শিক্ষিকার ৪ টাকা চুরির দায়ে ৭০জন শিক্ষার্থীকে বেদম প্রহার

মোঃ শামীম আখতার, উপজেলা প্রতিনিধি, মিঠাপুকুর (রংপুর) : রংপুরের মিঠাপুকুরে শিক্ষিকার ৪ টাকা চুরির অভিযোগে ৭০ জন শিক্ষার্থীকে বেধড়ক মারপিট করা হয়েছে। শিক্ষিকার এমন কর্মকান্ডে তীব্র অসন্তোষের সৃস্টি হয়েছে অভিভাবকদের মাঝে। চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে ওই এলাকায়। এ ঘটনাটি ঘটেছে বালুয়ামাসিমপুর ইউনিয়নের হামিদপুর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।

বুধবার সরেজমিনে ওই বিদ্যালয়ে গিয়ে এলাকাবাসি ও অভিভাবকদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, মঙ্গলবার বিদ্যালয়ে পাঠদান শেষে প্রাক-প্রাথমিক শিক্ষক নাজমুদ সাহিদা অফিস কক্ষে গিয়ে দেখেন তাঁর ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে ৪ টাকা চুরি হয়েছে। এসময় তিনি শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে টাকা চুরির অভিযোগ আনেন। এরপর ৩য় শ্রেণি থেকে ৫শ শ্রেণি কক্ষে গিয়ে প্রত্যেক ছাত্রছাত্রীকে মারপিট করেন। শিক্ষার্থীরা বারবার টাকা চুরি করিনি বলে চিৎকার করলেও তিনি তাতে কর্ণপাত করেননি। মারপিটে অনেক শিক্ষার্থী অসুস্থ্য হয়ে পড়ে। অনেকেই ভীত সন্ত্র¯ত হয়ে পড়ে। ৪র্থ শ্রেণির নাইমা, মোসলেমা, শিখা, হাবিবা, ছাবরিনা, মোহসেনা তাছমিনা, জান্নাতুল, আসমাউল, দিপা, ৫ম শ্রেণির আঁখিমনি, রহিমাসহ অনেক শিক্ষার্থী জানায়, আমরা ম্যাডামের টাকা চুরি করিনি। তারপরও তিনি আমাদেরকে খুব মারপিট করেন। প্রায় সময় ম্যাডাম আমাদেরকে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করেন।

৫ম শ্রেণির শিক্ষার্থী মেফতাহুল জান্নাতের মা নাসিমা বেগম বলেন, মারপিটে আমার মেয়ে অসুস্থ্য হয়ে পড়েছে। সারারাত ঘুমাতে পারেনি। রাজিয়া সুলতানার মা রোকসানা বেগমসহ অনেক অভিভাবকই একই কথা বলেন। এসময় শতশত অভিভাবক অভিযুক্ত শিক্ষিকার দৃস্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান। তাঁরা বলেন, অন্যথায় সন্তানদের ওই বিদ্যালয়ে পাঠাবেন না। বিষয়টি নিয়ে কথা হলে অভিযুক্ত শিক্ষিকা নাজমুদ সাহিদা সাংবাদিকদের বলেন, আমার ভ্যানিটি ব্যাগ থেকে প্রায় টাকা চুরি হয়। সেদিনও টাকা চুরি গেছে। বারবার বলার পরও ছাত্রছাত্রীরা স্বীকার হচ্ছিলনা। তাই আমি রাগের মাথায় ওদের মেরেছি। এটা তো দোষের কিছু নয়!

প্রধান শিক্ষক আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমি ওই দিন বিদ্যালয়ে উপস্থিত ছিলাম না। আজ এসে জানতে পারলাম। ওই শিক্ষক অন্যায়ভাবে শিক্ষার্থীদেরকে মারপিট করেছে। বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি গোলাম মোস্তফা বলেন, বিষয়টি নিয়ে কমিটির সদস্যদের নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে। ইতিমধ্যেই উর্ধ্বতন কর্তৃক্ষের কাছে ঘটনাটি অবহিত করা হয়েছে। ওই শিক্ষককে বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য কর্তৃপক্ষের নিকট দাবি জানাচ্ছি।

এ ব্যাপারে গোপালপুর হামিদিয়া ক্লাস্টারের দায়িত্বে নিয়োজিত উপজেলা সহকারী শিক্ষা অফিসার তাজিবর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ও সভাপতি শিক্ষার্থীদের মারপিটের বিষয়টি জানিয়েছে। শিক্ষার্থীদের মারপিটের বিষয়ে ওই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য আমি উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানাবো।

উপজেলা নির্বাহি অফিসার মামুন-অর-রশীদ বলেন, শিক্ষার্থীদের মারপিট করা আইনদ দন্ডনীয় আপরাধ। তাছাড়াও, ওই শিক্ষিকা মাত্র ৪ টাকা চুরির অপরাধে এতোগুলো শিক্ষার্থীকে বেধরক মারপিট করেছে। তার বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।