রাঙামাটি সড়কে হালকা যান চলাচল শুরু

রাঙামাটি-চট্টগ্রাম সড়কে বুধবার বিকাল থেকে যানবাহন চলাচল শুরু হয়েছে। তবে এখনো ভারী যানবাহন চলাচলের অনুমতি নেই এই সড়কে।

গত ১৩ জুন মঙ্গলবার রাঙামাটিতে পাহাড় ধস হলে রাঙামাটি-চট্টগ্রাম মহাসড়কে রাঙামাটি সদরের সাপছড়ি ইউনিয়নের শালবাগানে ধসে পড়ে মূল সড়কটি। এতে রাঙামাটি বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে সারা দেশে থেকে। সড়ক ও জনপদ বিভাগ এবং সেনাবাহিনীর সদস্যরা দিনরাত কাজ করে সড়কটি হালকা যান চলাচলের জন্য উপযোগী করে তুলেন। বুধবার বেলা আড়াইটায় হালকা যান চলাচলের ঘোষণা দেন চট্টগ্রাম বিভাগের জিওসি মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার।

এ সময় উপস্থিত ছিলেন সড়ক পরিবহন সচিব এম এন কে ছিদ্দিকি, চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার মো. রহুল আমিন, রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মানজারুল মান্নান, রাঙামাটি রিজিয়ন কমান্ডার গোলাম ফারুক, পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান।

সড়কটিতে যান চলাচলের উপযোগী ঘোষণা দেয়ার পর তিনি তার গাড়িতে করে সংস্কার করা সড়ক দিয়ে রাঙামাটি শহরে আসেন। এরপর পরই শুরু হয় যান চলাচল।

সড়ক ও জনপদ বিভাগের রাঙামাটি উপসহকারী প্রকৌশলী মো. আবু মুছা বলেন, সড়ক জনপদ ও সেনাবাহিনীর দিনরাত কাজের মাধ্যমে সড়কে যান চলাচলের উপযোগী করা সম্ভব হয়েছে। মানুষের স্বস্তি দেখে আমাদের যে কষ্ট তা কষ্ট মনে না করে আনন্দ লাগছে। এতদিন মানুষের দুর্ভোগ তা শেষ হলো। তবে এখনই শেষ নয়, আরও অনেক কাজ বাকি আছে।

জিওসি মেজর জেনারেল জাহাঙ্গীর কবির তালুকদার, আমাদের প্রধান লক্ষ্য ছিল সড়কে যান চলাচল স্বাভাবিক করা। তা আমরা করতে পেরেছি। এই কাজে শেষ নয়। আরও অনেক কাজ করতে হবে। সড়কে ক্ষতির যে ব্যাপকতা তা সময় লাগবে।

সড়ক পরিবহন সচিব এম এন কে ছিদ্দিকি বলেন, এটি প্রাথমিক কাজ। এই কাজ সম্পন্ন হওয়ার পর হালকা যান চলাচল করবে। ভারী যান আপাতত চলবে না। পাহাড় ধসে সড়কে ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। চট্টগ্রাম-রাঙামাটি সড়কটি বেশি গুরুত্ব দেয়ায় অন্য কাজগুলো পড়েছিল। এখন এগুলোর কাজ শুরু হবে। সড়ক উন্নয়নে যা যা করণীয় তা করা হবে।

রাঙামাটি পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান বলেন, সড়কে যেন ভারী যান চলাচল করতে না পারে সেজন্য ভাঙা সড়কের দুই দিকে দুটি পুলিশ চেকপোস্ট বসানো হয়েছে। তারা যান চলাচল নিয়ন্ত্রণে কাজ করবে।

জেলা পরিষদের সংবাদ সম্মেলন

রাঙামাটিতে পাহাড় ধসের ঘটনায় রাঙামাটি জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান বৃষকেতু চাকমা বুধবার বিকাল সাড়ে ৩টায় এক সংবাদ সম্মেলন করেন।

জেলা পরিষদের সম্মেলন কক্ষে বৃষকেতু চাকমা বলেন, রাঙামাটিতে একটানা ভারী বর্ষণে স্মরণকালের ভয়াবহ পাহাড় ধসের ঘটনায় যেসব মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে তাদের সবধরনের সহায়তা করতে বর্তমান সরকার বদ্ধপরিকর। ইতোমধ্যে সরকারের অনেক মন্ত্রী ও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা রাঙামাটির দুর্গত এলাকা পরিদর্শন শেষে নিহতদের পরিবার ও আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা পরিবারদের সাথে কথা বলেছেন এবং তাদের জন্য ত্রাণসামগ্রী বরাদ্দ দিয়েছেন।

চেয়অরম্যান বলেন, ঘটনার দিন হতে পরিষদ হতে পাহাড় ধসের ঘটনায় সকল নিহত, আহত এবং আশ্রয়কেন্দ্রে থাকা আশ্রিতদের খাবার চিকিৎসাসেবা ও বিনামূল্যে ওষুধ বিতরণ করেছে জেলা পরিষদ।

বৃষকেতু চাকমা বলেন, রাঙামাটির কর্মরত সংবাদকর্মীরা জেলা পরিষদের কার্যক্রমের পাশে থেকে পরিষদের কর্মকাণ্ড তুলে ধরে যে সহায়তা দিয়েছে তা প্রসংসনীয়। তিনি মানবতার সেবায় সবাইকে একযোগে কাজ করার আহ্বান জানান।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন মঙ্গলবার ভোর ও সকালে রাঙামাটি জেলা বিভিন্ন এলাকায় পাহাড় ধসে সেনাবাহিনীর চার সদস্যসহ ১১৮ জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে রাঙামাটি শহর এলাকায় মারা যায় ৭০ জন, কাউখালী উপজেলায় ২৩ জন, কাপ্তাই উপজেলায় ১৮ জন, বিলাইছড়িতে তিনজন এবং জুরাছড়ি উপজেলায় মারা গেছে চারজন।