রমজানেও দৃশ্যমান সম্পর্ক এড়িয়ে চলবে বিএনপি-জামায়াত

জোটসঙ্গী বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী নিজেদের মধ্যে দৃশ্যমান সম্পর্ক এড়িয়ে চলবে রমজানেও। আগামী দিনের নির্বাচন কেন্দ্রীক আন্দোলন ও দেশি-বিদেশি সমালোচনার কারণে রাজনৈতিক কৌশলের অংশ হিসেবে দল দু’টি নিজেদের মধ্যে সমঝোতা করে এই পার্থক্য রেখে চলেছে। ইতোমধ্যে রমজান উপলক্ষে দলীয় ইফতার মাহফিল আয়োজন করা থেকে বিরত থাকছে জামায়াত।

জামায়াতের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো বলছে, গত বছর কূটনীতিক ও রাজনৈতিক নেতাদের সম্মানে ইফতার আয়োজন করার পরিকল্পনা থাকলেও আইনশৃংখলা বাহিনী বন্ধ করে দেয়। এ বছর কূটনীতিকদের সম্মানে একটি প্রথম শ্রেণির হোটেলে ইফতার আয়োজন করার চিন্তা করছে জামায়াত।

বিএনপির চেয়ারপারসনের ঘনিষ্ট একাধিক সূত্র জানায়, খালেদা জিয়ার ভিশন-২০৩০ ঘোষণার দিনও হোটেল ওয়েস্টিনে আসেনি জামায়াত। এই না আসাও বিএনপির নীতিনির্ধারকদের অনুরোধে হয়েছে। গত বছর থেকেই বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোটের বৈঠকে অংশ নেওয়া থেকে বিরত থাকে যুদ্ধাপরাধে অভিযুক্ত দলটি। গত বছর বিএনপিন্থী বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শ ছিল- জামায়াত বিষয়ে বিএনপির অবস্থান পরিস্কার করা। বিশেষ করে এমাজউদ্দীন আহমদ ও ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সরাসরি জামায়াত ছাড়তে বিএনপিকে আহ্বান জানান। তাদের এই আহ্বানের পর জামায়াতের পক্ষ থেকেও প্রশ্ন উঠে, কাদের চাহিদা বাস্তবায়ন করছেন তারা?

বিএনপির নির্ভরশীল সূত্রগুলো জানায়, বুদ্ধিজীবী ও অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর আহ্বানের কারণে জামায়াতের সঙ্গে দৃশ্যমান সম্পর্ক এড়িয়ে চলে বিএনপি। জোটের চেয়ারম্যান ও মহাসচিব পর্যায়ের কোনও বৈঠকে অংশ নিতে দেখা যায়নি জামায়াতকে। চলতি মে মাসের দ্বিতীয় সপ্তাহে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানের একটি বক্তব্যও বিষয়টিকে আরও তাৎপর্যমণ্ডিত করে। বেসরকারি একটি টেলিভিশন শো’তে তিনি বলেন, ‘জামায়াতের সঙ্গে ভবিষ্যতে কী সম্পর্ক হবে, সেটি এখনই বলা যাবে না। তারা সরকারে আসলে বিএনপি কেন তাদের সব কথা শুনবে?’ এক পর্যায়ে তিনি বলেন, ‘এখন তো তারা জোটের বৈঠকেও আসে না।’

স্থায়ী কমিটির সূত্র জানায়, বিএনপি কোনোভাবেই জামায়াতকে ছাড়বে না। নেতাদের বক্তব্যে বা অনুষ্ঠানে যোগ দেওয়া না দেওয়ার বিষয়গুলো রাজনৈতিক কৌশলের অংশ। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপি মহাজোটের বাইরের দলগুলোকে নিয়ে ভিন্ন চিন্তার অংশ হিসেবেই এখন দলটির সঙ্গে যথাযথ মেলামেশা এড়িয়ে চলছে।

চেয়ারপারসন কার্যালয়ের একটি ঘনিষ্ট সূত্র জানায়, প্রশ্ন থেকে যায়, জামায়াত কি এবার ইফতার আয়োজন করবে? না করলে কেন? খালেদা জিয়ার পরামর্শ নেই তো, যে তিনি যাবেন না, তাই ইফতার আয়োজন হচ্ছে না?

জানতে চাইলে ঢাকায় অবস্থানরত জামায়াতের মজলিসে শূরার প্রভাবশালী একজন সদস্য বলেন, ‘এখনও নিশ্চিত হয়নি। আইনশৃংখলা বাহিনী ইফতার করতে দেয় না। এবছরও অনিশ্চয়তা আছে। আমরা নিজেরা গোপনে বসে ইফতার করি।’

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার জমির উদ্দিন সরকার বলেন, ‘জামায়াত কেন জোটের বৈঠকে আসে না। এটা তো আমি বলতে পারবো না। আর তাদের সঙ্গে ভবিষ্যৎ সম্পর্ক কী হবে, সেটিও এখন বলার সুযোগ নেই।’প্রতিবেদন বাংলা ট্রিবিউনের সৌজন্যে প্রকাশিত।