যেভাবে নারীদের ফাঁদে ফেলতো ‘ভণ্ডপীর’ পিয়ার

জিন-ভূত তাড়ানোর নামে অসহায় নারীদের শারীরিক সম্পর্কে বাধ্য করে এবং সেই ভিডিও সহযোগীদের মাধ্যমে ধারণ করে ব্ল্যাকমেইল করতেন ‘ভণ্ডপীর’ আহসান হাবিব পিয়ার। শুধু তাই নয়, কৌশলে নিজের বাহ্যিক সৌন্দর্য এবং নিজের ‘পীর’ ও ভালোমানুষী মুখোশ কাজে লাগিয়ে দিতেন বিয়ের প্রলোভন।

এরপর নিজের কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ এবং আগে থেকে লাগিয়ে রাখা গোপন ক্যামেরায় সেই দৃশ্য ধারণ করা হতো। পরে সেই ভিডিও দেখিয়ে অর্থ দাবি করা হতো, অন্যথায় আবারও ধর্ষণে বাধ্য করা হতো।

গত ০১ আগস্ট রাতে গ্রেফতারের পর ‘ভণ্ডপীর’ আহসান হাবিব পিয়ারকে দুইদিনের রিমান্ডে নেয়া হয়। গত ৪ আগস্ট শেষ হওয়া সেই রিমান্ডে গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের কাছে এভাবে একের পর এক ধর্ষণ এবং ভিডিও চিত্র ধারণ করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেয়ার কথা স্বীকার করেছে সে। পরে গত ৫ আগস্ট ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ১৬৪ ধারায় দেয়া স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতেও দেয়।

‘ভণ্ডপীর’ আহসান হাবিব পিয়ার বলেন, ২০১০ সালে ঢাকার বর্তমান ঠিকানায় এসে জিন-ভূত তাড়ানোর নামে তাবিজ বিক্রি করি। পরবর্তীতে ইউটিউবে এইচপি টিভি চ্যানেল খুলে নিজের ভিডিও আপলোড করে সাধারণ মানুষের কাছে আসি।

তিনি স্বীকার করেন, তাবিজ-কবজের চিকিৎসা, বিয়ের প্রলোভন, ইউটিউবে ভালো ভালো ভিডিও প্রচারসহ নানা প্রতারণার মাধ্যমে নারীদের ধর্ষণ করি। এরপর গোপনে ধারণ করা সেইসব ভিডিও দেখিয়ে টাকা দাবি করি। অন্যথায়, তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নিয়ে পুনরায় ধর্ষণে বাধ্য করি। আর সেটা না হলে ধারণ করা সেই ভিডিও ইন্টারনেটে ছেড়ে দেয়ার হুমকি প্রদান করি।

তবে শুধু দেশের ভেতরের নারীরা যে তার দ্বারা প্রতারিত হয়েছেন এমন নয়। প্রবাসী নারীদের কাছ থেকে কথা জাদুতে মুগ্ধ করে এবং ইসলাম প্রচারের দোহায় দিতে মোট অংকের অর্থ হাতিয়ে নিয়েছে।

জানা গেছে, ইংরেজি ও আরবি ভাষায় পারদর্শী ভণ্ডপীর আহসান হাবিব পিয়ার তরুণীদের কাছে ছিল আকর্ষণীয় পুরুষ। কথার জাদুতে মুহূর্তেই তরুণীদের আকৃষ্ট করার অসম্ভব ক্ষমতা তার।

গোয়েন্দা সূত্র জানায়, ‘নানা সমস্যা নিয়ে ছুটে আসা উঠতি বয়সী কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীসহ নানা পেশার নারীদের কথার জাদুতে ফেলে এসব অপকর্ম চালাতো সে। হাটহাজারী মাদ্রাসা থেকে দাওরা হাদিস পড়াশোনা শেষ করে গত কয়েক বছর ধরে সে এসব অপকর্ম করে আসছে।’