সাত খুন মামলা : নূর হোসেনসহ ১৫ জনের মৃত্যুদণ্ড বহাল

নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাব-১১-এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানাসহ ১৫ আসামির মৃত্যুদণ্ড বহাল রেখেছেন হাইকোর্ট।

এছাড়া ১১ জনের দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন করা হয়েছে।

মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত অপর আসামিরা হলেন: র‌্যাব-১১-এর হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, ল্যান্সনায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহী আবু তৈয়্যব আলী, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, সৈনিক আবদুল আলীম, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া ও আরওজি-১ এ বি মো. আরিফ হোসেন, সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আল আমিন শরীফ, সৈনিত এমডি তাজুল ইসলাম।

আলোচিত সাত খুন মামলার ডেথ রেফারেন্স ও আসামিদের আপিল শুনানি শেষে মঙ্গলবার বিকেলে বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিং ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলামের সমন্বয়ে গঠিত বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

মঙ্গলবার সকাল ১০টা ৩৫ মিনিটে রায় পড়া শুরু হয়। বেলা ১টায় এক ঘণ্টার জন্য বিরতিতে যান আদালত। বিরতির পর দুপুর সোয়া ২টা থেকে ফের রায় পড়া শুরু করেন বিচারপতি ভবানী প্রসাদ সিং ও বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম।

গত ১৬ জানুয়ারি সাত খুন মামলার রায় দেন নারায়ণগঞ্জের জেলা ও দায়রা জজ সৈয়দ এনায়েত হোসেন। মামলার প্রধান আসামি নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের (নাসিক) সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন ও র‌্যাবের বরখাস্তকৃত তিন কর্মকর্তা লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মোহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানাসহ ২৬ জনকে মৃত্যুদণ্ড দেন আদালত। মোট ৩৫ আসামির মধ্যে বাকি নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

গত ২২ মে এ মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের ডেথ রেফারেন্স ও আপিলের ওপর হাইকোর্টের শুনানি শুরু হয়। প্রথমে বেশ কয়েকদিন আসামিপক্ষের আইনজীবীরা তাদের যুক্তি উপস্থাপন করেন। পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম তার যুক্তিতর্ক উপস্থাপন করেন।

শুনানি শেষে গত ২৬ জুলাই রায় ঘোষণার জন্য ১৩ আগস্ট দিন ধার্য করে আদেশ দেন আদালত। এরপর ১৩ আগস্ট আদালত রায় না দিয়ে তারিখ পিছিয়ে ২২ আগস্ট রায় ঘোষণার দিন ধার্য করেন।

নিম্ন আদালতে সাজাপ্রাপ্ত ৩৫ আসামির মধ্যে ১২ জন পলাতক। গ্রেফতারকৃত ২৩ জনের মধ্যে ১৮ জনকে নারায়ণগঞ্জ জেলা কারাগারে ও পাঁচজনকে গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগারে রাখা হয়েছে। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত ২৬ জনের মধ্যে গ্রেফতার ও আত্মসমর্পণ করে কারাগারে থাকা ২০ জন নিয়মিত জেল আপিল করেন।

তারা হলেন- প্রধান আসামি নাসিকের সাবেক কাউন্সিলর নূর হোসেন, র‌্যাব-১১-এর চাকরিচ্যুত সাবেক অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল তারেক সাঈদ মুহাম্মদ, মেজর আরিফ হোসেন, লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মাসুদ রানা, হাবিলদার মো. এমদাদুল হক, ল্যান্সনায়েক বেলাল হোসেন, সিপাহী আবু তৈয়্যব আলী, কনস্টেবল শিহাব উদ্দিন, এসআই পূর্ণেন্দু বালা, সিপাহী আসাদুজ্জামান নূর, সৈনিক আবদুল আলীম, সার্জেন্ট এনামুল কবির, ল্যান্স নায়েক হীরা মিয়া ও আরওজি-১ এ বি মো. আরিফ হোসেন এবং নূর হোসেনের ৬ সহযোগী মূর্তজা জামান চার্চিল, আলী মোহাম্মদ, মিজানুর রহমান দিপু, আবুল বাশার, রহম আলী ও জামাল উদ্দিন সরদার।

পলাতক ৬ আসামি আপিল করেননি। তারা হলেন- র‌্যাব-১১-এর চাকরিচ্যুত সৈনিক মহিউদ্দিন মুন্সী, সৈনিক আলামিন শরীফ ও সৈনিক তাজুল ইসলাম এবং নূর হোসেনের তিন সহযোগী ভারতে গ্রেফতারকৃত সেলিম, সানাউল্লাহ সানা ও শাহজাহান।

প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল বেলা দেড়টার দিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংক রোড থেকে অপহৃত হন নাসিক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম, আইনজীবী চন্দন সরকারসহ সাতজন। তিনদিন পর ৩০ এপ্রিল শীতলক্ষ্যা নদীতে একে একে ভেসে ওঠে ছয়টি মরদেহ। পরদিন মেলে আরেকজনের মরদেহ। নিহত অন্যরা হলেন নজরুলের বন্ধু মনিরুজ্জামান স্বপন, তাজুল ইসলাম, লিটন, গাড়িচালক জাহাঙ্গীর আলম ও চন্দন সরকারের গাড়িচালক মো. ইব্রাহীম।

ঘটনার একদিন পর নজরুলের স্ত্রী সেলিনা ইসলাম বাদী হয়ে আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতা (পরে বহিষ্কৃত) নূর হোসেনসহ ছয়জনের নাম উল্লেখ করে ফতুল্লা মডেল থানায় মামলা করেন।