রায়ে জিয়ার বিষয়ে বক্তব্য মানছেন না ফখরুল

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়কে যুগান্তকারী ও জনগণের মনের কথা বললেও এই রায়ের একটি অংশ মেনে নিতে নারাজ বিএনপি। জিয়াউর রহমান ও এরশাদের সামরিক শাসনামলের কথা উল্লেখ করে করা মন্তব্যের প্রতিক্রিয়ায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের শাসনামল অবৈধ হলে আওয়ামী লীগ অবৈধ।’

শনিবার দুপুরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে শ্রদ্ধা জানাতে এসে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবকদলের ৩৭ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শ্রদ্ধা জানানো হয় এ সময়।

সংবিধানের ষোড়শ সংধোধনী অবৈধ ঘোষণা করে ২০১৫ সালের ৫ মে প্রকাশিত রায়ে ‘জিয়াউর রহমান আর্মি রুলস ভঙ্গকারী অবৈধ দখলদার রাষ্ট্রপতি’ বলা হয়। আর গত ১ আগস্ট আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান এবং জাতীয় পার্টির প্রতিষ্ঠাতা হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলের কথা উল্লেখ করে রায়ের পর্যবেক্ষণে বলা হয়, “ক্ষমতালোভীরা দুবার আমাদের রাষ্ট্রকে ‘ব্যানানা রিপাবলিকে’ পরিণত করেছিল, যেখানে ক্ষমতালোভীরা তাদের অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধতা দেওয়ার জন্য জনগণকে পণ্যরূপে দেখেছে, ধোঁকা দিয়েছে। তারা জনগণের ক্ষমতায়ন করেনি, অপব্যবহার করেছে। তারা নানা রকম ধোঁকাবাজির আশ্রয় নিয়েছে। কখনো ভোটের নামে, কখনো জোরপূর্বক নির্বাচনের মাধ্যমে, কখনো নির্বাচন না করে। এর সবটাই করা হয়েছে তাদের ক্ষমতাকে দীর্ঘায়িত করতে। আর এর মধ্য দিয়েই সুস্থ ধারার রাজনীতি পুরোপুরি ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়েছে। এসব অগণতান্ত্রিক শাসনামলের নোংরা রাজনীতির চর্চা আমাদের সার্বিক জনরাজনীতিকে মারাত্মক ক্ষতি করেছে।”

সুপ্রিম কোর্টের রায় প্রকাশের পর থেকে এর ভূয়সী প্রশংসা করে আসছে বিএনপি। শুক্রবার নীলফামারীতে বন্যার্তদের মধ্যে ত্রাণ বিতরণ করতে গিয়ে আওয়োমী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এ বিষয়টি নিয়ে কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণার রায়ে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জেনারেল জিয়াউর রহমানের অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল এবং উড়ে এসে জুড়ে বসা বিষয়টি প্রতিষ্ঠিত হওয়ার বিষয়ে বিএনপির মৌনতা প্রকাশ করেছে। আমরা ধরে নেব বিএনপির মৌনতা সুপ্রিম কোর্টের রায়কে মেনে নিয়েছে।’

জিয়াউর রহমানের শাসনামলকে বিএনপি অবৈধ বলে মেনে নিয়েছে?-এ বিষয়ে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘জিয়াউর রহমানের শাসনের বৈধতা নিয়ে প্রশ্নই আসে না। বহুদলীয় গণতন্ত্র, মানুষের কথা বলার অধিকার, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা ফিরিয়ে দেয়া অবৈধ হতে পারে না।’

‘শুধু তাই নয়, জিয়াউর রহমানের সময়ে বিধিমালা অনুসরণ করেই আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল হিসেবে নিবন্ধন করেছে। পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত সকল রাজনৈতিক কার্যক্রম করে যাচ্ছে। ফলে জিয়ার শাসন অবৈধ হয়ে থাকলে আজকের আওয়ামী লীগ অবৈধ। মূলত আওয়ামী লীগের স্বভাবজাত কৌশল মূল বিষয়ে উল্টাপাল্টা কথা বলে জনগণকে বিভ্রান্ত করা।’

