র‌্যাবে ১২১২ শূন্য পদ, ঢেলে সাজানোর তাগিদ

লোকবলের অভাবে ‘এলিট ফোর্স’ হিসেবে গঠিত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) সুষ্ঠুভাবে কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারছে না। দেশের অভ্যন্তরীণ সন্ত্রাস দমনের উদ্দেশ্যে গঠিত চৌকস এ বাহিনীর এক হাজার ২১২টি পদই বর্তমানে শূন্য।

বুধবার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির ১৮তম বৈঠকে এ তথ্য জানানো হয়।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের উপসচিব ও কাউন্সিলর অফিসার মো. আবদুল মালেক স্বাক্ষরিত ওই তথ্যে আরও জানানো হয়, বিভিন্ন বাহিনী থেকে যাওয়া র‌্যাবে ৫১৬ জন কর্মকর্তার পদ শূন্য। অন্যান্য পদবির লোকের ঘাটতি রয়েছে এক হাজার ৬৯৬টি।

‘সুষ্ঠু ও যথাযথভাবে পরিচালনার জন্য প্রয়োজনের ভিত্তিতে জনবলের প্রাধিকার দেয়া হয়েছে। কিন্তু মাতৃবাহিনী (সেনা, নৌ, বিমান, পুলিশ ও আনসার) থেকে জনবল পাওয়া যায় না। এছাড়া সেখানে প্রেষণে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫০ বছরের বেশি বয়স্ক লোক পাঠানো হয়। উক্ত সদস্যদের ইচ্ছাশক্তি থাকা সত্ত্বেও বার্ধক্যজনিত কারণে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে নানা সমস্যার সম্মুখীন হন।’

বৈঠক সূত্রে আরও জানা যায়, সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে উপস্থিত র‌্যাবের মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ বলেন, সুষ্ঠুভাবে কাজ করার জন্য র‌্যাবকে ঢেলে সাজানো দরকার। এজন্য প্রয়োজনীয় লোকবল নিয়োগ দিতে হবে।

কিন্তু স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বিষয়টি নিয়ে ‘প্রকাশ্যে’ আলোচনা না করে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে বসে আলোচনার কথা বলেন।

বৈঠকে উত্থাপিত তথ্য থেকে আরও জানা যায়, র‌্যাবে প্রেষণে ৪১৯ জন পঞ্চাশোর্ধ ব্যক্তি রয়েছেন। এর মধ্যে বিমান বাহিনীর চারজন, পুলিশের ১০৬ , বিজিবি’র ১৬৯ এবং ১৪০ জন আনসার সদস্য রয়েছেন।

৭৭০টি প্রাধিকারের কর্মকর্তার মধ্যে মাত্র কাজ করছেন ২৫৪ জন। অর্থাৎ ঘাটতি ৫১৬ জন। আর অন্যান্য পদে ৯ হাজার ৬০৭ প্রাধিকারের মধ্যে প্রাপ্তি সাত হাজার ৯১১ জন। অর্থাৎ ঘাটতি এক হাজার ৬৯৬ জন।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি টিপু মুন্সীর সভাপতিত্বে বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন কমিটির সদস্য মোজাম্মেল হোসেন, মো. শামসুল হক টুকু, মো. ফরিদুল হক খান, আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ফখরুল ইমাম ও বেগম কামরুন নাহার চৌধুরী।

বৈঠকে জানানো হয়, র‌্যাব-৭ এর স্বল্পসংখ্যক সদস্য দিয়ে বৃহত্তর চট্টগ্রামের কক্সবাজার ও ফেনী জেলায় কর্তব্য পালনের পাশাপাশি রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের মতো দুর্গম ও বিশাল এলাকায় কর্তব্য পালন দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে। বর্তমানে মিয়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের ঢল নামায় ডিউটির সময়ও বেড়ে গেছে। শান্তিচুক্তির আগে সেখানে যেসব সেনাক্যাম্প ছিল তাও বর্তমানে নেই। তাই ওই সব এলাকায় বিজিবি, পুলিশ, র‌্যাবের ক্যাম্প স্থাপনের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মাধ্যমে কার্যকর ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়া হয়। পার্বত্য চট্টগ্রামে র‌্যাবের একটি ব্যাটালিয়ন গঠনের বিষয়ও বিবেচনার কথা বলা হয়।

প্রসঙ্গত, ২০০৪ সালের ২৬ মার্চ জাতীয় স্বাধীনতা দিবস প্যারেডে অংশগ্রহণের মাধ্যমে র‌্যাবের আত্মপ্রকাশ হয়। সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ইতোমধ্যে বাহিনীটি সফলতার মুখ দেখিয়েছে।

বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সচিব মোস্তাফা কামাল উদ্দীন, সুরক্ষা ও সেবা বিভাগের সচিব ফরিদ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী, আনসার ও ভিডিপির মহাপরিচালক, র‌্যাবের মহাপরিচালক, কোস্টগার্ডের মহাপরিচালক, আইজিপি প্রিজন, ফায়ার ও সিভিল ডিফেন্সের মহাপরিচালকসহ স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।