রোহিঙ্গা সঙ্কট সমাধানে শেখ হাসিনার পাঁচ দফা প্রস্তাব

জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭২তম অধিবেশনের সাধারণ বিতর্কে অংশ নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মিয়ানমারে জাতিগত নিধন চিরতরে বন্ধ এবং রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেয়াসহ সঙ্কট সমাধানে বিশ্বনেতাদের পাঁচ দফা প্রস্তাব দিয়েছেন। তিনি তার ভাষণে যেসকল রোহিঙ্গা জাতিগত নিধনের শিকার হয়ে নিজ দেশ থেকে জোরপূর্বক বিতাড়িত; তাদের দ্রুত নিজ ভূমিতে ফিরিয়ে নিতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে ভূমিকা রাখার আহ্বান জানান। এর পাশাপাশি, সন্ত্রাসের মতো বৈশ্বিক সমস্যা মোকাবেলায় সন্ত্রাসবাদে অর্থায়ন ও অস্ত্র সরবরাহ বন্ধে আহ্বান জানান তিনি।

বিতর্কের শেষ দিনে অংশ নিয়ে প্রায় ১৫ মিনিট বক্তৃতা করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। যার পুরোটা জুড়ে যেমন ছিলো সম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের অর্জন; আবার ছিলো রোহিঙ্গা সঙ্কট পরিস্থিতি। তিনি তার বক্তব্যে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানে বাংলাদেশের প্রস্তাব বিশ্বনেতাদের সামনে তুলে ধরেন।

শেখ হাসিনা বলেন, আমরা এ মুহূর্তে নিজ ভূখণ্ড হতে জোরপূর্বক বিতাড়িত আট লাখেরও অধিক রোহিঙ্গাকে আশ্রয় ও সুরক্ষা দিয়ে যাচ্ছি।আমরা যুদ্ধ চাই না। মানব ধ্বংস নয়; মানব কল্যাণে আমরা কাজ করতে চাই।

আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার তথ্যমতে গত তিন সপ্তাহে চার লাখ ৩০ হাজার রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অনুপ্রবেশ করেছে। রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে ফেরত যাওয়া ঠেকানোর জন্য মিয়ানমার দেশটির অভ্যন্তরে সীমানা বরাবর স্থলমাইন পুঁতে রাখছে। এতে আমরা ভীষণভাবে দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।এ সব মানুষ যাতে নিরাপদে এবং মর্যাদার সঙ্গে নিজ দেশে ফিরে যেতে পারেন এখনই তার ব্যবস্থা করতে হবে।

এ লক্ষ্যে বিশ্বনেতৃত্বের সামনে তিনি পাঁচ দফা প্রস্তাব তুলে ধরেন। প্রস্তাব গুলো:

অনতিবিলম্বে এবং চিরতরে মিয়ানমারের জাতিগত নিধন নিঃশর্তে বন্ধ করতে হবে।
দ্রুত মিয়ানমারে জাতিসংঘের মহাসচিবের একটি বিশেষ অনুসন্ধানী দল প্রেরণ।
জাতি ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মিয়ানমারের সকল নাগরিকের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা এবং এ লক্ষ্যে জাতিসংঘের তত্বাবধায়নে মিয়ানমারের অভ্যন্তরে বিশেষ সুরক্ষা বলয় গড়ে তোলা।
রাখাইন রাজ্য থেকে বিতাড়িত সকল রোহিঙ্গার নিরাপদে ঘর-বাড়িতে প্রত্যাবর্তন এবং পুনর্বাসন নিশ্চিত করা।
কফি আনান কমিশনের প্রস্তাবনা দ্রুত এবং নিঃশর্ত বাস্তবায়ন করা।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চলমান সহিংসতা বন্ধে এবং ওই অঞ্চলে শান্তি ও স্থিতিশীলতা প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় উদ্যোগ গ্রহণ করায় নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ও জাতিসংঘের মহাসচিবকে ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রী।

এই নিয়ে চতুর্দশ বার এবং টানা নয়বার জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদ অধিবেশনে বিশ্বনেতাদের সামনে বাংলায় বক্তৃতা করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

অধিবেশনের শুরুর আগে থেকেই শেখ হাসিনার বক্তব্যকে ঘিরে বিশ্বনেতাদের আগ্রহের কমতি ছিলো না। বিশেষ করে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশ নেত্রী কি বক্তব্য দেন সেদিকে তাকিয়ে ছিলেন সবাই। শুরুতেই প্রধানমন্ত্রী আবেগঘন কণ্ঠে স্মরণ করেন বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া নির্যাতিত রোহিঙ্গা শরনার্থীদের দুঃখ-কষ্টের কথা, যে উদ্বাস্তু জীবনকে তিনি মিলিয়েছেন নিজের জীবনের সঙ্গে।

এবারের অধিবেশনে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাতিসংঘ শান্তি বিনির্মাণ তহবিলে ১ লাখ মার্কিন ডলার প্রতীকি অনুদানেরও ঘোষণা দেন প্রধানমন্ত্রী।

ভাষণ শেষে অল্পকিছুক্ষণের মধ্যে জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তেনিও গুতেরেসের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে বসবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

২২ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী নিউইয়র্ক থেকে ভার্জিনিয়ার উদ্দেশে রওয়ানা হবেন। সেখানে ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয়ের পরিবারের সঙ্গে এক সপ্তাহ কাটিয়ে ২৯ সেপ্টেম্বর দেশের উদ্দেশে রওয়ানা দেওয়ার কথা রয়েছে তার। ২ অক্টোবর দেশে ফিরবেন প্রধানমন্ত্রী।