সারাদেশে ১৩০০ স্কুল পানিবন্দি, পাঠদান থেকে বিচ্ছিন্ন লাখো শিক্ষার্থী

বন্যায় দেশের ১০ জেলায় এক হাজার ২৬৬টির বেশি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পূর্বাঞ্চলে প্রতিদিন নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হওয়ায় এই সংখ্যা প্রতিনিয়তই বাড়ছে।

এসব স্কুল বন্ধ থাকায় কয়েক লাখ শিক্ষার্থী এখন পাঠদান থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাতিল হয়ে গেছে অর্ধবার্ষিক পরীক্ষা। পানিবন্দি হওয়ায় আসবাবপত্র, বই-খাতাসহ স্কুলের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। আবার বিভিন্ন জেলায় বন্যায় প্লাবিত অনেক মানুষ সরকারি-বেসরকারি স্কুলে আশ্রয় নিয়েছেন। তবে কর্তৃপক্ষ বন্যায় ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে।

কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ইতোমধ্যে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর এবং শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরে পানিবন্দি বিদ্যালয়ের তালিকা আসছে। পানি নেমে গেলে স্থানীয়ভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করে তা পুনরায় সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।

প্রাথমিক ও গণশিক্ষা অধিদফতর (ডিপিই) ও মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের (মাউশি) সর্বশেষ তথ্যমতে, শুধু প্রাথমিক স্কুলগুলোর প্রায় ১২ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এটা দিনদিন বাড়ছে। তবে বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলে এই ক্ষতির হার কমতে পারে বলেও সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন। বিভিন্ন জেলার শিক্ষা অফিসারদের সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্য জানা গেছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বন্যায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ক্ষয়ক্ষতি ও অন্যান্য বিষয়ে মনিটরিং করার জন্য আলাদা সেল গঠন করা হয়েছে। এই সেলগুলো বন্যা শেষ হলে বন্যার সময় একাডেমিক, প্রশাসনিক ও অবকাঠামোর ক্ষয়ক্ষতির রিপোর্ট তৈরি করবে। তাদের রিপোর্টের ভিত্তিতে সরকার পরবর্তী পদক্ষেপ নেবে।

সূত্রে জানা গেছে, বন্ধ হয়ে যাওয়া শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে এক হাজার ৩৩টি আর নিম্ন মাধ্যমিক, মাধ্যমিক স্কুল, কলেজ ও মাদরাসার সংখ্যা প্রায় ৩’শ।

ডিপিই থেকে জানা গেছে, বন্যায় প্লাবিত প্রাথমিক বিদ্যালয়গুলোর তালিকার শীর্ষে রয়েছে সিরাজগঞ্জ। বন্যায় এ জেলার ২০০ স্কুল এখন পানির নিচে। দ্বিতীয় পর্যায়ে ১৬১টি জামালপুরে, গাইবান্ধায় ১৩০টি, কুড়িগ্রামে ৯৫টি, বগুড়ায় ৭৩টি, লালমনিরহাটে ১১টি, রংপুরে ৪টি এবং নিলফামারীতে ২টি স্কুল রয়েছে।

ডিপিইর পরিকল্পনা শাখার সহকারী পরিচালক মো. নুরুল আমিন বলেন, বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলের তালিকা পাঠাতে প্রাথমিক জেলা শিক্ষা অফিসারদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে আমরা ১০ জেলা থেকে তালিকা পেয়েছি। সেখানে এক হাজার ৩৩টি স্কুল রয়েছে। সেসব স্কুলে ক্ষতিপূরণ বাবদ ১২ কোটি টাকা দেয়ার উল্লেখ করা হয়েছে।

এর সংখ্যা আরও বাড়তে পারে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নিরূপণে ডিপিইতে একটি মনিটরিং সেল তৈরি করা হয়েছে। তারা এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছেন। তাদের প্রতিবেদন পেলে ক্ষয়ক্ষতির সঠিক চিত্রটি উঠে আসবে। পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত স্কুলগুলোর সংস্কার কাজ শুরু করা হবে।

অন্যদিকে, মাধ্যমিক পর্যায়ে বন্যায় প্লাবিত স্কুলগুলোর মধ্যে মৌলভীবাজার জেলায় ৫৮টি, জামালপুরে ৫৭টি, কুড়িগ্রামে ৫৬টি, সিলেটে ৩২টি, গাইবান্ধায় ১৯টি, বগুড়ায় ১০, লালমনিরহাটে ৩টি এবং রংপুরে ১টি স্কুল রয়েছে।

এ বিষয়ে মাউশির বিদ্যালয় শাখার পরিচালক মো. এলিয়াছ হোসেন বলেন, বন্যায় প্লাবিত স্কুলের তালিকা আসতে শুরু করেছে। কয়েকটি জেলা থেকে এ তালিকা পাওয়া গেছে। তালিকা আসার পর বিদ্যালয়ের ক্ষয়ক্ষতির পরিমাল নির্ণয় করে তা সংস্কার করা হবে।

তিনি আরও বলেন, ক্ষতিগ্রস্ত ভবন মেরামতের পাশাপাশি অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে শিক্ষার্থীদের পাঠদান ক্ষতি পুষিয়ে নেয়া হবে।

তবে এ বিষয়ে শিক্ষা এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা সুনির্দিষ্ট করে কিছু বলতে পারেননি।

একাধিক কর্মকর্তা বলেন, অতিরিক্ত ক্লাস কখন নেয়া হবে সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা দেয়া হয়নি।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদফতরের প্রধান প্রকৌশলী দেওয়ান মো. হানজালা বলেন, বন্যার পানি নেমে গেলে প্রতিষ্ঠানের ভৌত অবকাঠামো ও ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয় করা হবে। স্থানীয় জেলা প্রশাসক ও জেলা পর্যায়ে নির্বাহী প্রকৌশলীদের ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভবন মেরামতে কত টাকা লাগবে তার তালিকা পাঠানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, শিক্ষামন্ত্রীর নির্দেশে তালিকা পাওয়ার পর ক্রাশ প্রোগ্রামের মাধ্যমে পরবর্তী এক মাসের মধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত সব বিদ্যালয়ের সংস্কার কাজ শেষ করা হবে।