ষোড়শ সংশোধনীর রায়কে নিয়ে সরকার ভয়াবহ পরিস্থিতি সৃষ্টির চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন ফখরুল। বলেন, ‘ফলে রাষ্ট্র ও গণতন্ত্র বিপদগ্রস্ত হয়ে পড়েছে। বিচারবিভাগের সুপ্রিম কোর্টের রায় নিয়ে এ ধরণের অবস্থা আগে কখনও দেখিনি। তারা সরকারি দল সংক্ষুব্ধ। তারা জোর করে প্রধান বিচারপতির সাথে দেখা করেছেন। এবং রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাৎ করেছে। শুধু তাই নয়, আইনমন্ত্রী ও অ্যার্টনি জেনারেলকে সাথে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীও রাষ্ট্রপতির সাথে সাক্ষাত করেছেন যাতে সমগ্র জাতি উদ্বিগ্ন। তারা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ধ্বংস করতে চায়। আসলে সরকার চায় এই রাষ্ট্রের সকল গণতান্ত্রিক স্তম্ভ ধ্বংস করে আবার সেই একদলীয় শাসন ব্যবস্থায় ফিরে যাওয়া।

বিএনপির সহায়ক সরকারের রূপরেখায় ষোড়শ সংশোধনী রায়ের প্রতিফলন থাকবে কি না জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, যখন ‘সহায়ক সরকারের রুপরেখা প্রকাশ হবে তখন জানতে পারবেন।’

ইসির সঙ্গে সংলাপ প্রসঙ্গ

আগামী ২৪ আগস্ট থেকে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসতে যাচ্ছে। বিএনপি এই সংলাপের কী ভবিষ্যত দেখছে বা আলোচনায় তাদের এজেন্ডাই বা কী হবে-জানতে চাইলে ফখরুল বলেন, ‘সংলাপের ভবিষ্যত কী হবে তা সহজেই বুঝা যাচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশন তো বলেই দিয়েছেন তিনি শুধু শুনবেন, তারপর সিদ্ধান্ত নেবেন। আর বিএনপি সংলাপে কী ধরণের প্রস্তাব দেয় তা সংলাপকালীন সময়ে জানতে পারবেন।’

রাজনৈতিক দল গুলোরমধ্যে মতৈক্য ফেরানো ইসির কাজ নয়-প্রধান নির্বাচন কমিশনার কে এম নুরুল হুদার এমন মন্তব্যেরও সমালোচনা করেন ফখরুল। বলেন, ‘নির্বাচন কমিশনের কাজ কী? তাদের কাজ কী শুধু সরকার যা চাইবে সেই কাজ করা? নিশ্চয়ই নয়। সংবিধানে বলা আছে সকল রাজনৈতিক দলের অংশ গ্রহণের মাধ্যমে সকল ভোটারের ভোট প্রদানের মাধ্যমে একটা সুন্দর সহায়ক পরিবেশের মধ্যে ভোট নিশ্চিত করতে হবে নির্বাচন কমিশনের।’

দেশে একটা রাজনৈতিক সংকট আছে এবং এই পরিস্থিতিতে নিরপেক্ষ নির্বাচন হওয়া সম্ভব নয় বলে মনে করেন ফখরুল। বলেন, নির্বাচনকালীন সময়ে যদি নিরপেক্ষ সরকার না হয়, সেক্ষেত্রে নিরপেক্ষ নির্বাচন সম্ভব নয়। আর এজন্য বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকারের দাবি করে আসছেন।

ত্রাণ প্রথমে দিয়েছে বিএনপিই

ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি বন্যা দুর্গতের ত্রাণ দিচ্ছে না বলে ক্ষমতাসীনদের এই কথা কেউ বিশ্বাস করবে না। কারণ বিএনপিই প্রথম বন্যা দূর্গতদের মাঝে ত্রাণ সমাগ্রী বিতরণ শুরু করেছে। ইতোমধ্যে আমরা ত্রাণ কমিটি গঠন করেছি এবং আমাদের পক্ষে যতটা সম্ভব বন্যাদূর্গত মানুষের পাশে দাঁড়াচ্ছি। বরং সরকার কাজ না করে তাদের যে মুখের জোর আছে সেই দিয়ে জনগণকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে।’

বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শামসুজ্জামান দুদু, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, প্রশিক্ষণ বিষয়ক সম্পাদক এবি এম মোশাররফ হোসেন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি শফিউল বারী বাবু, সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাদের ভুঁইয়া জুয়েল, সাংগঠনিক ইয়াসিন আলীসহ সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।