শ্রীপুরে পোল্ট্রি ফার্মের মুরগীর বিষ্টা খোলা জায়গা : স্বাস্থ্যের ঝুঁকি ও দুর্ভোগে এলাকাবাসী

মাগুরা প্রতিনিধি : মাগুরার শ্রীপুর উপজেলার মাঝ দিয়ে বয়ে যাওয়া হানু নদীতে সোনাতুন্দী-বরইচারা-টিকেটিনগর গ্রামের পোল্ট্রি খামারের মরা মুরগী ও মুরগীর বিষ্টা খোলা জায়গা দিয়ে নির্গত হওয়ায় এবং ড্রেনের মাধ্যমে নদীতে বিষ্টা ফেলাতে নদীর পানি যেমন দুষিত হচ্ছে সেই সঙ্গে নদীর মাছের ক্ষতি হচ্ছে । নদীতে গোসল করতে যাওয়া মানুষের শরীরে বিভিন্ন রোগের সৃষ্টি হচ্ছে। পোল্ট্রি খামারের মরা মুরগী ও মুরগীর বিষ্ঠা খোলা জায়গা দিয়ে নির্গত হওয়ায় বাতাসে দূর্গন্ধ ছড়ানোয় এলাকার মানুষ চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এতে প্রায়ই লোকজন ডায়রিয়া সহ নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে।

সরেজমিন পরিদর্শনে গেলে দ্বারিয়াপুর ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মসিউল আযম জানান, কয়েক বছর আগে আমার বাড়ীর সামনে রহমত শেখ একটি পোল্ট্রি খামার তৈরির পর থেকে মুরগীর বিষ্ঠার গন্ধে বাড়ী এবং বাড়ী সংলগ্ন রাস্তার মানুষের ও মসজিদের নামাজি লোকের চলাচলে বিঘœ সৃষ্টি হচ্ছে। এখন আমার বাড়ী লাগোয়া রাজু আহমেদ, পিতা- ইসরাফিল শেখ একটি বড় ঘর পোল্ট্রি খামারের জন্য ঘর তৈরি করছে। এ কারণে আমি পোল্ট্রি খামার সরকারি নির্দেশনা ছাড়া যাতে তৈরি হতে না পারে সে ব্যাপারে দ্রুত ব্যবস্থা নেবার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর আবেদন করেছি। বিষয়টি উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা, উপজেলা স্যানেটারী ইন্সপেক্টর কে মৌখিক ভাবে জানিয়েছি ও আবেদনের একটি অনুলিপি শ্রীপুর উপজেলা প্রেসক্লাব বরাবর দিয়েছি। আমার আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ আহসান উল­াহ শরিফী সরজমিন পরিদর্শন শেষে রিপোর্ট দেওয়ার জন্য উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন।

উপজেল্ াপ্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড. অমল কুমার সরকার পরিদর্শন করে রাজু আহমদকে সরকারি নির্দেশনা ছাড়া পোল্ট্রি খামার না করার জন্য মৌখিকভাবে নির্দেশনা দিয়ে গেছেন। পাশের বাড়ির রইচ উদ্দিন বলেন, আজ কয়েক বছর আমরা পরিবারের সবাই মুরগীর বিষ্ঠার দুর্গন্ধে উত্তর পাশের দরজা জানালা বন্ধ রাখি। হানু নদীতে গোসল করা ও গরু গোসল করা বন্ধ করেছি। বরইচারা গ্রামের ফয়েজ খান মুরগীর বিষ্ঠার দুর্গন্ধে গ্রাম ছেড়ে মাগুরায় বসবাস করছেন।

