শিক্ষার্থীর মৃত্যুর পর পরীক্ষা পেছালেন শিক্ষক

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) বাংলা বিভাগের শিক্ষক মিল্টন বিশ্বাসের স্বেচ্ছাচারিতায় ২০১৫-১৬ সেশনের সোহান আহমেদ নামের এক শিক্ষার্থীর মৃত্যুর অভিযোগ উঠেছে। গত শনিবার (১০ জুন) চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেন ওই শিক্ষার্থী।

মৃত জবি শিক্ষার্থী সোহানের একাধিক সহপাঠি জানান, দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার পর একই ব্যাচের অন্তত ৩০জন শিক্ষার্থী চিকোনগুনিয়াসহ সাধারণ জ্বরে আক্রান্ত হন। এদের মধ্যে সোহানের অবস্থা ছিল অত্যন্ত নাজুক।

এমন অবস্থায় শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসের কাছে শিক্ষার্থীদের শারীরিক অবস্থা জানিয়ে পরীক্ষা পেছানোর দাবী জানালে তিনি নানা ভাবে তাদের তিরস্কার করেন এবং পরীক্ষা নেবেনই বলে জানিয়ে দেন।

পরে শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক আক্তারুজ্জামের কাছে যায়। অবস্থা শুনে আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘একটি ব্যাচের দুজন অসুস্থ হলেও পরীক্ষা পেছানো উচিত।’ পরে তিনি তৎক্ষনাৎ উপাচার্যের সঙ্গে টেলিফোনে যোগাযোগ করেন এবং কথা শেষে পরীক্ষা হবার সম্ভাবনা নেই বলে শিক্ষার্থীদের জানিয়ে দেন।

এরপর শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা হচ্ছে না ভেবে আবারও চূড়ান্ত ঘোষণা জানতে মিল্টন বিশ্বাসের কাছে যান। তিনি কোন কথা না শুনে পরীক্ষা নেবেন বলে জানিয়ে দেন।

এক শিক্ষার্থী এ ঘটনার বর্ণনা দিয়ে বলেন, ‘আমরা পরেরবার স্যারের কাছে গেলে স্যার আমাদের তিরস্কার করে বলেন, বন্ধুর জন্য দরদ উতলাইয়া পরছে তাই না। যাও পরীক্ষা হবেই। কাল এসে পরীক্ষা দিবা।’

পরে এভাবেই পরীক্ষা চলতে থাকে এবং পরীক্ষা চলাকালে আরও বেশি অসুস্থ হতে থাকে সোহান।

এদিকে গত ১লা জুন থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস পরীক্ষা বন্ধ ঘোষণা দেন বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু ১৫ জুন পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন দফতর ও অফিস খোলা থাকবে বলেও জানানো হয়।

এই ব্যাচের শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা শুরু হয় ২৯ মে এবং ৮ জুন চতুর্থ পরীক্ষা দেওয়ার পর আরও বেশি অসুস্থ হয়ে পড়ে সোহান। পরে ১০ জুন মামাতো ভাইয়ের বাসায় মারা যান তিনি। মৃত্যুর আগের পরীক্ষাটিতেও অসুস্থ শরীরে অংশ নেন সোহান।

শিক্ষার্থীদের দাবী, আমাদের যেখানে আবাসন ব্যবস্থা নেই। আমাদের ক্যাম্পাস ছুটি হয়েছে ১লা জুন। সে সময় জোর করে পরীক্ষাটা না নিলে সে বাসায় চলে যেত। এতে সে হয়তো আরও একটু স্বাভাবিক মৃত্যুবরণ করতে পারতো। মৃত্যুর সময় হয়তো পাশে মা বাবা থাকতেন।

এ সময় তারা বলেন, কিন্তু আশ্চার্য ব্যাপার যে কেমন একটি বেওয়ারিশ মৃত্যু হয়েছে তার। যেখানে তার লাশ পড়ে ছিল, সেখানে লাশের পাশে কান্নাকাটি করার মতও কেউ ছিল না। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে বারবার জানিয়েছি। এরপরও এক বারের জন্য কেউই খবর নেননি।

পরীক্ষাটা জোর পূর্বক নেওয়া যায়, মৃত্যুর খবর শুনে অন্তত একজন শিক্ষকও কি লাশের পাশে যেতে পারত না। বিভাগের থেকেও তেমন কোন খোঁজ নেওয়া হয়নি।

একই সাথে সোহানের মৃত্যুতে ক্ষুদ্ধ শিক্ষার্থীদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিয়েছেন মিল্টন বিশ্বাস। ভয়ে শিক্ষার্থীরা প্রথমে মুখ খুলতে না চাইলেও পরে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ব্রেকিংনিউজের কাছে ঘটনার বর্ণনা দেন।

বিভাগের ১১তম ব্যাচের পরীক্ষা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ড. মিল্টন বিশ্বাসের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘হ্যাঁ! কয়েকজন শিক্ষার্থী আমার কাছে এসেছিল। আমি বলেছি, পরীক্ষার তারিখ চুড়ান্ত হয়েছে, পরীক্ষা হবে। আর একজন শিক্ষার্থী মারা গেছে এতে পরীক্ষার সাথে কি সম্পর্ক।’

তিনি বলেন, ‘এক স্টুপিট তার ফেসবুকে লিখেছে, আমি নাকি খারাপ ব্যবহার করায় ছেলেটি মারা গেছে। তাকে আমি দেখাবো। তাকে আমি লাথ্থায়ে বের করে দেব জগন্নাথ থেকে। সে লিখেছে আমি নাকি দায়ী। এখন তারে থাপরায়ে দেখিয়ে দেই আমি দায়ী কিনা?’

তিনি আরও বলেন, ‘আমার বিভাগের শিক্ষার্থী মারা গেছে আমি জানবো না! কিন্তু সেখানে যেতে হবে কেন? আর শুধু জগন্নাথ আমার একমাত্র জায়গা না, সেদিন আমি ব্যস্ত ছিলাম।’

তিনি বলেন, ‘পরীক্ষা পরীক্ষার মত হয়েছে। যে শিক্ষার্থীরা আমাকে এই ছেলের মৃত্যুর জন্য দায়ী করছে তাদের যা করার তা করে দেখাক দেখি। কি করতে পারে আমার?’

এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘আমি কিন্তু হিন্দু না। আমি ইহুদী এবং সে নীতিতে বিশ্বাস করি। আমার নীতি হচ্ছে, টিট ফর ট্যাট। যে আমার দিকে একগুন বেগে আসবে আমি তার দিকে দশগুন বেগে ছুটবো। আর যারা এর পিছনে ইন্দন দিচ্ছে তাদেরও দেখে নেব।’

এ ব্যাপারে জবি প্রধান পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক এ, কে আখতারুজ্জামান বলেন, ‘আমার কাছে কয়েকজন শিক্ষার্থী আসছিল। আমি তাদের সামনেই উপাচার্যের সাথে কথা বলেছিলাম। একটি ব্যাচের এতজন শিক্ষার্থী অসুস্থ থাকলেতো পরীক্ষাটা পেছানোই যেত। শুনলাম মারা যাওয়ার পর পরীক্ষা পিছিয়ে দিয়েছে। এটা কেন করলো? পরীক্ষা নিতোই।’

সোহানের মা জানান, ছেলে মারা গিয়েছে। এখন আর কেন অভিযোগ করবো? অভিযোগ দিয়ে কি আমার ছেলে ফিরে আসবে?