সুপ্রিম কোর্ট এলাকাতেই ভাস্কর্যটি পুনঃস্থাপন

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণ থেকে সরিয়ে পাশেই অ্যানেক্স ভবনের সামনে পুনঃস্থাপনের কাজ শুরু হলো সেই আলোচিত ভাস্কর্যটি। শনিবার (২৭ মে) রাত ১০টা থেকে রাত পৌনে একটা পর্যন্ত চলে পুনঃস্থাপনের কাজ।

ভাস্কর্যটির নির্মাতা মৃণাল হক গণমাধ্যমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেছেন, ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে ভাস্কর্য পুনঃস্থাপনের কাজ তদারকি করেছেন। যেন কোনো ক্ষয়ক্ষতি না হয় ভাস্কর্যটির।

ঘটনাস্থলে থাকা সাংবাদিকরা জানান, রাত ১০টার দিকে ছোট পিকআপে করে ভাস্কর্যটি অ্যানেক্স ভবনের সামনে আনা হয়। পরে ভার উত্তোলক যন্ত্র দিয়ে পিকআপ থেকে ভাস্কর্যটি নামানো হয়। বেশ কয়েকজন শ্রমিক ভাস্কর্যটি পুনঃস্থাপনে ঝালাইসহ বিভিন্ন প্রয়োজনীয় কাজ করেছে।

গেল ২০১৬ সালের শেষ দিকে ভাস্কর্যটি সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে স্থাপন করা হয়। এর কয়েক মাস পর চলতি বছরের ৬ ফেব্রুয়ারি কওমি মাদরাসা ভিত্তিক সংগঠন হেফাজতে ইসলাম এটি অপসারণে দাবি তোলে। সংগঠনটির আমির আহমদ শফি ভাস্কর্য অপসারণের দাবি জানিয়ে বিবৃতি দেন। ভাস্কর্যকে ‘গ্রিক দেবির মূর্তি’ হিসেবে উল্লেখ করে বিবৃতিতে দাবি করা হয়, এটি স্থাপন করে দেশের শতকরা ৯০ ভাগ মুসলমানের ধর্মীয় বিশ্বাস এবং ঐতিহ্যে আঘাত করা হয়েছে। তবে এমন বক্তব্যকে গুরুত্ব দেয়ার কিছু নেই বলে মন্তব্য করেছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম।

এরপর গেল ১১ এপ্রিল রাতে গণভবনে কওমী মাদরাসার ওলামাদের সঙ্গে বৈঠকে হেফাজতের আমির আহমদ শফির উপস্থিতিতে সুপ্রিম কোর্টের সামনে স্থাপিত ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে অভিমত দেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

যুক্তি উপস্থাপন করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এখানে একটি বিষয় এসেছে আমাদের হাইকোর্টের সামনে গ্রিক থেমেসিসের এক মূর্তি লাগানো হয়েছে। সত্য কথা বলতে কি আমি নিজেও এটা পছন্দ করিনি। কারণ গ্রিক থেমেসিসের মূর্তি আমাদের এখানে কেন আসবে। এটাতো আমাদের দেশে আসার কথা না। আর গ্রিকদের পোশাক ছিল এক রকম, সেখানে মূর্তি বানিয়ে তাকে আবার শাড়িও পরিয়ে দেয়া হয়েছে।

সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গন থেকে ভাস্কর্য সরানোর পক্ষে নান্দনিকতার পাশাপাশি পাশে ঈদগাহের অবস্থানকে যুক্তি দেখিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।

হেফাজতে ইসলামসহ ধর্মভিত্তিক আরো কয়েকটি দলের অব্যাহত দাবির মুখে গেল ২৫ মে দিনগত মধ্যরাতে সুপ্রিম কোর্ট চত্বর থেকে ভাস্কর্য সরানোর কাজ শুরু হয়। রাত চারটার দিকে কাজ শেষ হয়। ভাস্কর্যটির নির্মাতা মৃণাল হক ঘটনাস্থলে উপস্থিত থেকে এটি সরানোর কাজ তত্ত্বাবধান করেছিলেন। সুপ্রিম কোর্টের মূল চত্বর থেকে সরানোর পর ভাস্কর্যটি ত্রিপলে মুড়িয়ে সুপ্রিম কোর্টের বর্ধিত ভবনের পেছন দিকে রাখা হয়েছিল।

পরে অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম গণমাধ্যমকে বলেছিলেন, সুপ্রিম কোর্ট প্রশাসনের নির্দেশে ভাস্কর্যটি সরানো হয়। এটি সুপ্রিম কোর্ট অ্যানেক্স ভবনসংলগ্ন জাদুঘরের সামনে স্থাপন করার ব্যাপারে প্রধান বিচারপতির কাছে মত দিয়েছেন তারা।