্যে ৩৩ বা ৩৪টিতে নির্বাচন।

নির্বাচনকে সামনে রেখে সহিংস উগ্রপন্থার সতর্কতা দেয়া হয়েছে। এ সতর্কতার মধ্যেই নিজের বাড়িতে হামলার শিকার হয়েছেন প্রতিনিধি পরিষদের স্পিকার ও ডেমোক্রেট প্রভাবশালী নেত্রী ন্যান্সি পেলোসির স্বামী পল পেলোসি।

শুক্রবার তার ওপর দুর্বৃত্তরা হাতুড়ি দিয়ে মাথায় আঘাত করে। তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয়। বলা হয়েছে, সেখানে তিনি সুষ্ঠু হয়ে উঠছেন। সরকার তার সতর্কতায় বলেছে, নির্বাচনে প্রার্থী এবং নির্বাচনী কর্মকর্তাদের ওপর চরমপন্থিরা হামলা চালাতে পারে। শুক্রবার যুক্তরাষ্ট্রের আইন মন্ত্রণালয় ঘোষণা করেছে, একজন কংগ্রেসম্যানের বিরুদ্ধে ফোনে একাধিকবার হত্যার হুমকি দেয়ার অভিযোগে পেনসিলভ্যানিয়াতে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

সে অভিযোগ স্বীকার করেছে। ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেট দলের এরিক শোয়ালওয়েলকে সে এই হুমকি দিয়েছিল বলে সংবাদ মাধ্যমে প্রকাশ পেয়েছে। ওই কংগ্রেসেম্যানের ওয়াশিংটনের অফিসের একজন স্টাফকে সে ফোন করে বলেছিল, আগ্নেয়াস্ত্র সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটলে যাচ্ছি।

মধ্যবর্তী নির্বাচনের জন্য ক্ষমতাসীন ডেমোক্রেট এবং রিপাবলিকানরা যখন তাদের রাজনীতির কৌশল নির্ধারণ করছেন তখন রাজনৈতিক ব্যবস্থায় উন্মাদনা দেখা দিয়েছে। এই নির্বাচনেই নির্ধারিত হবে আগামী বছর যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসকে নিয়ন্ত্রণ করবে কোন দল। এটাকে বলা হয় যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে এক গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্ত হিসেবে। প্রস্তুতি সম্পন্ন করছে বিরোধী রিপাবলিকানরাও। তারা সতর্ক করে বলেছে, ডেমোক্রেট দলের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনকে চেক দেয়ার এটাই হলো শেষ সুুযোগ। অন্যদিকে ডেমোক্রেটরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের গণতন্ত্র নিজেই ঝুঁকিতে আছে। এর কারণ, রিপাবলিকান দলের বিপুল সংখ্যক প্রার্থী। তারা ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের ফল মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। কিন্তু পাল্টাপাল্টি বক্তব্য বিবৃতি সব মিলে যেন এক সহিংসতার ডামাডোল বাজানো হয়েছে। সহিংসতার হুমকি সৃষ্টি করেছে। এই পরিবেশ সারা বছরে গড়ে উঠেছে।

অ্যারিজোনায় অস্ত্রধারীরা মুখোশ পরে ব্যালটবাক্স ছিনিয়ে নিয়েছে। এ জন্য নির্বাচনে জালিয়াতি হয় এমন স্থানগুলো মনিটরিং করে তারা। ডানপন্থি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছবি পোস্ট করেছে তারা। তাতে দেখানো হয়েছে তারা নিজেরাই ভোট দিচ্ছে। তাদের সঙ্গে অন্যদেরও যোগ দিতে উৎসাহিত করছে। জুন মাসে সুপ্রিম কোর্টের বিচারক ব্রেট কাভানা’র বাড়ির কাছ থেকে এক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওই ব্যক্তি ক্যালিফোর্নিয়া থেকে ওয়াশিংটনে যায়। পৌঁছার পর সে পুলিশকে ফোন করে। বলে, তার কাছে আগ্নেয়াস্ত্র আছে এবং সেই অস্ত্র দিয়ে রক্ষণশীল বিচারককে হত্যা করতে চায়। এর পরের মাসে প্রচারণা বিষয়ক এক র‍্যালির মঞ্চে আক্রান্ত হন গভর্নর প্রার্থী রিপাবলিকান লি জেলডিন। সিয়াটলের বাড়ির বাইরে হ্যান্ডগান নিয়ে এক ব্যক্তি হুমকি দেয় ডেমোক্রেট দলের উদারপন্থি নেত্রী ও কংগ্রেসওম্যান প্রমিলা জয়পালকে। পরে তার বিরুদ্ধে অন্যের পিছু নেয়ার অপরাধের অভিযোগ আনা হয়েছে। অজ্ঞাত ব্যক্তি ফোন করার কারণে ৬ বার পুলিশ ডেকে নেন রিপাবলিকান কংগ্রেসওম্যান মারজোরি টেইলর গ্রিন। তাকেও অনেকবার হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে।

