সু চির শান্তি আলোচনায় নেই রোহিঙ্গারা

কয়েক দশক ধরে চলে আসা জাতিগত দ্বন্দ্ব নিরসনে মিয়ানমারের কয়েকটি সম্প্রদায়ের শতাধিক প্রতিনিধিকে নিয়ে শান্তি আলোচনা শুরু করেছেন দেশটির নেত্রী নোবেলজয়ী অং সান সু চি। তবে সেই শান্তি আলোচনায় নেই সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়।

গতকাল বুধবার দেশটির রাজধানী নাইপিদোতে পাঁচ দিনব্যাপী এই শান্তি আলোচনা শুরু হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার সেখানে দ্বিতীয় দিনের মতো আলোচনা চলছে।

সরকার, সংসদ, সেনাবাহিনী, রাজনৈতিক দল এবং জাতিগত সশস্ত্র গ্রুপের মধ্যে বিভিন্ন বিষয়ে বিরোধিতা নিয়ে গত সাত দশকের মধ্যে এই প্রথম শান্তি আলোচনা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। তবে এটি শুরু করেছিল সাবেক সামরিক সরকার। সে সময় যাদের এই শান্তি আলোচনায় আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল, নির্বাচিত সরকারও তাদের সঙ্গেই বসছে।

মিয়ানমারে প্রায় ১৩৫টি জাতিগত ক্ষুদ্র সম্প্রদায় রয়েছে, যারা দীর্ঘদিন ধরে দেশটির সরকার ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে নির্যাতনের অভিযোগ করে আসছে। তবে সরকারের পক্ষ থেকে তাদের ‘সশস্ত্র গোষ্ঠী’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

সর্বশেষ গত বছরের অক্টোবরে মিয়ানমারের উত্তর রাখাইন রাজ্যে মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর সেনাবাহিনীর ভয়াবহ নির্যাতন বিশ্বব্যাপী সমালোচিত হয়েছে।

সেনাবাহিনীর সহিংসতার শিকার হয়ে এ পর্যন্ত প্রায় ৭৫ হাজার রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এ নিয়ে সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে সু চিকে।

জাতিসংঘ তাদের প্রতিবেদনে জানিয়েছে, রোহিঙ্গাদের জাতিগতভাবে নির্মূল করতে গত অক্টোবর থেকে রাখাইন রাজ্যে বসবাসরত মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের গ্রামে আগুন দিয়ে বসতবাড়ি পুড়িয়ে দেওয়াসহ গণহত্যা ও গণধর্ষণ চালায় সেনাবাহিনীর সদস্যরা।

তবে সে সময় রোহিঙ্গা নির্যাতনের ঘটনায় নীরব ভূমিকা পালনের অভিযোগ ওঠে মিয়ানমারের নেত্রী অং সান সু চির বিরুদ্ধে।

শান্তি আলোচনার বিষয়ে সরকারি প্রতিনিধিদলের সচিব সাবেক জেনারেল খিন জ ও বলেন, ‘এই আলোচনা মূলত একে অন্যের প্রতি বিশ্বাস নির্মাণের বিষয়ে। এটা নিয়মিত আলোচনার প্রথম ধাপ।’

শান্তি আলোচনায় ইউনাইটেড ওয়া স্টেট আর্মিসহ মিয়ানমারের বৃহৎ সশস্ত্র গ্রুপ কাচিন ইনডিপেনডেনস আর্মি (কেআইএ), মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালাইয়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ), দি আরাকান আর্মি (এএ), দ্য সান স্টেট আর্মি-উত্তর (এসএসএ-এন), ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালাইয়েন্স আর্মি এবং ট্যাঙ্গ ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ) অংশ নেওয়ার কথা। তাদের মধ্যে এএ, টিএনএলএ এবং এমএনডিএএ অংশ নিচ্ছে না।

তবে আলোচনায় সমান গুরুত্ব না পাওয়ার অভিযোগ তুলে দি ইউনাইডেট ন্যাশনালিটিজ ফেডারেল কাউন্সিল (ইউএনএফসি), অন্য সশস্ত্র গ্রুপের জোট শান্তি আলোচনায় অংশ নিচ্ছে না। এ ছাড়া আলোচনায় অংশ নিচ্ছে না রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিরাও।

অনেকে বলছেন, আলোচনায় পর্যাপ্ত সংখ্যক সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের অংশগ্রহণ হয়নি। সু চি গুরুত্বপূর্ণ অংশগ্রহণকারীদের সঙ্গে কোনো ধরনের শলাপরামর্শ ছাড়াই আলোচনার দিন ঠিক করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

অনেকে অভিযোগ করেছেন, সু চি তাঁদের কথা শুনছেন না এবং সেনাবাহিনীর সঙ্গে ঘনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন।

এর আগে ১৯৪৭ সালে সু চির বাবা অং সান জাতিগত সম্প্রদায়ের নেতাদের নিয়ে পাংলং শহরে সম্মেলনের আয়োজন করেছিলেন, যা আধুনিক মিয়ানমার তৈরিতে সহায়তা করেছিল।