রুদ্বশ্বাস জয়ে র‌্যাংকিংয়ে ছয়ে উঠল মাশরাফি বাহিনী!

একেই বলে আসল ক্রিকেট! এটাই ক্রিকেটের উত্তেজনা! ম্যাচের রং ক্ষণে ক্ষণে বদল হলো। কিন্তু শেষ হাসিটা হাসল টিম বাংলাদেশ। শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে ৫ উইকেটে হারিয়ে দিল মাশরাফি বাহিনী। এর ফলে শ্রীলঙ্কাকে হঠিয়ে প্রথমবারের মত র‌্যাংকিংয়ের ৬ নম্বরে উঠল টিম টাইগার। একইসঙ্গে নিউজিল্যান্ডকে বিদেশের মাটিতে প্রথমবার হারানোর স্বাদ পেল বাংলাদেশ। সৌজন্যে তামিম-সাব্বিরের গড়ে দেওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে মি. ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম এবং তার ভায়রা ভাই মাহমুদ উল্লাহ রিয়াদের অসাধারণ লড়াকু জুটি!

কিউইদের দেওয়া ২৭১ রানের টার্গেটে ব্যাট করতে নেমে ইনিংসের তৃতীয় বলেই প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। জিতেন প্যাটেলের বলটি তুলে মারতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে থাকা কোরি অ্যান্ডারসনের তালুবন্দী হন সৌম্য সরকার। দলীয় ৭ রানে প্রথম উইকেট হারানোর পর দারুণ জুটি গড়েন তামিম ইকবাল এবং সাব্বির রহমান। ধীরে ধীরে উইকেটে থিতু হয়ে আস্তে আস্তে হাত খোলেন। টানা ব্যর্থতায় সমালোচনায় জর্জরিত সাব্বির এদিন ভালোই সঙ্গ দিলেন তামিমকে। দুজনেই তুলে নিয়েছেন হাফ সেঞ্চুরি। ৫৪ বলে ৬ বাউন্ডারি এবং ১ ওভার বাউন্ডারিতে ক্যারিয়ারের ৩৬ তম ফিফটি পূর্ণ করেন তামিম। আর ৬৪ বলে ৮ বাউন্ডারিতে ক্যারিয়ারের ৫ম ফিফটি করেন সাব্বির।

দুজনের জুটি যখন তরতর করে এগিয়ে যাচ্ছিল তখনই ছন্দপতন! মিচেল স্যান্টনারকে তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন ৮০ বলে ৬৫ রান করা তামিম। শেষ হলো দ্বিতীয় উইকটে ১৩৬ রান অসাধারণ জুটি। সাব্বিরও টিকতে পারলেন না। দলের স্কোর আর মাত্র ৫ রান যোগ হতেই ৮৩ বলে ৯ বাউন্ডারিতে সমান ৬৫ রান করে মোসাদ্দেকের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে রানআউট হয়ে গেলেন তিনি। হতাশ করলেন তরুণ মোসাদ্দেকও। ১০ রান করে জিতেন প্যাটেলের বলে এলবিডাব্লিউয়ের ফাঁদে পড়লেন তিনি! মুহূর্তে ৩ উইকেট হারিয়ে এলোমেলো হয়ে গেল বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইনআপ।

এই বিপদের মুহূর্তে উইকেটে ছিলেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান এবং মি. ডিপেন্ডেবল মুশফিকুর রহিম। বলের সঙ্গে পাল্লা দেওয়াটা ততটা জরুরী ছিল না। কিন্তু বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসানের কী মনে হলো; হ্যাশিম ব্যানেটের বলটা অযথা তুলে মারতে গিয়ে সীমানার কাছে স্যান্টনারের তালুবন্দী হলেন তিনি! আউট হওয়ার আএ ৩২ বলে ২ বাউন্ডারিতে করেছেন ১৯ রান। মুশফিকের সঙ্গী হলেন মাহমুদ উল্লাহ। দুই ভায়রা ভাই মিলে অসাধারণ ব্যাটিংয়ে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে গেলেন।

এর আগে ডাবলিনের কন্ট্লাফ ক্রিকেট ক্লাব গ্রাউন্ডে টসে হেরে ব্যাট করতে নেমে ৮ উইকেটে ২৭০ রান তোলে নিউজিল্যান্ড। কিউই দূর্গে প্রথম আঘাত হানেন কাটার মাস্টার মুস্তাফিজুর রহমান। তার শিকার হয়ে সাকিব আল হাসানের তালুবন্দী হন লুক রঞ্চি (২)। এরপরেই শুরু হয়ে যায় ক্যাচ মিসের মহড়া! একের পর এক সহজ ক্যাচ মাটিতে পড়তে থাকে! নাসির, মোসাদ্দেকের পর ভালো ফিল্ডার হিসেবে পরিচিত সৌম্য সরকারও ক্যাচ ছাড়েন।

অবশেষে নাসিরের বলে নেইল ব্রুমের দেওয়া দারুণ একটা ক্যাচ লুফে নিয়ে ক্যাচ মিসের মহড়ার ইতি টানেন টাইগার ক্যাপ্টেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ৭৬ বলে ৭ বাউন্ডারিতে ৬৩ রান করা নেইল ব্রুম ল্যাথামের সঙ্গে দ্বিতীয় উইকেটে ১৩৩ রানের বিশাল জুটি গড়েছিলেন। পরের ওভারে ল্যাথামকেও (৮৪) বোল্ড করে দেন নাসির। টাইগার শিবিরে যেন নতুন উদ্যম ফিরে আসে। কোরি অ্যান্ডারসনকে (২৪) মাহমুদ উল্লাহর ক্যাচে পরিণত করেন সিরিজজুড়ে নিষ্প্রভ থাকা সাকিব আল হাসান। এরপর মঞ্চে আবির্ভাব টাইগার ক্যাপ্টেনের। ম্যাশের বলে টাইমিং মিস করে মাহমুদ উল্লাহর সহজ ক্যাচে পরিণত হন জেমস নিশাম (৬)।

দ্রুত উইকেট পতনে ম্যাচের রাশ টেনে ধরতে সক্ষম হয় বাংলাদেশ। মাশরাফি-সাকিব যেন উইকেট উৎসবে মেতে ওঠেন। ফিরতি ওভারে বোলিংয়ে এসে স্যান্টনারকে ০ রানে প্যাভিলিয়নের পথ ধরান সাকিব আল হাসান। পরের ওভারে কলিন মুনরোকে ১ রানে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসবন্দী করে বিদায় করেন মাশরাফি। উইকেট উৎসবে যোগ দেন রুবেল হোসেনও। ম্যাট হেনরির (৫) স্টাম্প ছত্রখান করে দেন তিনি। এর আগেই অবশ্য হাফ সেঞ্চুরি তুলে নেন অভিজ্ঞ রস টেইলর। তিনি শেষ পর্যন্ত ৬০ রানে অপরাজিত থাকেন।