ষোড়শ সংশোধনী: ‘পেনড্রাইভ জাজমেন্ট, ল্যাপটপ থেকে এসেছে’

সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী বাতিলের রায়টি হলো পেনড্রাইভ জাজমেন্ট। তার মানে কোথা থেকে কোন পেনড্রাইভ থেকে কোন ল্যাপটপ থেকে এই রায়ের উৎপত্তি হয়েছে সেটা আমাদের জানা আছে বলে মন্তব্য করেছেন বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সদস্য সচিব ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস।

বৃহস্পতিবার সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির দক্ষিণ হলে বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ কর্তৃক আয়োজিত এক প্রতিবাদ সমাবেশে তিনি এই মন্তব্য করেন।

ব্যারিস্টার ফজলে নুর তাপস বলেন, দেশব্যাপি এই আন্দোলন চলছে। ষোড়শ সংশোধনীর রায়ের একটি জায়গায় যে উক্তি করা হয়েছে, তার একটি বক্তব্য আপনাদের সামনে তুলে ধরি। তাতে সংসদকে বলা হয়েছে, সংসদ নাকি `ম্যাচিউরড’ না। আমি এ কথার নিন্দা জানাই। উদাহরণ দিয়ে বলবো, ওনারা কেমন ম্যাচিউরড? তিন বছরেও একজন যুদ্ধাপরাধী তার রায়ের কপি হাতে পায় নাই। এটা হলো তাদের ম্যাচিউরিটি? প্রধান বিচারপতিও বলেছেন, ছয়মাসের মধ্যে রায় লিখে দিতে হবে। তাহলে একজন ভুক্তভোগী তার রায় পাওয়ার পরও ছয়মাস কি সুপ্রিম কোর্টের দুয়ারে ঘুরে বেড়াবে? এই হলো তাদের ম্যাচিরিটি।

তিনি আরো বলেন, তারা (বিচারপতিরা) ম্যাচিউরিটির কথা বলে। আজকে বিভিন্ন ক্লাবে সন্ধ্যার পর গেলে দেখা যায়, আমাদের এই জাজেরা তাদের বিভিন্ন কার্যকলাপে লিপ্ত। আমরা এর নিন্দা জানাই এবং লজ্জার বিষয় হলো এজলাসে না বসে তারা ঢাকা ক্লাবে ঘুরে বেড়ায়। আরও কি করে, সেটা আমি এখানে প্রকাশ করতে চাই না। জনগণ সেটা জানে। সুতরাং এই হলো তাদের ম্যাচিউরিটি। তারা বলে কিনা সংসদ নাকি ম্যাচিউরট না। আজব।

ব্যারিস্টার তাপস বলেন, যে রায় দেওয়া হয়েছে, যে উক্তিগুলো দেওয়া হয়েছে, আমি বলতে চাই এটা হলো পেনড্রাইভ জাজমেন্ট। তার মানে কোথা থেকে কোন পেনড্রাইভ থেকে কোন ল্যাপটপ থেকে এই রায়ের উৎপত্তি হয়েছে সেটা আমাদের জানা আছে। এই ষড়যন্ত্রের মুখোশ আমরা অচিরেই জনগণের কাছে উন্মোচন করবো।

‘সময় থাকতে আপনাদের যদি সম্মানবোধ থাকে তাহলে অবিলম্বে এই রায়ের অপ্রাসঙ্গিক বিষয়গুলো অপসারণ করবেন এবং এই রায় বাতিল করবেন বলেও বিচারপতিদের উদ্দেশ্যে মন্তব্য করেন তিনি।

বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের ভাইস-চেয়ারম্যান আব্দুল বাসেত মজুমদার বলেন, আজ বাংলাদেশের আইনজীবীরা একত্রিত হয়েছে ষোড়শ সংশোধনী রায়ের বিরুদ্ধে। এ রায়ে আইনী কথার চেয়ে রাজনীতির কথা বেশি বলা হয়েছে। যে রায় আপনি দিয়েছেন এই রায়ের জনসাধারণের প্রত্যাশা প্রতিফলিত হয়নি। আমরা আশা করবো অনতিবিলম্বে এ রায়কে বাতিল করবেন।

সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী আওয়ামী প্রেসিডিয়াম সদস্য অ্যাডভোকেট সাহারা খাতুন বলেন, আজকে যেভাবে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সম্পর্ক কটূক্তি (রায়ের মধ্য) করা হয়েছে সেটা কোন দিন বাংলার মানুষ মেনে নেবে না, মেনে নিতে পারে না। এই বাংলাদেশ এককভাবে বঙ্গবন্ধুই স্বাধীনতার ঘোষণা করেছিলেন।

তিনি আরও বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে এদেশকে স্বাধীন করতে ৩০ লক্ষ লোক প্রাণ দিয়েছিল। সেই বঙ্গবন্ধু ও সংসদকে নিয়ে যেভাবে কথা বলা হয়েছে সেটা সত্যিই দু:খজনক। বাংলাদেশের সংসদও সবার উপরে। সংসদ নিয়ে এভাবে মন্তব্য করা অত্যন্ত অসৌজন্যমূলক। আমরা আইনজীবীরা এটা সহ্য করতে পারি না। অবিলম্বে এটা প্রত্যাহার করে নেয়া হোক’।

আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকরা বঙ্গবন্ধু ও শেখ হাসিনা নিয়ে বিভিন্ন কটুক্তি করেছেন বলে তাদের হুঁশিয়ারি দিয়ে সাহারা খাতুন বলেন, আমরা আজ সকল আইনজীবীরা ঐক্যবদ্ধ হয়েছি। আইনজীবীরা জানে, কিভাবে আপনাদের বক্তব্য বন্ধ করা যায়।

অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, ষোড়শ সংশোধনীর রায়ে ৯৬ অনুচ্ছেদ বাতিল করেছেন। সংসদের হাতে বিচারক অপসারণ ক্ষমতা থাকবে না সেই রায় দিয়েছেন। কিন্তু সেই রায়ের সঙ্গে ৪০০ পাতার যে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সেটা আমরা মানি না, মানি না।

তিনি আরও বলেন, বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে যে উক্তি করেছেন পরবর্তীতে তার প্রতি প্রেম ভালবাসা দেখিয়েছেন সেটা পূরণ করা যাবে না, যাবে না। আজকে অনেকে মুক্তিযুদ্ধের কথা বলছেন, তার প্রশংসায় পাগল হয়ে যাচ্ছেন, তাতে কিন্তু ওই অপরাধ ঢাকবে না, ঢাকবে না।

ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন বলেন, আমাদের দাবি সংসদ নিয়ে এবং বঙ্গবন্ধু নিয়ে পর্যবেক্ষণে যে বক্তব্য দিয়েছেন তা বাতিল করতেই হবে। এটা নিয়ে কোন আপোষ নাই। তা না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে চলবে।

প্রসঙ্গত, উক্ত সমাবেশে সুপ্রিম কোর্টস্থ অসংখ্য আওয়ামীপন্থী আইনজীবীরা উপস্থিত ছিলেন।