সায়েদাবাদে যাত্রীদের উপচে পড়া ভিড়, এখনও মিলছে টিকিট

বাড়ি ফেরা মানুষের উপচেপড়া ভিড় এখন রাজধানীর ট্রেন ও বাস টার্মিনালগুলোতে। কোনো কোনো বাস টার্মিনালে পরিবহন টিকিট পেতে বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের, ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করেও টিকিট মিলছে না। বৃহস্পতিবার ঈদের আগের শেষ অফিস করেই ঢাকা ছাড়া শুরু করে ঘরমুখো মানুষ। কিন্তু শুক্রবার সকাল থেকেই রাজধানীর বাস টার্মিনালগুলোতে বেড়ে চলেছে সেই মানুষের ভিড়।

এ ক্ষেত্রে কিছুটা ব্যতিক্রম চিত্র সায়েদাবাদের টিকিট কাউন্টারগুলোতে। এখানকার টিকিট কাউন্টারগুলো থেকে সিলেট, চট্টগ্রাম, নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, ফেনী, কুমিল্লা, বরিশাল ও খুলনা রুটের পরিবহনের টিকিক বিক্রি করা হয়।

নোয়াখালী, লক্ষ্মীপুর, কুমিল্লা, ফেনী রুটের যাত্রীরা সায়েদাবাদের কাউন্টারে আসলেই গন্তব্যে যাওয়ার টিকিট পাচ্ছেন। এমনকি কিছু কিছু পরিবহন হাঁক ছেড়ে যাত্রীদের ডাকছেন। তবে সিলেট ও চট্টগ্রাম রুটের পরিবহনগুলোর টিকিট মেলা দুরহ হয়ে উঠেছে।

সিলেট ও চট্টগ্রামে যেসব পরিবহন যায় তার সবকটিরই টিকিট ২৭ জুন পর্যন্ত অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে। ফলে যারা আগেই সিলেট বা চট্টগ্রামে যাওয়ার টিকিট নেননি তাদের পড়তে হচ্ছে বিড়ম্বনায়। ভালো গাড়ির টিকিট না পেয়ে অনেকেই বিভিন্ন নামে চলা লোকাল সার্ভিসে রওনা দিচ্ছেন।

রাজধানীর অন্যতম বৃহৎ এ টার্মিনাল থেকে সিলেট ও চট্টগ্রাম রুটে হানিফ, ঈগল, শ্যামলী, সৌদিয়া, রয়েল, আল-মোবারকা, মামুনসহ আরো কয়েকটি পরিবহন ছেড়ে যায়। ফেনী, কুমিল্লা, লক্ষ্মীপুর রুটে চলাচল করে জোনাকী, ইকোনো, আল-এরাবিয়া, স্টার লাইন, কে কে ট্রাভেলসসহ আরো বেশ কয়েকটি পরিবহন।

সিলেট, চট্টগ্রাম রুটে চলাচল করা হানিফ পরিবহন কাউন্টার ম্যানেজার ইসমাইল জানান, বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত যাত্রীদের তেমন চাপ ছিল না। তবে বিকেল ৪টার পর থেকে যাত্রীদের চাপ বাড়তে থাকে। আর আজ তো দেখতেই পাচ্ছেন যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড়।

তিনি বলেন, ‘গতকাল (বৃহস্পতিবার) দুপুরের আগ পর্যন্তও প্রায় প্রতিটি গাড়িতেই একাধিক ছিট খালি রেখে ছেড়ে দিতে হয়েছে। আজ আর সে অবস্থা নেই। এখন আমরা নতুন করে কোনো টিকিট বিক্রি করছি না। ২৭ জুন পর্যন্ত আমাদের সব টিকিট বিক্রি হয়ে গেছে। এখন ২৮ তারিখের আগের টিকিট পাওয়া যাবে না।’

যাত্রী হিসেবে শ্যামলী পরিবহনের কাউন্টারের গেলে টিকিট বিক্রেতা মো. ইকরামুল বলেন, ‘ভাই অন্য গাড়ি দেখেন। ২৭ তারিখ পর্যন্ত কোনো টিকিট পাবেন না। আমাদের কিছু করার নেই। সব টিকিটই অগ্রিম বিক্রি হয়ে গেছে।’

তবে ঢাকা থেকে সিলেট, চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার রুটে চলাচল করা আল-মোবারকা পরিবহনের কাউন্টার ম্যানেজার মো. ইয়াসিন বললেন ভিন্ন কথা। তিনি জানালেন, ‘আমাদের কাউন্টারে আজও কিছু কিছু টিকিট বিক্র করা হচ্ছে। যাত্রীরা এসে টিকিট নিচ্ছেন। তবে রাস্তায় কিছুটা যানজট আছে। বিশেষ করে কাঁচপুর ব্রিজ এবং গাউছিয়া এলাকায় যানজট সৃষ্টি হচ্ছে।’

ইয়াসিন বলেন, ‘গাউছিয়াতে এমনিই সব সময় কিছু যানজট থাকে। এখন ফ্লাইওভারের কাজ চলছে। ঈদ উপলক্ষে গাড়ি চলাচলের সংখ্যাও বেড়েছে যে কারণে যানজটের পরিমাণ কিছুটা বেড়ছে। তবে গাউছিয়া পার হওয়ার পর খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না।’

লক্ষ্মীপুরগামী ইকোনো পরিবহনের কাউন্টারম্যান ম্যানেজার আনোয়ার বলেন, ‘এই গাড়ির টিকিট পেতে কোনো সমস্যা নেই। কারণ আমাদের আধাঘণ্টা পর পর গাড়ি রয়েছে। আমরা অগ্রিম কোনো টিকিট বিক্রি করি না। যাত্রীরা যখন যাবেন তখন কাউন্টারে আসলেই টিকিট পাবেন।’

ফেনী রুটের আল-এরাবিয়া পরিবহনের টিকিট বিক্রেতা মো. কামাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের গাড়িতে টিকিটের কোনো সমস্য নেই। যাত্রীরা আসলেই টিকিট পাবেন। অধাঘণ্টা পর পর গাড়ি আছে। তবে আগে আসলে ভালো সিট পাওয়া যাবে। পরে আসলে পিছনের সিট নিতে হবে অথবা পরের গাড়ির জন্য অপেক্ষা করতে হবে।’

সায়েদাবাদ থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেওয়া ফরিদা ইয়াসমিন বলেন, ‘আমি একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। শনিবারও অফিস আছে। বসকে বলে শনিবার ছুটি নিয়েছি। গ্রামে বাবা-মা এবং এক ভাই ও এক বোন আছে। সবাই আমার ওপর নির্ভরশীল। ছোট ভাই-বোন নতুন পোশাকের আশায় বসে আছে। ওদের জন্য এবং মা-বাবার জন্যও নতুন পোশাক কিনেছি। সামর্থের মধ্যেই সবাই মিলে ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করে নেব তাই ছুটছি বাড়ি।’