যে পাঁচটি কারণে ভারতের চেয়ে বেশ পিছিয়ে চীনা সেনা!

ডোকলাম নিয়ে ভারত ও চীনের মধ্যে চূড়ান্ত দ্বৈরথের আবহে দুই দেশের প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরাই অপর রাষ্ট্রের দুর্বলতা খুঁজতে চুলচেরা বিশ্লেষণে নেমে পড়েছেন। ডোকলাম নিয়ে ভারতের অবশ্য কোনও প্রত্যক্ষ স্বার্থ জড়িত নেই, কিন্তু প্রতিবেশী ভুটানের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় প্রতিজ্ঞাবদ্ধ ভারত তাদের সেনা পাঠিয়েছে ডোকলামে।

চীনা সেনা চাইছে ডোকলামে সড়ক নির্মাণ করে ভারতকে সড়কপথে ঘিরে ফেলতে, উত্তর-পূর্ব ভারতের সঙ্গে মূল ভূখণ্ডকে আলাদা করে দিতে। চীনাফৌজের এই ছক বারবার বানচাল করে দিচ্ছেন ভারতীয় সেনারা। আর এতেই চটে গিয়ে ভারতের বিরুদ্ধে একের পর উস্কানিমূলক মন্তব্য করছেন চীনা সেনাকর্তারা।

মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞদের একাংশ বলছেন, আদতে চীনা সেনা কিন্তু বেশ দুর্বল। গত বেশ কয়েক শতক ধরে চীন যেমন রহস্যে মোড়া একটি দেশ, সে দেশের সেনাও কিন্তু ততটাই রহস্যাবৃত। প্রায় ২৩ লক্ষ সেনা ও ৮ লক্ষ রিজার্ভ ফোর্স-সম্বলিত চীনা সেনার তুলনায় ভারতের ১৬ লক্ষ সেনাবাহিনীকে খানিকটা দুর্বল মনে হলেও আসলে চীনা সেনা কিন্তু ভারতের সামনে টিকতেই পারবে না। বিশ্বাস হচ্ছে না? মার্কিন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা কিন্তু তাদের যুক্তির স্বপক্ষে বেশ কয়েকটি যুক্তি দেখিয়েছেন। এই প্রতিবেদনে রইল সেরকমই পাঁচটি যুক্তি।

১. আদর্শগত ফারাক: আদর্শগত ফারাকটাই অন্যান্য দেশের সেনার সঙ্গে চীনা সেনাকে সবচেয়ে বেশি আলাদা করে তুলেছে। ভারত, আমেরিকা বা ব্রিটেন, ফ্রান্সের সেনা সে দেশের সরকারি বাহিনী। দেশবাসীর সুরক্ষা, বিদেশি শত্রুদের হাত থেকে তাদের প্রাণরক্ষায় ব্রতী ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।

কিন্তু চীনের ‘পিপলস লিবারেশন আর্মি’ কিন্তু সরকারি বাহিনী নয়, শাসক কমিউনিস্ট পার্টির সশস্ত্র শাখা বলে চলে একে। ফলে দেশবাসী নয়, দলের শীর্ষনেতাদের কথায় চলে এই বাহিনী। দেশের প্রতি তাদের কোনও দায়বদ্ধতা নেই। অথচ ভারতীয় সেনারা দেশবাসীকে রক্ষা করতেই কখনও সিয়াচেনের তীব্র শৈত্য আবার কখনও রাজস্থানের প্রখর গরমকেও হাসিমুখে স্বীকার করে নেন।

২. দুর্বল সাংগঠনিক নেতৃত্ব: প্রতিটি বাহিনীকে ঠিকমতো পরিচালানোর জন্য দরকার যোগ্য নেতৃত্বের। কিন্তু চীনা সেনার কোনও বাহিনীতেই যোগ্য নেতা নেই বলে জানিয়েছেন মার্কিন বিশেষজ্ঞরা। সেই সঙ্গে রয়েছে প্রতিরক্ষা ব্যবস্থায় প্রবল দুর্নীতি। তিনটি বাহিনী প্রয়োজনে একসঙ্গে কাজ করবে। এমন কোনও জয়েন্ট কমান্ড নেই পিএলএ-তে। অন্যদিকে, নরেন্দ্র মোদি কিন্তু প্রধানমন্ত্রী পদে দায়িত্ব নেওয়ার পরই ভারতের জয়েন্ট কমান্ডকে ঢেলে সাজাতে উদ্যোগী হন।

