রংপুরের দুর্ঘটনা: ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে সিমেন্ট বোঝাই ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন হেলপার

ঈদে বাড়ি ফেরার পথে রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলায় সিমেন্টবোঝাই ট্রাক উল্টে ১৭ জন নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরো ১৫ জন।

আহতরা অভিযোগ করেছেন, ঘুমের কারণে চালক তাঁর সহকারীকে দিয়েছিলেন ট্রাকটি চালানোর জন্য। কিন্তু সহকারীও ঘুমিয়ে ঘুমিয়েই ট্রাকটি চালাচ্ছিলেন। আর এ কারণেই দুর্ঘটনা ঘটেছে। বেশির ভাগইই সিমেন্টের বস্তার নিচে চাপা পড়ে মারা গেছেন।

শনিবার সকাল ৬টার দিকে উপজেলার ঢাকা-রংপুর কলাবাড়ী এলাকায় এ দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানিয়েছেন রংপুর হাইওয়ে পুলিশের সহকারী পুলিশ সুপার (এএসপি) বীরেন চন্দ্র মহাপাত্র।

এএসপি বলেন, নিহতদের বেশির ভাগই তৈরি পোশাক শ্রমিক। ঈদে গাজীপুর থেকে ট্রাকে করে লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ উপজেলায় বাড়ি ফিরছিলেন তাঁরা।

নিহতদের বেশির ভাগের বাড়ি কালীগঞ্জ উপজেলার চন্দ্রপুর ইউনিয়নের বত্রিশ হাজারি গ্রামে। বেশির ভাগই ত্রিশোর্ধ্ব তরুণ-তরুণী। তাঁরা গাজীপুরে তৈরি পোশাক কারখানায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতেন।

দুর্ঘটনার হাত থেকে বেঁচে যাওয়া কহিনূর ইসলামের স্ত্রী (৩৫) ও আরেক নারী (২৮) সকাল সাড়ে ৮টায় জানান, তাঁরা গাজীপুর থেকে সিমেন্ট ভর্তি এই ট্রাকে উঠেছিলেন। চালক রাতভর গাড়ি চালান। তিনি মাঝে মাঝেই ঝিমুচ্ছিলেন। দুর্ঘটনাস্থলের কয়েক কিলোমিটার আগে এসে চালক গাড়ি চালানোর জন্য তাঁর সহকারীকে (হেলপার) দেন।

হেলপার প্রথমে ভালোভাবে চালালেও পরে তিনিও ঝিমুনি শুরু করেন। এ কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ করেন বেঁচে যাওয়া দুই নারী। তাঁরা জানান, দুর্ঘটনার সময় তাঁরা ট্রাকের কেবিনে ছিলেন। এ কারণেই বেঁচে গেছেন।

ট্রাকে সিমেন্টের উপর অন্তত ৩০ থেকে ৩৫ জন যাত্রী ছিলেন। তাঁদের বেশির ভাগই তৈরি পোশাক শ্রমিক হিসেবে গাজীপুরের বিভিন্ন কারখানায় কাজ করতেন। ঈদের ছুটিতে তাঁরা বাড়ি ফিরছিলেন। বেশির ভাগের বাড়িই রংপুরের বিভিন্ন উপজেলায় বলে জানান পুলিশ ও আহতরা।

এএসপি বীরেন চন্দ্র মহাপাত্রও আহতদের বরাত দিয়ে বলেন, চালকের ঝিমুনির কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।

দুর্ঘটনায় নিহতরা হলেন কহিনূর ইসলাম, বেগম (১০), জাহাঙ্গীর মিয়ার ছেলে মজনু মিয়া (২৫), দেলোয়ার হোসেন, আনিসুজ্জামান, জসীম উদ্দিন, ঝন্টু মিয়ার মেয়ে সুবর্ণ আক্তার (৯), শহীদুল ইসলাম, আলমগীর হোসেন, সাদ্দাম হোসেন, মনির হোসেন, রফিকুল ইসলাম, একরাম আলীর ছেলে খলিলুর রহমান, রবিউল ইসলাম, নাসিমা আক্তার ও আজিজুর রহমান।

আহতদের রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, পীরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়েছে। হতাহতদের উদ্ধারে পুলিশের পাশাপাশি ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের সদস্যরা কাজ শুরু করেছেন।