সিনহার বিরুদ্ধে অর্থপাচার, নৈতিক স্খলনসহ ১১ অভিযোগ

ছুটিতে অস্ট্রেলিয়া যাওয়া প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার (এস কে) সিনহার বিরুদ্ধে বিদেশে অর্থপাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি ও নৈতিক স্খলনসহ ১১টি গুরুতর অভিযোগ দালিলিক তথ্যাদিসহ চার বিচারপতির কাছে হস্তান্তর করেছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।গত ৩০ সেপ্টেম্বর চার বিচারপতিকে বঙ্গভবনে ডেকে অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন তিনি। শনিবার সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেল সৈয়দ আমিনুল ইসলাম স্বাক্ষরিত এ সংক্রান্ত এক বিবৃতি প্রকাশ করেছে সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসন।

প্রসঙ্গত, ছুটিতে থাকা প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা শুক্রবার রাতে অস্ট্রেলিয়ার উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেছেন। সস্ত্রীক যাওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত একাই তিনি অস্ট্রেলিয়া যান।

অস্ট্রেলিয়া রওনার পথে হেয়ার রোডের বাসভবনের সামনে প্রধান বিচারপতি সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি অসুস্থ না। আমি পালিয়ে যাচ্ছি না। বিচার বিভাগের স্বার্থে আমি স্বেচ্ছায় বিদেশ যাচ্ছি। আবার ফিরে আসব। প্রধানমন্ত্রীকে ভুল বোঝানো হয়েছে।’

এসময় সাংবাদিকদের দেওয়া এক লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘আমি সম্পূর্ণ সুস্থ আছি। কিন্তু ইদানিং একটা রায় নিয়ে রাজনৈতিক মহল, আইনজীবী, বিশেষভাবে সরকারের মাননীয় কয়েকজন মন্ত্রী ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী আমাকে ব্যক্তিগতভাবে যেভাবে সমালোচনা করেছেন, এতে আমি সত্যিই বিব্রত।’

তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেন, ‘আমার দৃঢ় বিশ্বাস, সরকারের একটি মহল আমার রায়কে ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে পরিবেশন করায় প্রধানমন্ত্রী আমার প্রতি অভিমান করেছেন। এই অভিমান অচিরেই দূর হবে বলে আমার বিশ্বাস।’

এই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্টের দেওয়া বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ছুটিভোগরত মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা গত ১৩ অক্টোবর বিদেশ গমনের প্রাক্কালে একটি লিখিত বিবৃতি উপস্থিত গণমাধ্যম কর্মীদের নিকট হস্তান্তর করেন। উক্ত লিখিত বিবৃতিটি সুপ্রীম কোর্টের দৃষ্টি গোচর হয়েছে। উক্ত লিখিত বিবৃতি বিভ্রান্তিমূলক। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সুপ্রীম বক্তব্য নিম্নরুপ:’

‘গত ৩০ সেপ্টেম্বর রাষ্ট্রপতি মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা ব্যতীত আপীল বিভাগের ৫ জন বিচারপতিকে বঙ্গভবনে আমন্ত্রণ জানান। মাননীয় বিচারপতি মো. ইমান আলী মহোদয় দেশের বাহিরে থাকায় উক্ত আমন্ত্রণে তিনি উপস্থিত থাকতে পারেন নাই। অপর চারজন অর্থাৎ মাননীয় বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহহাব মিঞা, বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন, বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী এবং বিচারপতি মির্জা হোসেইন হায়দার রাষ্ট্রপতির সহিত সাক্ষাৎ করেন।’

‘দীর্ঘ আলোচনার এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার বিরুদ্ধে ১১টি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ সম্বলিত দালিলিক তথ্যাদি হস্তান্তর করেন। যেমন- বিদেশে অর্থ পাচার, আর্থিক অনিয়ম, দুর্নীতি, নৈতিক স্খলনসহ আরো সুনির্দিষ্ট গুরুতর অভিযোগ রহিয়াছে।’

‘ইতোমধ্যে বিচারপতি মো. ইমান আলী মহোদয় ঢাকায় প্রত্যাবর্তনের পর গত ১ অক্টোবর আপীল বিভাগের ৫ জন বিচারপতি এক বৈঠকে মিলিত হয়ে উক্ত ১১টি অভিযোগ বিশদভবে পর্যালোচনার পর এই সিদ্ধান্ত উপনীত হন যে, ঐ সকল গুরুতর অভিযোগ সমূহ মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহাকে অবহিত করা হইবে। তিনি যদি ঐ সকল অভিযোগের ব্যাপারে কোন সন্তোষজনক জবাব দিতে ব্যর্থ হন তাহা হইলে তাঁহার সঙ্গে বিচারালয়ে বসিয়া বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব হইবেনা। এই সিদ্ধান্তের পর ঐ দিনই বেলা ১১.৩০ ঘটিকায় মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার অনুমতি লইয়া উল্লেখিত ৫ জন বিচারপতি মাননীয় প্রধান বিচারপতির বাসভবনে সাক্ষাৎ করে অভিযোগ সমূহ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করেন। কিন্তু দীর্ঘ আলোচনার পরেও তাঁহার নিকট হইতে কোন প্রকার গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা বা সদুত্তর না পাইয়া আপীল বিভাগের উল্লেখিত মাননীয় ৫ জন বিচারপতি তাঁহাকে সুস্পষ্ঠভাবে জানিয় দেন যে, এমতাবস্থায়, উক্ত অভিযোগ সমূহের সুরাহা না হওয়া পর্যন্ত তাঁহার সঙ্গে একই বেঞ্চে বসিয়া তাঁহাদের পক্ষে বিচারকার্য পরিচালনা করা সম্ভব হইবে না। এ পর্যায়ে মাননীয় প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহা সুস্পষ্টভাবে বলেন যে, সেক্ষেত্রে তিনি পদত্যাগ করিবেন। তবে এ ব্যাপারে পরের দিন ২/১০/২০১৭ইং তারিখে তিনি তাহার চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানাইবেন। এরপর ২/১০/২০১৭ইং তারিখে তিনি বিচারপতিগণকে কোন কিছু অবহিত না করিয়াই মহামান্য রাষ্ট্রপতির নিকট ১ (এক) মাসের ছুটির দরখাস্ত প্রদান করিলে রাষ্ট্রপতি তা অনুমোদন করেন। তৎপ্রেক্ষিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতি সংবিধানের ৯৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠতম বিচারপতি মো. আব্দুল ওয়াহহাব মিঞাকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতির অনুপস্থিতিতে প্রধান বিচারপতির অনুরূপ কার্যভার পালনের দায়িত্ব প্রদান করেন।’

‘উল্লেখ্য, প্রধান বিচারপতির পদটি একটি প্রতিষ্ঠান। সেই পদের ও বিচার বিভাগের মর্যাদা সমুন্নত রাখার স্বার্থে ইতঃপূর্বে সুপ্রীম কোর্টের তরফ হইতে কোন প্রকার বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান করা হয়নি। কিন্তু উদ্ভূত পরিস্থিতির প্রেক্ষিতে নির্দেশক্রমে উপরি-উক্ত বিবৃতি প্রদান করা হইল।’