‘রোহিঙ্গা এসেছে চার লাখ ২৪ হাজার, নিবন্ধিত হয়েছে ৫৫৭৫ জন’

মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর অভিযানে গত ২৫ দিনে ৪ লাখ ২৪ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন। এদের মধ্যে মাত্র ৫ হাজার ৫৭৫ জন বায়োমেট্রিক পদ্ধতিতে নিবন্ধিত হয়েছেন।

বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া এ তথ্য জানিয়েছেন।

মন্ত্রী বলেন, ‘২৫ আগস্টের পর থেকে নতুন করে বিপুল সংখ্যক মিয়ানমার নাগরিক জীবনের ঝুঁকি নিয়ে নদী ও সাগর পথে বাংলাদেশে আসছে। নারী-শিশু ও অসহায় অনুপ্রবেশকারীদের করুন চিত্র বিশ্ববাসীর নজরে এসেছে এবং বাংলাদেশ ও বিশ্ববাসী এ নিয়ে বিশেষ উদ্বিগ্ন। অসহায় এসব মানুষগুলোর দুঃখ-দুর্দশা মানবিক সংকট তৈরি করেছে।’

তিনি বলেন, ‘আমরা বিষয়টি সম্পূর্ণ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে বিবেচনা করছি। বাংলাদেশের জন্য কষ্টকর হলেও এমন মানবিক সংকটে রোহিঙ্গাদের সাময়িক সময়ের জন্য সীমান্তবর্তী কুতুপালং ক্যাম্পের পাশে নতুন ক্যাম্প করে তাদের আশ্রয়ের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। তাদের জন্য বাংলাদেশের পক্ষে সম্ভব সব ধরনের মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করা হচ্ছে।’

তবে এ সংকটের সমাধান হয়ে যাবে এবং অতিদ্রুত মিয়ানমার তার নাগরিকদের ফেরত নেবে বলে আশা প্রকাশ করেন এ মন্ত্রী।

মায়া বলেন, গত ২৫ আগস্ট থেকে ২০ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত আগত অনিবন্ধিত রোহিঙ্গার সংখ্যা ৪ লাখ ২৪ হাজার। তবে তারা প্রতিনিয়ত স্থান পরিবর্তন করায় এবং বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান করায় প্রকৃত সংখ্যা কম বা বেশি হতে পারে। এখন পর্যন্ত সম্পাদিত বায়োমেট্রিক নিবন্ধন করা হয়েছে ৫ হাজার ৫৭৫ জনের।

দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ সচিব মো. শাহ কামাল বলেন, ‘পুরোটা শেষ করতে ২ মাস লাগবে। দশটি পয়েন্টে নিবন্ধন কাজ হলেও আজ (২১ সেপ্টেম্বর, বৃহস্পতিবার) থেকে তা বাড়িয়ে ৩০টি করা হয়েছে।’

ত্রাণমন্ত্রী বলেন, এখন পর্যন্ত জেলা প্রশাসন, ইউএনএইচসিআর, আইওএম, বিশ্বখাদ্য কর্মসূচি, ইউএনএফপিএ, ইউনিসেফ, এসিএফসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সহযোগী সংস্থা নতুন আসা রোহিঙ্গাদের সাহায্য-সহযোগিতা করেছে। রোহিঙ্গাদের জন্য দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ৫০০ মেট্রিক টন জিআর চাল ও নগদ ৩০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়েছে।

বিদেশিদের ত্রাণ সম্পর্কে তিনি বলেন, ‘এ পর্যন্ত দেশি-বিদেশি সংস্থা থেকে প্রায় ২৫০ মেট্রিক টন চাল পাওয়া গেছে। এ ছাড়া ২০ টন আটাসহ অন্যান্য ত্রাণ সমগ্রী পাওয়া গেছে। ডব্লিউএফপি (বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচি) আগামী ৪ মাস ৪ লাখ পরিবারকে খাবার সহায়তা দেয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে।’

মন্ত্রী বলেন, ‘কুতুপালং এলাকায় প্রায় ২ হাজার একর জায়গায় ১৪ হাজার শেড নির্মাণের কাজ দ্রুত গতিতে করা হচ্ছে। ত্রাণ বিতরণ সুষ্ঠু করতে ১৩টি স্থান নির্ধারণ করা হয়েছে এবং বিক্ষিপ্তভাবে কেউ যাতে ত্রাণ বিতরণ করতে না পারে সে জন্য ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।’

সব রোহিঙ্গাদের নির্মাণাধীন ক্যাম্পে নিয়ে আসার আগ পর্যন্ত খাওয়ার ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে ৮টি স্থানে প্রতিদিন এক বেলা রান্না করা খাবার সরবরাহ করা হচ্ছে জানিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘স্বাস্থ্য সেবা দিতে ৩৬টি মেডিকেল টিম কাজ করছে। জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতর প্রতিদিন ১৪ হাজার ইউনিট খাবার পানি সরবরাহ করছে। একই সঙ্গে ১০০ টিউবওয়েল স্থাপন ও ৫০০ অস্থায়ী টয়লেট নির্মাণ করছে।’

ইতোমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় থেকে ১৩ জন সিনিয়র সহকারী সচিব ও ৮ জন উপ-সচিবের শরণার্থী কার্যক্রমের জন্য মাঠ পর্যায়ে ন্যস্ত করেছে বলেও জানান মন্ত্রী।

সংবাদ সম্মেলনে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরের মহাপরিচালক রিয়াজ আহমেদ উপস্থিত ছিলেন।