সর্বনাশা নদী : সড়ক খেলো, এবার স্কুলের পালা

বাবুগঞ্জ (বরিশাল): ‘আমাগো পাকা কার্পেটিং রাস্তাটা তো নদীর প্যাটেই গেল, এখন স্কুলটাও কী যাবে? আশেপাশে পাঁচ মাইলের মধ্যে কোনো স্কুল নাই। তাইলে আমাগো মাইয়াপোলারা কোথায় লেখাপড়া করবে’? নদী ভাঙনের ছবি তুলতে দেখে ছুটে এসে এমন প্রশ্নই করলেন স্থানীয় ভ্যানচালক আইয়ুব আলী।

শুধু তিনি এক নন, পল্লী চিকিৎসক ডা. হেমায়েত উদ্দিন মানিক, শিক্ষক আবুল কালাম মাস্টারসহ এমন প্রশ্ন এখন মহিষাদী গ্রামবাসীর। সুগন্ধা নদীর অব্যাহত ভাঙনে বাবুগঞ্জের মহিষাদী গ্রামের কার্পেটিং সড়কটি ইতোমধ্যে বিলীন হয়ে গেছে।

এখন বিলীনের মুখে রয়েছে এলাকার ঐতিহ্যবাহী মহিষাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। বিদ্যালয়ের প্রায় অর্ধেক জমি হারিয়ে গেছে নদীতে। ভাঙন থেকে মূল স্কুলভবনের দূরত্ব এখন ২০ ফুটেরও কম। যে কোনো সময় নদীতে দেবে যেতে পারে এ প্রাথমিক বিদ্যালয়টি। তবু ঝুঁকি নিয়েই সেখানে চলছে পাঠদান। স্কুলের দুই শতাধিক শিশুরা বাধ্য হয়েই ক্লাস করছে সেখানে।

স্থানীয় পল্লী চিকিৎসক ডা. হেমায়েত উদ্দিন মানিক জানান, মহিষাদী গ্রামে আর কোনো প্রাথমিক বিদ্যালয় নেই। এখান থেকে পাঁচ মাইলের মধ্যেও নেই কোনো স্কুল। তাই স্কুলটি ভেঙে গেলে এই গ্রামের ছেলেমেয়েদের কী হবে?

মহিষাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মজিবুর রহমান বলেন, ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত এ স্কুলটিতে এখন শিক্ষার্থী সংখ্যা দুই শতাধিক। এরমধ্যে নিয়মিত ক্লাস করে ১৫৭ জন শিক্ষার্থী। তীব্র ভাঙন ঝুঁকির মধ্যেই স্কুলে তাদের নিয়মিত পাঠদান চলছে। ঝুঁকিপূর্ণ এ স্কুলটি অন্যত্র সরিয়ে নেয়ার জন্য উপজেলা শিক্ষা অফিসে অনেকবার লিখিত আবেদন করা হয়েছে। এলজিইডি দপ্তরে একে একে তিনবার ছবি তুলে জমা দেয়া হয়েছে। তবু এখনো কিছুতেই কিছু হয়নি।

ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে উপজেলা প্রকৌশলী মো. তুহিন সরকার জানান, স্কুলটি অন্যত্র স্থানান্তরের জন্য আগেই মন্ত্রণালয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। নতুন ভবনের জন্য প্রেরিত তালিকায়ও মহিষাদী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের নাম রয়েছে। বিষয়টি উর্ধ্বতন দপ্তরে প্রক্রিয়াধীন আছে।

এ প্রসঙ্গে স্থানীয় বরিশাল-৩ (বাবুগঞ্জ-মুলাদী) আসনের এমপি অ্যাডভোকেট শেখ মো. টিপু সুলতান জানান, ঢাকা- বরিশাল মহাসড়কের বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর সেতু (দোয়ারিকা সেতু) রক্ষার জন্য বৃহৎ একটি প্রকল্প হাতে নেয়া হয়েছে। সেতুর দুই দিকে প্রায় এক কিলোমিটার করে নদী শাসনের ওই প্রকল্পের কাজ শুরু হলে মাহিষাদী গ্রামে নদী ভাঙন আর থাকবে না।