শিশুটির অভিভাবকত্ব পেতে আদালতে ৮ দম্পতির হট্টগোল

রাজধানীর হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে ফেলে যাওয়া অবুঝ নয় মাসের শিশু ফাতেমার ‘বৈধ অভিভাবকত্ব’ পেতে ২০ লাখ টাকা কিংবা ফ্ল্যাট তার নামে লিখে দিতে চেয়েও অভিভাবকত্ব পেলেন না এক দম্পতি।বুধবার ঢাকার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমানের আদালতে এ নিয়ে চরম হট্টগোল হয়। আদালতে শুনানির সময় আইন ও সালিস কেন্দ্রের আইনজীবী সেলিনা আক্তার শিশুটির নামে পাঁচ লাখ টাকা দিতে চান। তিনি ১৫ বছর ধরে নিঃসন্তান। আদালত তাকে দিতে চাইলে অন্যরা আপত্তি করেন।

এসময় মাজহারুল ও লায়লা দম্পতি ১০ লাখ টাকা দিতে চান। এই দম্পতি আট বছর ধরে নিঃসন্তান।

অন্যদিকে পুলিশের এসআই আবুল কালাম ও নিঝুম দম্পতি ২০ লাখ টাকা অথবা ফ্ল্যাট লিখে দিতে চান। তারাও আট বছর ধরে নিঃসন্তান।
সিলেটের সামছুল আলম গ্রামের বাড়িটি শিশুটির নামে লিখে দিতে চান। তিনি ৩০ বছর ধরে নিঃসন্তান।

সবাই তাদের দাবিতে অনড় থাকায় আদালত এ বিষয়ে শুনানি মুলতবি রেখে আলাদাভাবে নয় দম্পতির সাক্ষাতকার নেন।

পরবর্তীতে সেলিনা দম্পতিকে অভিভাকত্ব দেন। আদালত আগামী ২২ তারিখের মধ্য শিশুর নামে পাঁচ লাখ টাকা ডিপোজিট করতে বলেন এবং ওই দিনই শিশুটিকে হস্তান্তর করা হবে বলে জানান।

এসময় বঞ্চিত অনেক দম্পতিকে কান্নকাটি করতে দেখা যায়।

এর আগে গত ৯ আগস্ট শিশু ফাতেমার প্রকৃত বাবা-মাকে খুঁজে পায়নি উল্লেখ করে আদালতে প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্তকারী কর্মকর্তা বিমানবন্দর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) আবু সাঈদ।

প্রতিবেদনে তিনি উল্লেখ করেন, আদালতের নির্দেশে বিমানবন্দরের ওই দিনের ভিডিও ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। এতে শিশুটির প্রকৃত বাবা-মাকে শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি। শিশুটির বাবা-মা দাবি করে কেউ লিগ্যাল নোটিশও দেয়নি। এছাড়া শিশুটি হারিয়ে গেছে মর্মে বিমানবন্দর থানায় কেউ জিডিও করেনি।

গত ২৫ জুলাই ঢাকার শিশু আদালতের বিচারক মো. হাফিজুর রহমান ফাতেমার প্রকৃত বাবা-মাকে খুঁজে বের করার নির্দেশ দেন। সেদিন তিনি ৯ আগস্টের মধ্যে শিশুটির প্রকৃত বাবা-মাকে খুঁজে বের করার দিন নির্ধারণ করেন। প্রকৃত বাবা-মাকে খুঁজে না পাওয়া গেলে শিশুটিকে নিতে আগ্রহী কোনো দম্পতিকে বাছাই করে দায়িত্ব বুঝিয়ে দেয়ার কথা জানানো হয়।

ওইদিন আট দম্পতি শিশুটিকে নিতে আদালতে আবেদন করেন। পরে আরও দুই দম্পতি আবেদন করেন। তাদের মধ্যে সেনা কর্মকর্তা, পুলিশ কর্মকর্তা, ব্যবসায়ী, আইনজীবী ও বিমান বাহিনী কর্মকর্তা রয়েছেন।

দম্পতিরা ছিলেন, ব্যবসায়ী আশিক ওয়াহিদ-শাহনাজ, পুলিশ কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ-নিঝুম আক্তার, একটি তথ্যপ্রযুক্তি ফার্মের কর্মকর্তা মাজহারুল-লায়লা নুর, ব্যবসায়ী আলমগীর-অ্যাডভোকেট সেলিনা আক্তার, ব্যবসায়ী জামাল-শ্যামলী আক্তার, ব্যবসায়ী গোলাম সরওয়ার-দুলশাদ বেগম বিথি, ব্যবসায়ী শামসুল আলম চৌধুরী-শামিমা আক্তার চৌধুরী ও বিমানের কর্মকর্তা আ ক ম আতিকুর রহমান-মোনালিসা দম্পতি।

উল্লেখ্য, গত ৮ জুলাই জর্ডান থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের একটি ফ্লাইটে করে দেশে ফিরছিলেন জয়দেবপুরের স্বপ্না বেগম। একই বিমানে শিশুটিকে নিয়ে তার মাও ফিরছিলেন। স্বপ্না জর্ডানে গৃহকর্মী হিসেবে গিয়েছিলেন। অজ্ঞাতপরিচয় ওই নারীও একই কাজে সেখানে গিয়েছিলেন বলে জানতে পারেন স্বপ্না।

স্বপ্না বিমানবন্দর পুলিশকে জানান, ওই নারীও জর্ডান থেকে একই ফ্লাইটে ফেরেন। সব আনুষ্ঠানিকতা শেষে কাস্টমস থেকে মালপত্র নিয়ে বের হয়ে বিমানবন্দরের পার্কিং এলাকায় স্বজনের জন্য অপেক্ষা করছিলেন স্বপ্না।

এ সময় বিমানে পরিচয় হওয়া শিশুটির মা তাকে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, আপা আমার শিশুটাকে একটু ধরেন। ভেতরে মালপত্র রয়েছে, নিয়ে আসছি। আগে কথা হওয়ায় সরল বিশ্বাসে শিশুটিকে কোলে তুলে নেন স্বপ্না। কিন্তু দীর্ঘসময় অপেক্ষার পরও সেই নারী আর ফেরেননি।

পরে স্বপ্না আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) সদস্যদের কাছে ঘটনাটি জানালে তারা শিশুসহ স্বপ্নাকে বিমানবন্দর থানায় পাঠায়।