‘রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতা করা ইসির কাজ নয়’

প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) একেএম নুরুল হুদা বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতা করা নির্বাচন কমিশনের কাজ নয়। অনেক বিদেশি, এনজিও দুই দলের সঙ্গে মধ্যস্থতা করার চেষ্টা করেছে। কিন্তু কোনো কাজ হয়নি। আমাদের কারও কাছে যাওয়ার দরকার নেই। ইসি একটি স্বাধীন সত্তা। আমরা শপথ নিয়েছি কারও চাপে নতি স্বীকার করব না। কারও কাছে যাব না। এটাই যথেষ্ট।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে বৃহস্পতিবার দেশের জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এসব কথা বলেন সিইসি।

এর আগে সকাল ১০টা ২০ মিনিটে সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসে ইসি।

আগের দিন বুধবার সংবাদপত্রের সম্পাদক ও জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের সঙ্গে বৈঠক করার পর আজ টেলিভিশন, অনলাইন ও রেডিও’র জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকদের মতামত নেয়া হয়।

সিইসি বলেন, নির্বাচনের সময় কী ধরনের সরকার থাকবে- সে ব্যাপারে কমিশনের কোনো ভূমিকা নেই। ইসি একটি টেকনিক্যাল প্রতিষ্ঠান। সরকার যে নির্বাচন পদ্ধতি সেট করে দেয় সেভাবেই নির্বাচন আমাদের করতে হয়। এক সময় ছিল ‘ইয়েস-নো’ ভোট। সেই সময়কার কমিশনই সেভাবেই ভোট করেছে। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় যে পদ্ধতি ছিল, তারা সেটা করেছে। কাজেই সব কিছু নির্ভর করে সরকার কোন ধরনের পরিবেশ সেট করে দেয় তার উপর।

সিইসি বলেন, এখন যে অবস্থা আছে তা যদি পরিবর্তন না হয়, তাহলে এই সরকারের অধীনে নির্বাচন করতে হলে আমরা তাই করব। আর যদি সরকার পরিবর্তন করে তাহলে সেভাবে হবে। কাজেই নির্বাচনের সময় কোন ধরনের সরকার থাকবে সে ব্যাপারে আমাদের কোনো ভূমিকা থাকার কথা নয়। আমরা তা পারিও না।

নির্বাচনে সেনা মোতায়েন সংক্রান্ত এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, আর্মি (সেনাবাহিনী) থাকবে কি থাকবে না- এটা ইসির সিদ্ধান্ত। যদি পরিস্থিতির বিবেচনায় মনে করি দরকার আছে, তবে থাকবে।

বর্তমান পরিস্থিতি নির্বাচনের অনুকূল রয়েছে দাবি করে নূরুল হুদা বলেন, বর্তমানে আমরা অনুকূল ও আস্থাশীল অবস্থানে রয়েছি। কেউ আমাদের ডিস্টার্ব (বিরক্ত) করেনি। কমিশনে কেউ তার দাবি-দাওয়া নিয়ে আসেনি। আমরা এখনও পর্যন্ত আস্থাশীল আছি এবং থাকব।

দুর্বলতা নেই, শত্রুতাও নেই
অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আমরা অঙ্গীকারবদ্ধ উল্লেখ করে সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানটির প্রধান বলেন, কারও প্রতি আমাদের দুর্বলতা নেই বা কারও প্রতি কোনো শত্রুতা নেই। কারও প্রতি কোনো আর্কষণও নেই, কারও প্রতি বিকর্ষণও নেই। আমাদের আকর্ষণ-বিকর্ষণ যাই বলেন সেটা রয়েছে নির্বাচনী আইনের প্রতি। এ জন্যই আমরা আপনাদের বিরক্ত করছি। ব্যস্ততার মধ্যেও আপনাদের আমন্ত্রণ করেছি। আমরা আপনাদের সহেযোগিতা ও সমর্থন চাই।

তিনি বলেন, নির্বাচনের মাঠে অনেক সমস্যা ও জটিলতা রয়েছে। অন্যদেশের তুলনায় এই সমস্যা আমাদের আরও বেশি। কারণ, গণতান্ত্রিক লঙ্গিজিবিটি (স্থায়িত্ব) আমাদের কম আছে। কখনও হ্যাঁ-না ভোট, কখনও নির্বাচনী সরকারের অধীনে নির্বাচন, এক ব্যক্তির অধীনে নির্বাচন- এই অবস্থায় চলেছি। একটানা তিনটি নির্বাচন একটি নিয়মে আমরা করতে পারিনি। কাজেই সমস্যা তো আমাদের রয়েছেই।

সাংবাদিকের সঙ্গে বৈঠকের পর ২৪ আগস্ট থেকে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বৈঠক শুরু করবে ইসি। ওই দিন সকালে বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট-বিএনএফের সঙ্গে সংলাপ হওয়ার কথা রয়েছে। তারপর বিকেল ৩টায় বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের (মুক্তিজোট) সঙ্গে বসবে ইসি।

পরে ২৮ আগস্ট কেলা ১১টায় বাংলাদেশ মুসলিম লীগ আর বিকেল ৩টায় খেলাফত মজলিশের সঙ্গে বসবে ইসি।

৩০ আগস্ট বেলা ১১টায় বাংলাদেশ বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টি আর বিকেল ৩টায় জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টির সঙ্গে বসবে সাংবিধানিক এ প্রতিষ্ঠানটি।