৩. অন্যেদের সামরিক শক্তি সম্পর্কে সঠিক ধারণার অভাব: দক্ষিণ-চীন সাগর নিয়ে বিবাদের জেরে গত বেশ কয়েক দশক ধরে চীনের সঙ্গে বিদেশি রাষ্ট্রের কোনও যৌথ সেনামহড়া হয়নি। এর ফলে আধুনিক যুদ্ধের কলাকৌশলই হোক বা ভারত, জাপান বা আমেরিকার সামরিক দক্ষতা সম্পর্কে কোনও ধারণাই নেই। চীনা সেনাকেও রাখা হয় সম্পূর্ণ অন্ধকারে। যার ফলে চীনা সেনা ভাবে, তাদের চেয়ে দক্ষ মানবসম্পদ বুঝি আর বিশ্বে নেই। অথচ এই বিশ্বাস যে কতটা ভ্রান্ত, যুক্তিহীন-সেই সম্পর্কে পিএলএ সদস্যদের কোনও ধারনাই নেই।

৪. আধুনিক অস্ত্রবিহীন পদাতিক সেনা: পেন্টাগনের একটি সূত্রের দাবি, তারা সেনাপিছু ১৭,৫০০ মার্কিন ডলার খরচ করে। হেলমেট, বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, বন্দুক-সহ অন্যান্য গিয়ার কিনতে খরচ করা হয় বিপুল অর্থ। অথচ চীনে এক একজন সেনার জন্য বরাদ্দ মাত্র ১৫০০ মার্কিন ডলার।

যার মধ্যে বেশিরভাগ অর্থই তাদের একটি বন্দুক কিনতে খরচ হয়ে যায়। প্রতি বছর প্রতিরক্ষা খাতে ১২০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার খরচ করলেও চিনের নিজস্ব কোনও ডুবোজাহাজ বা যুদ্ধবিমান নেই। অধিকাংশ এয়ারক্রাফট ক্যারিয়ারই ইউক্রেনের কাছ থেকে কিনে নতুন করে রং করা। যুদ্ধের জন্যও ঠিকমতো প্রশিক্ষিত নন সে দেশের সেনা।

৫. নিয়োগে গরমিল: সেনাবাহিনীতে ভরতি হতে গেলে প্রয়োজন হয় কিছু ন্যূনতম যোগ্যতার। যা ভারত, আমেরিকার মতো দেশে কড়াভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয়। অথচ চীনে সেনাবাহিনীতে ভরতি হওয়ার জন্য শারীরিক বা মানসিক দক্ষতার চেয়ে অন্য যোগ্যতা দেখা হয়। কমিউনিস্ট দলের প্রতি আনুগত্যই একমাত্র মাপকাঠি। দিনের পর দিন এভাবেই চলছে। ভোট পেতে কলেজ থেকে সদ্য পাশ করে বেরনো ছাত্রছাত্রীদের নিয়োগ করা হয় সেনাবাহিনীতে। পড়ানো হয় কমিউনিজমের নামে প্রপাগান্ডার পাঠ।

এই সব কারণেই চীনের সেনাবাহিনী ভারতের চেয়েও শক্তিশালী বলে মানতে চাইছেন না অনেক প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরাই। তাদের মতে, চীন সম্পর্কে মানুষের একটি ধোঁয়াশার পরিবেশ তৈরি করে রাখা চীনের দীর্ঘদিনের অভ্যাস। দেশের ভিতরে প্রশাসনিক দুর্বলতা, কৃষি ও শিল্পক্ষেত্রে ফুটোফাটা যাতে প্রকাশ্যে না চলে আসে, সেই লক্ষ্যেই দেশে কোনও স্বাধীন সংবাদমাধ্যমকে টিকতে দেওয়া হয় না। সূত্র : সংবাদ প্রতিদিন