আর যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে তো পক্ষপাতী সহিংসতা, হুমকি এটা নতুন কিছু নয়। ৫ বছর আগে সাম্প্রতিক সবচেয়ে রক্তপাতের ঘটনা ঘটে। ওই সময় বহু সংখ্যক অস্ত্র হাতে নিয়ে এক ব্যক্তি রিপাবলিকান রাজনীতিকদের বিরুদ্ধে গুলি ছোড়ে। ওই রাজনীতিকরা সিটি পার্কে বেসবল খেলছিলেন। তার হামলায় আহত হন ৫ জন। এর মধ্যে একজনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হয়ে পড়ে। তিনি হলেন লুইজিয়ানার তখনকার প্রতিনিধি পরিষদে রিপাবলিকান দ্বিতীয় র‍্যাংকের সদস্য স্টিভ স্কালাইস। তবে এটা ছিল এক বিচ্ছিন্ন ঘটনা।

যুক্তরাষ্ট্রের ক্যাপিটল পুলিশের দেয়া ডাটা অনুযায়ী, একটি সহিংস ঢেউ গড়ে উঠছে। ২০১৭ সাল থেকে কংগ্রেস সদস্যদের বিরুদ্ধে হুমকি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০২২ সালের প্রথম তিন মাসের মধ্যে কমপক্ষে ১৮০০ ঘটনা ডকুমেন্ট হিসেবে নিবন্ধিত করেছে কর্তৃপক্ষ। এর জবাবে ক্যাপিটল পুলিশ জুলাইয়ে ঘোষণা দেয় যে, কংগ্রেশনাল আইনপ্রণেতাদের বাড়ির নিরাপত্তা উন্নত করতে ১০ হাজার ডলার ব্যয় করবে। মার্কিন কংগ্রেসের প্রতিনিধি পরিষদের মোট সদস্য ৪৩৫ জন। তারা ওয়াশিংটন, নিজের রাজ্যের ভিতরে এদিক-ওদিক চলাফেরা করেন। এমন অবস্থায় কেউ এসব রাজনীতিক বা তার পরিবারের ওপর আক্রমণ চালাতে পারে। ওয়াশিংটন থেকে হাজারো মাইল দূরে ন্যান্সি পেলোসির অবস্থান। সেখানে সান ফ্রান্সিসকোতে তার বাড়িতে পুলিশি নিরাপত্তা নেই। তার স্বামী পল পেলোসি টার্গেটেড ছিলেন না। কিন্তু তিনি ভিকটিম হয়েছেন। বলা হয়েছে, হামলা চালানোর আগে ওই আক্রমণকারী জানতে চায় ন্যান্সি পেলোসি কোথায়? এই বাক্যটি সেই ৬ই জানুয়ারির কথা মনে করিয়ে দেয়, যখন গত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরে ইউএস ক্যাপিটলে নৃশংস আক্রমণ চালানো হয়েছিল। সেখানে হামলাকারীদের বাক্য ছিল- ‘হোয়ার আর ইউ, ন্যান্সি? উই আর লুকিং ফর ইউ’। অর্থাৎ আপনি কোথায় ন্যান্সি? আমরা আপনাকে খুঁজছি।

রিপাবলিকান ও ডেমোক্রেট- উভয় দলই পল পেলোসির ওপর হামলায় সহমর্মিতা দেখিয়েছে। এতে মনে হচ্ছে দুই দলের উত্তাপ কিছু হলেও কমবে। কিন্তু যত সহজ দেখা যাচ্ছে, বাস্তবে কি ততটা ঘটবে!