রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদে ঘটল বিরল ঘটনা

রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদে ঘটল বিরল এই ঘটনা। এই সংকট নিরসনে প্রথমবারের মতো একমত হতে পেরেছে নিরাপত্তা পরিষদের ১৫টি সদস্য রাষ্ট্র। সিঙ্গাপুরভিত্তিক সংবাদমাধ্যম চ্যানেল নিউজ এশিয়া জানিয়েছে, মিয়ানমারের ঘনিষ্ঠ মিত্র চীন রোহিঙ্গাদের দেশে ফেরার অধিকার সংক্রান্ত এক মিসরীয় প্রস্তাবে আপত্তি জানালেও পরে ১৫টি সদস্য রাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সর্বসম্মতভাবে দীর্ঘমেয়াদে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সম্মত হয়। নিরাপত্তা পরিষদের পক্ষ থেকে রাখাইনের সামরিক অভিযানে ‘মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ’র অভিযোগ তোলা হয়। সেখানকার চলমান সহিংসতা বন্ধের আহ্বান জানিয়ে ত্রাণকর্মীদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিতের তাগিদ দেওয়া হয়। ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানিয়েছে, বিগত ৯ বছরে কোনও ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের এমন ঐকমত্য এবারই প্রথম। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ একে ‘বিরল ঐকমত্য’ আখ্যা দিয়েছে।
নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠক

বৃহস্পতিবার চ্যানেল নিউজ এশিয়ার এক প্রতিবেদনে থেকে জানা যায়, বুধবার নিরাপত্তা পরিষদের রুদ্ধদ্বার বৈঠকের শুরুতে জাতিসংঘের এক কর্মকর্তা রাখাইন রাজ্য এবং সেখানকার অধিবাসী রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সর্বনাশা পরিস্থিতি তুলে ধরেন। ওই রাজ্যে মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনীর অভিযানে মাত্রাতিরিক্ত বলপ্রয়োগ হয়েছে বলে সর্বসম্মত অভিযোগ তোলে সংস্থার ১৫ সদস্য রাষ্ট্র। সহিংসতার নিন্দা জানিয়ে তা বন্ধে ‘আশু পদক্ষেপ’ গ্রহণে মিয়ানমারকে সর্বসম্মত আহ্বান জানায় তারা।

রাখাইনের দুর্গত মানুষদের কাছে নির্বিঘ্নে ত্রাণ সহায়তা পৌঁছাতে মিয়ানমার সরকারকে ত্রাণকর্মীদের অবাধ প্রবেশাধিকার নিশ্চিতেরও তাগিদও দিয়েছে পরিষদের ১৫ সদস্য রাষ্ট্র।

কূটনীতিকদের বরাত দিয়ে চ্যানেল নিউজ এশিয়ার প্রতিবেদনে বলা হয়, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার অধিকার রক্ষায় মিসরের পক্ষ থেকে একটি প্রস্তাব আনা হয়। তবে মিসরীয় প্রস্তাবটি চীন নাকচ করে দেয়। এরপর ১৫টি সদস্য রাষ্ট্রই সহিংসতা বন্ধে একমত পোষণ করে।

সহিংসতা বন্ধের পাশাপাশি নিরাপত্তা পরিষদের বৈঠকে রাখাইনের পরিস্থিতি স্বাভাবিক করা, আইনশৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠা, নাগরিকদের সুরক্ষা, সামজিক ও আর্থিক কর্মকাণ্ড স্বাভাবিক করা এবং শরণার্থী সংকট নিরসনের আহ্বান জানানো হয়। নিরাপত্তা পরিষদের বিবৃতিতে শরণার্থীদের সহায়তা দেওয়ার জন্য বাংলাদেশকে ধন্যবাদ জানানো হয় এবং জাতিসংঘ ও অন্যান্য সংস্থাগুলোকেও এ বিষয়ে বাংলাদেশকে সহায়তা দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।

বৈঠকে নিরাপত্তা পরিষদের সদস্যরা রাখাইন সংকটের একটি দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের বিষয়ে একমত হয়েছে এবং কফি আনান কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়েছে। জাতিসংঘে ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত ম্যাথুই রাইক্রফট জানান, পরিষদের অনেক সদস্য রোহিঙ্গা ইস্যুতে উন্মুক্ত আলোচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তারা এ ইস্যুতে প্রেসিডেন্সিয়াল বিবৃতিরও আহ্বান জানিয়েছেন, যা অফিসিয়াল রেকর্ড হিসেবে থাকবে।

এদিকে বার্তা সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মিয়ানমার ইস্যুতে দীর্ঘ ৯ বছর পর নিরাপত্তা পরিষদের সব সদস্যের ঐক্যমত্যের ভিত্তিতে এই বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। রাইক্রফট বলেন, ৯ বছর পর কোনও বিষয় নিয়ে একমত হতে সক্ষম হলো নিরাপত্তা পরিষদ। তিনি বলেন, ‘আমরা রাখাইনের পরিস্থিতি নিয়ে সবাই একমত।’ হিউম্যান রাইটস ওয়াচের জাতিসংঘ বিষয়ক পরিচালক অক্ষয় কুমার বলেন, ‘আজকে আমাদের জন্য অনেক বড় অর্জনের দিন। মিয়ানমার ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদ একমত হয়েছে যেটা খুবই বিরল ঘটনা।’