সিরিজ বোমা হামলার এক যুগ : গ্রেফতার হয়নি অর্ধশতাধিক জঙ্গি

আজ ১৭ আগস্ট। দেশের ৬৩ জেলায় সিরিজ বোমা হামলার ১২ বছর আজ। ২০০৫ সালের এই দিনে একযোগে দেশের ৬৩ জেলায় বোমা হামলা চালিয়ে আত্মপ্রকাশ করে নিষিদ্ধ জঙ্গি সংগঠন জামায়াতুল মুজাহিদীন বাংলাদেশ (জেএমবি)। ওই ঘটনার ১২ বছর পেড়িয়ে গেলেও চার্জশিটভুক্ত প্রায় অর্ধশতাধিক জঙ্গিকে এখনও গ্রেফতার হয়নি। তবে বড় নেতারা কারাগারে থাকায় নেতৃত্ব সংকটে দুর্বল হয়ে পড়েছে নিষিদ্ধ এ জঙ্গি সংগঠনটি।

জানা গেছে, ময়মনসিংহের ত্রিশাল থেকে ছিনতাই হওয়া জঙ্গি সালাউদ্দীন সালেহীনের নির্দেশনায় বিক্ষিপ্তভাবে সংগঠিত হওয়ার চেষ্টা করছে তারা। তবে জঙ্গি সালাউদ্দীন সালেহীনের অবস্থান জানেন না আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর তথ্য অনুযায়ী, সিরিজ বোমা হামলার ঘটনায় দায়েরকৃত মোট ১৬১টি মামলায় পুলিশের চার্জশিটে মোট ৬৬০ জঙ্গির নাম উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে এ পর্যন্ত ৪৫৫ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। জামিনে আছেন ৩৫ জন। বাকিদের ১২ বছরেও গ্রেফতার করা সম্ভব হয়নি। গোয়েন্দারা বলছে, এদের অনেকে ভারতে পালিয়েছে রয়েছেন।

২০০৫ সিরিজ বোমা হামলার পরপরই শুরু হয় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর জেএমবি বিরোধী অভিযান। গ্রেফতার করা হয় জেএমবির শীর্ষ নেতা শায়খ আবদুর রহমান, সিদ্দিকুল ইসলাম (বাংলা ভাই), আতাউর রহমান সানি, খালেদ সাইফুল্লাহসহ সাড়ে চারশ’ জঙ্গিকে। ঝালকাঠিতে বোমা হামলায় দুই বিচারককে হত্যা মামলায় ২০০৭ সালে ফাঁসি কার্যকর করা হয় শীর্ষ এই নেতাদের।

শীর্ষ নেতাদের ফাঁসির পর জেএমবির দায়িত্ব নেন মাওলানা সাঈদুর রহমান। দ্বিতীয় দফা পুনর্গঠিত হতে থাকে জেএমবি। তবে ২০১০ সালের ২৫ মে ঢাকা থেকে তাকেও গ্রেফতার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী।

সাঈদুর রহমান গ্রেফতারের ৪ বছর পর ২০১৪ সালে আবারও জোরালোভাবে নিজেদের শক্তি জানান দেয় জেএমবি। ওই বছরের ফেব্রুয়ারিতে ময়মনসিংহের ত্রিশালে পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে জঙ্গি ছিনতাই করে তারা। এ সময় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি সালাউদ্দিন সালেহীন ওরফে সানি (৩৮) এবং রাকিবুল হাসান ওরফে হাফেজ মাহমুদ (৩৫) এবং যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আসামি জাহিদুল ইসলাম ওরফে বোমারু মিজানকে (৩৫) ছিনিয়ে নেয়া হয়।

২০১৫ সালের শেষের দিকে মতাদর্শগত পার্থক্য ও নেতৃত্ব সংকটের কারণে জেএমবি থেকে একটি বড় অংশ বেড়িয়ে গিয়ে নতুন সংগঠন তৈরি করে। তার নেতৃত্ব নেন ২০১৬ সালে পুলিশের সঙ্গে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহত ও গুলশানের হলি আর্টিজান হামলার মাস্টারমাইন্ড তামিম আহমেদ চৌধুরী।

তামিমের নির্দেশেই গুলশান হামলা, শোলাকিয়ার ঈদ জামায়াতে হামলাচেষ্টাসহ বিদেশি নাগরিকদের হত্যা ও হামলা করা হয়। এসব হামলার দায় আন্তর্জাতিক জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট (আইএস) স্বীকার করলেও একে ‘নব্য জেএমবি’ বা জেএমবির বিদ্রোহীর অংশগ্রহণ বলে বলছেন বাংলাদেশি গোয়েন্দারা।

গোয়েন্দা সূত্রে জানা গেছে, বর্তমানে ভারতে বসে পুরাতন বা মূল ধারার জেএমবির নেতৃত্ব দিচ্ছেন পুলিশের প্রিজন ভ্যান থেকে পালিয়ে যাওয়া জঙ্গি সালাউদ্দিন সালেহীন। তিনিই জেএমবি পুনর্গঠনের কাজ করছেন।

জেএমবির পুনর্গঠনের বিষয়ে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটি) ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম বলেন, জেএমবি দেশব্যাপী বোমা হামলা চালিয়ে তাদের শক্তির জানান দিয়েছিল। পরে অনেকের বিচার হয়েছে। এখনও জেলে রয়েছে শীর্ষ পর্যায়ের অনেক নেতা। তারা সাংগঠনিকভাবে আগের চেয়ে অনেক দুর্বল হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, জেএমবি অর্থ সংগ্রহে ছিনতাই ও ডাকাতি করেছে। বাংলাদেশে বর্তমানে জেএমবি আগের মত সক্রিয় নেই। নব্য জেএমবির অংশটা আন্তর্জাতিক সংগঠনের মতাদর্শে সক্রিয়। বর্তমানে তারা সাংগঠনিকভাবে খণ্ড খণ্ড হয়ে সক্রিয় হওয়ার চেষ্টা করছে। তবে জেএমবির কোনো অংশেরই বাংলাদেশে বড় ধরনের হামলা করার সক্ষমতা নেই।