সন্তানদের জন্য বিল গেটসের যত বিধিনিষেধ!

কিশোর বয়সেই কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শুরু করেন বিল গেটস। স্কুলে পড়ার সময় টিক-ট্যাক-টো গেমের একটি সংস্করণ তৈরি করেন, যেখানে কম্পিউটারের প্রতিপক্ষ হিসেবে খেলা যেত।

পরবর্তী সময়ে অন্যতম সেরা প্রযুক্তির প্রতিষ্ঠান মাইক্রোসফট দাঁড় করান সহপ্রতিষ্ঠাতা পল অ্যালেনের সঙ্গে। তার ঘরবাড়ির পরতে পরতে প্রযুক্তির ছোঁয়া আছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে বারবার।

বিল গেটসের সন্তানেরা যে বিশ্বসেরা প্রযুক্তি নিয়ে বেড়ে উঠবে, এমনটাই হওয়ার কথা ছিল। তবে ব্যাপারটা ঠিক উল্টো। প্রযুক্তিবিষয়ক অনুষঙ্গ ব্যবহারে তিন সন্তানের প্রতি বাবা বিল গেটসের আছে কঠিন বিধিনিষেধ।

সম্প্রতি ব্রিটিশ দৈনিক দ্য মিররকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বিল গেটস বলেন, ‘আমাদের খাবার টেবিলে সেলফোন থাকে না। অন্তত ১৪ বছর বয়স না হলে সন্তানদের হাতে সেলফোন তুলেও দিই না।’ তবে আর দশজন সাধারণ মানুষের মতো তার সন্তানেরাও যে একটু গোঁ ধরে, তা-ও অকপটে স্বীকার করেন। বলেন, ‘তারা অবশ্য প্রতিবাদ করে যে স্কুলের সহপাঠীদের সেলফোন আছে।’

সবার আগে সুস্বাস্থ্য-
সন্তানের পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য একটা নির্দিষ্ট সময়ের পর যেকোনো ধরনের যন্ত্র ব্যবহারেও রয়েছে বিল গেটসের নিষেধাজ্ঞা। তিনি বলেছেন, ‘আমরা প্রায়ই একটা সময় ঠিক করে দিই, যার পরে কোনো ধরনের পর্দা দেখার সুযোগ থাকে না। তাদের ক্ষেত্রে এটা পর্যাপ্ত ঘুমের জন্য সহায়ক।’

তাই বলে প্রযুক্তির ছোঁয়া থেকেও বঞ্চিত করতে চান না সন্তানদের। শুধু সঠিক সময়ের অপেক্ষা করতে বলেছেন। মুঠোফোনের ভালো দিকের কোথাও উল্লেখ করেন বিল। যেমন হোমওয়ার্ক এবং বন্ধুদের সঙ্গে যুক্ত থাকতে মুঠোফোন দারুণ কাজে দিতে পারে। বিল বলেন, ‘আপনি সব সময়ই এর ভালো ব্যবহার খুঁজে দেখবেন, কীভাবে এটি ভালো কাজে ব্যবহার করা যায়।’

সবার হাতেই উঠেছে মুঠোফোন-
তিন সন্তানের সবারই অবশ্য বয়সের ‘কোঠা’ পেরিয়েছে। বড় কন্যা জেনিফার ক্যাথেরিন গেটসের বয়স ২০, পুত্র ররি জন গেটসের ১৭ এবং ছোট কন্যা ফিবি অ্যাডেল গেটসের বয়স ১৪ বছর। সে হিসাবে সবার হাতেই মুঠোফোন উঠেছে। তবে কোন মুঠোফোন তারা ব্যবহার করছে, তা জানার সুযোগ হয়নি। এর আগে একবার গুজব ছড়িয়েছিল যে জেনিফার অ্যাপলের যন্ত্রপাতি ব্যবহার করেন। সে গুজব কি শুধুই গুজব, নাকি সত্যতা আছে, তা জানারও সুযোগ হয়নি।

সুখের মূলে স্ত্রী-সন্তান-
৮ হাজার ৭০০ কোটি ডলারের মালিক বিল গেটসের জীবনযাপন বেশ সাদাসিধে। দ্য মিরর-এর সঙ্গে সাক্ষাৎকারের সময় ৮ পাউন্ডের এক ঘড়ি ছিল তার হাতে। পরনের বেশভূষাও ছিল সাধারণ। ৬১ বছর বয়স হয়েছে। এখনো ম্যাকডোনাল্ডস কিংবা বার্গার কিংয়ের হ্যাম বার্গার তার পছন্দের।

স্ত্রী মেলিন্ডা গেটসের সঙ্গে ‘বিল অ্যান্ড মেলিন্ডা গেটস ফাউন্ডেশন’ নামের দাতব্য সংস্থা গড়ে তুলেছেন। এখন কাজ করছেন সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের নিয়ে।

তার মতে, ‘প্রত্যেক শিশুর মাঝে সম্ভাবনা অসীম।’ সেই সম্ভাবনাই সামনে আনতে চান। তবে এ কাজ করতে করতে মাঝেমধ্যে নিজের সন্তানদের সময় দিতে পারেন না। এ নিয়ে কিছুটা অপরাধবোধেও ভোগেন।

আফসোস প্রকাশ করে বিল গেটস বলেন, ‘সন্তানদের সঙ্গে সব সময় ভালো সময় কাটাতে পারি না।’ এই সময় কাটানো তার জন্য খুব জরুরি। কারণ? ‘অর্থ থাকাটাই সব প্রশ্নের উত্তর না।’ বিল গেটসের উত্তর। ৮ হাজার ৭০০ কোটি টাকা না; বরং তিন সন্তান ও স্ত্রী মেলিন্ডা তার সুখের মূল উৎস। সূত্র: দ্য মিরর