রমজান শুরু হলেই খুলে যায় জান্নাতের দরজাগুলো

মহান আল্লাহ রব্বুল আলামিনের অফুরন্ত রহমত, মাগফিরাত ও নাজাতের অমিয় বারতা নিয়ে শুভাগমন করল হিজরি ১৪৩৮ সালের মাহে রমজানুল মোবারক। আজ পবিত্র রমজানের প্রথম দিন।

খাতামুন নাবিয়্যিন রহমাতুল্লিল আলামিন মুহাম্মাদুর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের উম্মতের জন্য প্রতি বছর এই পবিত্র মাস এক শুভ উপলক্ষ। আখেরি নবীর মদিনায় হিজরত করে যাওয়ার দ্বিতীয় বছরে রমজানের সিয়াম পালনের বিধান নিয়ে নাজিল হয় কুরআন মজিদের সূরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতটি। ঘোষণা করা হয়, হে মুমিনরা, তোমাদের প্রতি সিয়াম পালন আবশ্যিক করা হলো যেমন তা আবশ্যিক করা হয়েছিল তোমাদের আগে যারা ছিল তাদের প্রতি, যাতে তোমরা মুত্তাকি হতে পারো।

বায়হাকি শরিফে সঙ্কলিত এক হাদিসে হজরত সালমান ফারসি রাজিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, শাবান মাসের শেষ ভাগে একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদের উদ্দেশে ভাষণ দিলেন। বললেন, লোকেরা, তোমাদের ওপর এসে পড়েছে এক মহান মাস, বরকতময় মাস। এ মাসে একটি রাত রয়েছে যা এক হাজার মাসের চেয়ে শ্রেষ্ঠ। আল্লাহ তায়ালা এ মাসের সিয়াম ফরজ ও (ইবাদতের উদ্দেশ্যে) রাতে জেগে থাকা ঐচ্ছিক করেছেন। এতে যে ব্যক্তি কোনো নেক কাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভের চেষ্টা করবে, তার জন্য থাকবে অন্য মাসে একটি ফরজ আদায়ের সমান প্রতিদান। আর যে ব্যক্তি এতে একটি ফরজ আদায় করবে, তার জন্য থাকবে অন্য মাসের সত্তরটি ফরজ আদায়ের সমান প্রতিদান। যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করাবে, তার জন্য রয়েছে পাপ মোচন ও জাহান্নাম থেকে মুক্তি এবং রোজাদারের মতোই তাকে প্রতিদান দেয়া হবে; কিন্তু রোজাদারের প্রতিদান কমানো হবে না।

প্রশ্ন করা হলো- হে আল্লাহর রাসূল, রোজাদারকে ইফতার করানোর মতো সামর্থ্য আমাদের প্রত্যেকের নেই। তিনি বললেন, যে কেউ কোনো রোজাদারকে একটু দুধ, একটি খেজুর কিংবা একটু পানীয় দিয়ে ইফতার করাবে, তাকেই আল্লাহ তায়ালা এ প্রতিদান দেবেন। আর যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে তৃপ্ত করে আহার করাবে, আল্লাহ তায়ালা তাকে হাউজে কাউছার থেকে পানি পান করাবেন। এ মাসের প্রথম ভাগে রহমত, মধ্য ভাগে মাগফিরাত ও শেষ ভাগে রয়েছে জাহান্নাম থেকে মুক্তি। এটা ধৈর্যের মাস। আর ধৈর্যের প্রতিদান জান্নাত। এটা সমবেদনার মাস। এ মাসে মুমিনের রিজিক বাড়িয়ে দেয়া হয়। যে ব্যক্তি তার অধীনস্থের কাজের ভার লাঘব করবে, আল্লাহ তাকে ক্ষমা করবেন এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তি দেবেন।

তিরমিজি শরিফে বর্ণিত আছে, মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আরো ইরশাদ করেছেন, রমজান মাস শুরু হলে জান্নাতের দরজাগুলো খুলে দেয়া হয়; সারা মাস তা আর বন্ধ করা হয় না। জাহান্নামের দরজাগুলো বন্ধ করা হয়; সারা মাস তা আর খোলা হয় না। আল্লাহর পক্ষ থেকে ঘোষণা করা হয়, হে কল্যাণ অন্বেষণকারী, তুমি অগ্রসর হও। আর হে অকল্যাণ অন্বেষণকারী, তুমি নিবৃত্ত হও।

মাহে রমজানের এসব কল্যাণ লাভ ও কর্তব্য পালনে অঙ্গীকারবদ্ধ হওয়া আজ সবার একান্ত কর্তব্য।