শামীম ওসমানের মাথায় হাত রেখে মন্ত্রীর ‘শপথ’

লাখো জনতার উপস্থিতিতে পানিসম্পদমন্ত্রীর ‘হাত মাথায় রেখে’ শপথ করিয়ে ডিএনডিবাসীর কাছে এক অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন আওয়ামী লীগ নেতা শামীম ওসমান এমপি।

এ সময় পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম মাহমুদ বলেন, শামীম ওসমান আমাদের জন্য ‘যন্ত্রণাদায়ক’। এভাবেই তিনি নিজ এলাকার উন্নয়নের জন্য আমাদের অতিষ্ঠ করেন। শামীম ওসমানের মতো এমপি পাওয়া ভাগ্যের ব্যাপার।

রোববার বিকালে সিদ্ধিরগঞ্জের কদমতলী এলাকায় ডিএনডি বাঁধ প্রকল্পের কাজ শুরুর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে আয়োজিত সমাবেশে এমন দৃশ্যের অবতারণা করা হয়।

বিকাল ৪টার দিকে শুরু হওয়া সমাবেশ একপর্যায়ে জনসমুদ্রে পরিণত হয়। প্রধান অতিথি পানিসম্পদমন্ত্রী বক্তব্য দেয়ার আগে তার সামনে গিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ‘আমার মাথায় হাত রেখে শপথ করেন ডিএনডির পুরো কাজ আপনি শেষ করবেন। যদি না করেন তাহলে আমার মরা মুখ দেখবেন।’

এ সময় মন্ত্রী তার মাথায় হাত রেখে শপথ করলে লাখো মানুষের করতালিতে পুরো এলাকা মুখরিত হয়ে ওঠে।

পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল ইসলাম বলেন, ডিএনডির দায়িত্ব ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়রদের নেয়ার অনুরোধ করলেও তারা রাজি হননি। এ প্রকল্প বাস্তবায়নে যত টাকা লাগবে দেয়া হবে। ডিএনডি উন্নয়ন প্রকল্পের কাজ সেনাবাহিনীকে দেয়া হয়েছে। আগামী ২ সপ্তাহের মধ্যে সিদ্ধিরগঞ্জবাসী সেনাবাহিনীর কর্মতৎপরতা দেখতে পাবেন। আগামী ২০২০ সালের মধ্যে এ প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও ২০১৯ সালের মধ্যেই প্রকল্পের বেশিরভাগ কাজ সম্পন্ন হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।

পানিসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নজরুল ইসলাম হিরু বলেন, শামীম ওসমান যেমন একরোখা মানুষ, তেমনি আমিও। ডিএনডিবাসীর জন্য শামীম ওসমান এমপি পদ থেকে পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন। তার বক্তব্য শুনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পানিসম্পদমন্ত্রীর দিকে তাকিয়ে কি যেন ইশারা করেন। সেই ইশারার পরই সব কাজ হয়ে যায়। শামীম ওসমান প্রধানমন্ত্রীর ইশারা বোঝেন।

শামীম ওসমান বলেন, ‘ডিএনডির প্রায় ৭৫ ভাগ অংশ আমার নির্বাচনী এলাকা। বহু বছর ধরে এখানকার প্রায় ২০ লাখ মানুষ জলাবদ্ধতায় কষ্ট পাচ্ছেন। শুধু জলাবদ্ধতা নয়, বিষাক্ত বর্জ্যরে দুর্গন্ধে অসহনীয় জীবনযাপন করছেন এখানকার মানুষ। এজেন্ডা না থাকা সত্ত্বেও ডিএনডিবাসীর দুর্ভোগ লাঘবে গত বছরের আগস্টে একনেক সভায় ৫৬০ কোটি টাকার প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। এর জন্য আমরা তার প্রতি কৃতজ্ঞ। তিনি বলেন, ডিএনডি প্রকল্পের কাজটি যেন দ্রুত ও ভালোভাবে সম্পন্ন হয় সেজন্য সেনাবাহিনীকে কাজ দিতে ডিও লেটার দিয়েছিলাম।

সমাবেশে আবু হোসেন বাবলা এমপি, অ্যাডভোকেট সানজিদা খাতুন এমপি, আবু হেনা বাবলা, অ্যাডভোকেট হোসনে আরা বাবলী এমপি, লিয়াকত হোসেন খোকা এমপি, সিটি কর্পোরেশনের কাউন্সিলররা, আওয়ামী লীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য অ্যাডভোকেট আনিসুর রহমান দিপু, নারায়ণগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি আবদুল হাই, মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আনোয়ার হোসেন, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট খোকন সাহা, জাতীয় শ্রমিক লীগের সাবেক সভাপতি আবদুল মতিন মাস্টার, নারায়ণগঞ্জ চেম্বারের সভাপতি খালেদ হায়দায় খান কাজল প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে দুপুরে নারায়ণগঞ্জ ক্লাব মিলনায়তনে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন পানিসম্পদমন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী ও স্থানীয় এমপিরা। এ সময় পানিসম্পদমন্ত্রী ব্যারিস্টার আনিসুল বলেন, প্রধানমন্ত্রী চান ডিএনডি এলাকার জলাবদ্ধতা সমস্যার দ্রুত স্থায়ী নিরসন হোক। কিন্তু দুই সিটি কর্পোরেশন ড্রেনেজ ব্যবস্থার উন্নয়ন না করলে ডিএনডি প্রকল্পের সুফল মানুষ ভোগ করতে পারবেন না। তাই দুই সিটি মেয়রের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সব ধরনের সহযোগিতার আশ্বাস দিয়েছেন। এ সময় গণমাধ্যমকে ধন্যবাদ জানিয়ে শামীম ওসমান বলেন, ২০১৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে সংসদ অধিবেশনে প্রথম প্রশ্নটিই ডিএনডির উন্নয়নে পানিসম্পদমন্ত্রীকে করেছিলাম। গণমাধ্যম ডিএনডিবাসীর অবর্ণনীয় দুর্দশা তুলে ধরছিল বলেই প্রধানমন্ত্রী দুর্ভোগ লাঘবে দ্রুত প্রকল্প পাস করেছিলেন। তিনি আরও বলেন, ‘ডিএনডির এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-বনানী-বারিধারাকেও ছাড়িয়ে যাবে।’