‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে শেখ হাসিনার আহ্বানে সাড়া দেবে বিশ্ব’

রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান করতে মিয়ানমার সরকারের প্রতি চাপ সৃষ্টির যে আহ্বান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাতে সব দেশই সাড়া দেবে বলে আশা করছেন আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য ও ১৪ দলীয় জোটের মুখপাত্র মোহাম্মদ নাসিম।

রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের বন্ধুপ্রতিম দেশ ভারত মিয়ানমারকে সমর্থন করছে এ বিষয়টা আপনারা কীভাবে দেখছেন-এমন প্রশ্নের জবাবে নাসিম এই আশা প্রকাশ করেন। শনিবার দুপুরে ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে জোটের বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন নাসিম।

‘সরকারের নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে মিয়ানমারের ওপর চাপ সৃষ্টি করা যাচ্ছে না’ বিএনপির এমন অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘সরকারের কূটনৈতিক সাফল্যর কারণে আজ জাতিসংঘ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ অনেক দেশ রোহিঙ্গাদের ওপর চলা নির্যাতনের নিন্দা করেছে। বিএনপির কথার কোনো গুরুত্ব নেই, তারা অর্থহীন সমালোচনা করে।’

‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে সরকার সুবিধাবাদী অবস্থান নিয়েছে’ বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের এমন বক্তব্যের জবাবে মোহাম্মদ নাসিম বলেন, ‘সমগ্র বিশ্ব দেখছে কীভাবে শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান সরকার এই সমস্যা মোকাবেলায় কাজ করছে। সুতরাং বিএনপি নেতাদের বক্তব্য অর্থহীন এবং অবিবেচকতার পরিচায়ক।’

বিএনপির উদ্দেশ্যে নাসিম বলেন, ‘যেকোনো বিষয়কে ইস্যু করা উচিত না। এটি একটি মানবিক ইস্যু। এখানে কোনো রকম ইস্যু তৈরি না করে, ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার চেষ্টা না করে সমস্যা সমাধানে এগিয়ে আসুন। অন্য সময়ে যাই করে থাকুন না কেন এই ইস্যুতে সরকারকে সহায়তা করুন। সমালোচনা করার সময় এখন না, এখন সরকারকে সহায়তা করার সময়।’

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেন, ‘মিয়ানমারের সরকার রোহিঙ্গাদরে ওপর যে নির্যাতন ও গণহত্যা চালাচ্ছে তা আমরা কোনোভাবে সমর্থন করতে পারি না। যেকোনো দেশের রাজনৈতিক সমস্যা সমাধান করতে হবে রাজনৈতিকভাবে। গণহত্যা করে কোনো সমস্যা সমাধান করা যায় না। এটা মানবতার চরম লঙ্ঘন। আমাদের সরকার সম্পূর্ণ মানবিক কারণে রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়েছে। কিন্তু এটা চলতে পারে না। আমাদের মতো একটা জনবহুল দেশে অন্য একটি দেশের নাগরিকদের আশ্রয় দিতে পারি না।’

বাংলাদেশ ওয়ার্কাস পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা শুধু মানবিক বিপর্যয় নয়, এর সাথে আমাদের জাতীয় নিরাপত্তার প্রশ্নও জড়িত। এ অঞ্চল দিয়ে বিভিন্ন অস্ত্রধারী গ্রুপ তাদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছে। রোহিঙ্গা সমস্যা আমাদের জাতীয়| নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা যাতে নষ্ট না করতে পারে সেই দিকে সবাইকে নজর দিতে হবে। এজন্য আমাদের জাতীয় ঐক্যমত প্রয়োজন। কিন্তু বিএনপি-জামায়াত জোট এ নিয়ে একটি পরিস্থিতির সুযোগ গ্রহণ করতে চাচ্ছে। যা সঠিক নয়।’

জাতীয় পার্টির (জেপি) মহাসচিব শেখ শহীদুল ইসলাম বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ সমস্যা। এর সমাধান সে দেশের সরকারকে করতে হবে। রোহিঙ্গাদের সম্পূর্ণ নিরাপত্তা দিয়ে পূর্ণ নাগরিক মর্যাদা দিয়ে তাদের দেশের ফেরত নেয়ার ব্যবস্থা মিয়ানমার সরকারকেই করতে হবে। আমাদের সরকার মানবিক দিক বিবেচনা করে ব্যবস্থা নিয়েছে।’

মিয়ানমার-বাংলাদেশ সীমান্তে স্থল মাইন স্থাপন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘মানব চলাচলের জায়গায় স্থলমাইন স্থাপন আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী এটা মানবতাবিরোধী অপরাধ।’

এর আগে তরিকত ফেড়ারেশনের চেয়ারম্যান সৈয়দ নজিবুল বশর মাইজভান্ডারীর সভাপতিত্বে বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন, আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আহমদ হোসেন, আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন, দপ্তর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, উপ-দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়া।

জাসদ একাংশের সভাপতি শরীফ নুরুল আম্বিয়া, সাধারণ সম্পাদক নাজমুল হক প্রধান, জাসদ একাংশের সাধারণ সম্পাদ শিরিন আখতার, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টি সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা, গণতান্ত্রিক পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহাদাৎ হোসেন প্রমুখ।