মসজিদের বেড়া বানিয়ে দিলেন হিন্দুরা

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার নারগুন ইউনিয়নের পোকাতি পঞ্চায়েতপাড়া গ্রামে স্থানীয় হিন্দু-মুসলমান সম্প্রদায় সম্প্রীতি ও ভ্রাতৃত্বের সঙ্গে পাশাপাশি বসবাস করে আসছেন। ওই গ্রামের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন মুসলমানদের জরাজীর্ণ একটি মসজিদ সংস্কারে সহযোগিতা করে সম্প্রীতির দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন।

ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার পোকাতি পঞ্চায়েতপাড়া গ্রামে জনবসতি খুবই কম। গ্রামের পঞ্চায়েতপাড়ায় বসবাসকারীদের মধ্যে হিন্দু ধর্মাবলম্বী পরিবারের সংখ্যা বেশি। মুসলমান পরিবারের সংখ্যা হাতেগোনা কয়েকটি। আর সেখানে মসজিদ রয়েছে একটি। মসজিদটি ছোট হলেও প্রতিদিন ৫০/৬০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করেন। শুক্রবারের জুম্মার নামাজও আদায় করেন তারা। মসজিদের চারপাশে বেড়ার অভাবে দীর্ঘদিন বিভিন্ন সমস্যা দেখা দিচ্ছিল।

গত শনিবার সেখানে দেখা গেল এক অনন্য ঘটনা। বিজয় ও পালানু নামে হিন্দু সম্প্রদায়ের দুই ব্যক্তি বাঁশ কেটে মসজিদের বেড়া তৈরি করে চারপাশে লাগিয়ে দেন।

বিজয় জানান, আমরা এ গ্রামে হিন্দু-মুসলমান একসঙ্গে বাস করি। কাজেই তাদের ধর্মের ঘর মেরামত করে দিলে ক্ষতি কী?

তিনি বলেন, ‘আমরা একইসাথে চলাফেরা, নাওয়া-খাওয়া করি। বাজারেও যাই একসঙ্গে। আমাদের পূজার সময় মুসলমানরা যেমন আমাদের সহযোগিতা করে আমরাও তেমনি সহযোগিতা করছি।’

মসজিদের মুসল্লিরা জানান, এ গ্রামে হিন্দু-মুসলমান ভেদাভেদ নেই।

সরেজমিনে জানা যায়, নারগুন ইউনিয়নের পোকাতি গ্রাম একটি আদর্শ এলাকা। ওই এলাকায় জেলার সবচেয়ে বেশি সবজি চাষ হয়। সবজির মৌসুমে সেখানকার কৃষকরা জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন জেলায় সবজি রপ্তানি করে সাবলম্বী হয়েছেন। ওই এলাকার মানুষজন অতিথিপরায়ণ।

আত্মীয়-স্বজনদের তারা পরম মমতায় আপ্যায়ন করে থাকেন। তাই বিভিন্ন এলাকার মানুষ পোকাতিতে কারো বাড়িতে বেড়াতে গেলে দীর্ঘদিন বাড়ি যাওয়ার নাম নেন না।

এলাকার লোকজনের সাথে কথা বলে জানা যায়, নারগুন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক ও যুবলীগের সভাপতির বাড়ি পোকাতি গ্রামে।

এ গ্রামে দুর্গাপূজার সময় স্থানীয় মুসলমানরা-হিন্দুদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে মন্ডা মিঠাই গ্রহণ করেন। কালিপূজার সময়ও একই অবস্থা।

অপরদিকে মুসলমানদের ঈদের সময়ও হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন দল বেধে মুসলমানদের বাড়িতে আপ্যায়ন গ্রহন করেন। উভয় সম্প্রদায়ের ছেলে-মেয়েদের বিয়ে সাদীতেও পরস্পর পরস্পরের বাড়িতে ধুমধামের সাথে আনন্দ উপভোগ করেন।

এ ব্যাপারে নারগুন ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সেরেকুল ইসলাম জানান, পোকাতি গ্রামে হিন্দু-মুসলমান একসাথে বসবাস করে এবং শান্তি-সম্প্রীতি বজায় রাখে।