টিকেটিনগর গ্রামের রতন মন্ডল, সরজিৎ কুমার মন্ডর, দিপল মন্ডল, মনিকুমার মন্ডল জানান, কয়েক বছর আগে সোনাতুন্দি গ্রামের কামরুল ইসলাম আমাদের গ্রামে জায়গা কিনে লেয়ার পোল্ট্রি ফার্ম স্থাপন করে। কিন্তু লোকসান হওয়ায় সেটি বন্ধ করে দেয়। বর্তমানে খামারটি একই গ্রামের মাহমুদ মিয়া লিজ নিয়ে আবার চালু করার পর মুরগীর বিষ্ঠার গন্ধে আমাদের বসবাস করা কষ্ট হচ্ছে। সোনাতুন্দী গ্রামের মছু মুন্সী আমাদের কয়েক পরিবারের বাড়ীর মাঝামাঝি আরেকটি পোল্ট্রি খামার স্থাপন করায় সেখানে মুরগীর বিষ্ঠার দুর্গন্ধে বসবাস করা কষ্ট হচ্ছে। আমরা হিন্দু স¤প্রদায়ের লোক হওয়ায় আমাদের কথা তারা বললেও শোনে না।

সোনাতুন্দী গ্রামের মনিরুল ইসলাম, মিন্টু বিশ্বাস, মোহন জোয়ার্দ্দার, বাবুল জোয়ার্দ্দার, মোঃ আবেদ আলী জানান শ্রীপুর উপজেলায় সোনাতুন্দী গ্রামে সরকারি নিয়মনীতি ঊপেক্ষা করে একরকম গায়ের জোরে অধিকাংশ লেয়ার ও ব্রয়লার মুরগীর খামার স্থাপন করা হয়েছে।
দ্বারিয়াপুর কৃষকলীগের সাবেক সভাপতি হারুর অর রশিদ হারুন জানান, নিষিদ্ধ লিটার মুরগীর বিষ্ঠা ড্রামে ভর্তি করে সকালে ও সন্ধ্যায় ভ্যানে করে নেওয়ার সময় এর দুর্গন্ধে এলাকায় জনস্বাস্থ্যের ক্ষতির কারণ হচ্ছে। আমরা কয়েকটি গ্রামবাসী মিলে কয়েকদিনের মধ্যে প্রতিবাদ মিছিল করব এবং সাংবাদিকদের জানাবো।

দ্বারিয়াপুর ডিগ্রি কলেজের প্রভাষক মহিদুল ইসলাম বকুল বলেন, কলেজের দক্ষিণ পাশে মাহমুদ মিয়া বড় একটি পোল্ট্রি খামার করার পর থেকে কলেজে মুরগীর বিষ্ঠার গন্ধে ছেলে মেয়েদের ক্লাশ নেওয়া ও পরীক্ষার সময় পরীক্ষা নেওয়া কষ্ট হচ্ছে।

এ ব্যাপারে দ্বারিয়াপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ নিজামউদ্দিনের সাথে এই অসুবিধার কথ্ াজানতে চাইলে তিনি জানান, পোল্ট্রি ফার্মের মালিক মিয়া মাহমুদকে বারবার কলেজে ডেকে দুর্গন্ধের ব্যাপারে জানানো হয়েছে। পোল্ট্রির বিষ্ঠা পরিবেশ নষ্ট করতে পারে এমন কোন ধারণা তার আছে বলে মনে হয়নি বিধায় গর্ভনিং বডির সবাই এ ব্যাপারে আলোচনা হয় এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অভিযোগ আকারে জানানোর সিদ্ধান্ত হয়। এ কারণে গত ৩০ শে মে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অভিযোগ পত্র প্রদান করা হয়েছে।

শ্রীপুর উপজেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা ড. অমল কুমার সরকার জানান, ২০০৮ সালে জাতীয় পোল্ট্রি উন্নয়ন নীতিমালায় বলা হয়েছে, বাণিজ্যিক খামার ঘনবসতি এলাকা এবং শহরের বাইরে স্থাপন করতে হবে। খ্মাার স্থাপনের পূর্বে পশু সম্পদ অধিদপ্তরের অনুমতি নিতে হবে। খামার স্থাপন পরিকল্পনায় বর্জ্য স্বাস্থ্যসম্মত উপায়ের ব্যবস্থা থাকতে হবে এবং বর্জ্য অপারণের জন্য প্রয়োজনীয় স্থানীনের সংস্থানও থাকতে হবে। উপজেলা প্রাণী সম্পদ কার্যালয়ের তথ্যমতে শ্রীপুর উপজেলায় ১৬টি লেয়ার ও ৬৬টি ব্রয়লার মুরগীর ফার্মের তথ্য আছে।